আমিরের সরে যাওয়ায় কষ্ট পেয়েছেন পাকিস্তান ক্রিকেটের প্রধান
পাকিস্তান ক্রিকেটে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় সম্ভবত মোহাম্মদ আমিরের হঠাৎ অবসর।
টেস্ট ক্রিকেট থেকে তো আগেই অবসর নিয়েছিলেন, কদিন আগে হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব সংস্করণেই পাকিস্তানের হয়ে আর না খেলার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন আমির। অথচ তাঁর বয়স মাত্র ২৮ বছর!
এত কম বয়সে অবসরের পাশাপাশি চমক জাগিয়েছে বাঁহাতি ফাস্ট বোলারের কথাও। অবসরের কারণ হিসেবে বলেছিলেন, পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) ‘মানসিক অত্যাচার’ সইতে না পেরে অবসর নিয়ে নিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই এরপর থেকে পাকিস্তানের সাবেকরাও এর পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলছেন। কেউ আমিরের সিদ্ধান্তকে ভুল বলছেন, তো কেউ মুণ্ডুপাত করছেন পিসিবির।
যাদের নিয়ে এত আলোচনা, সেই পিসিবি এত দিন কিছু বলেনি। এবার সংস্থাটির চেয়ারম্যান এহসান মানি কথা বলেছেন আমিরের অবসর নিয়ে। এভাবে আমিরের অবসরে ‘দুঃখ পেয়েছেন’ জানিয়ে মানি বললেন, ঘোষণার আগে আমির একবার অন্তত পিসিবির সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারতেন!
পাকিস্তান ক্রিকেটে আমির বরাবরই আলোচিত চরিত্র। প্রতিভার দারুণ ঝলক দেখিয়ে ২০০৯ সালে তাঁর আগমন। গতি, দুই দিকে সুইং, ইয়র্কার, বাউন্সার, স্লোয়ার...বলতে গেলে সবই ছিল আমিরের ঝোলায়। পাকিস্তানের কিংবদন্তি বাঁহাতি ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরামের দ্বিতীয় সংস্করণ বলা হচ্ছিল তাঁকে।
কিন্তু ক্যারিয়ারে ঝলক দেখাতে না দেখাতেই অন্ধকারে পা পড়ে আমিরের। ২০১০ সালে লর্ডস টেস্টে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরেছেন বটে, তবে আগের ঝলক দেখা গেছে কদাচিৎ। কিন্তু অতটুকু ঝলক দেখিয়েই ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল আর ২০১৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বোলিংয়ের উজ্জ্বলতম অধ্যায় হয়ে গেলেন তিনি!
সেই আমিরের অবসর আলোচনার খোরাক তো জোগাবেই! আমিরের পাশাপাশি এহসান মানি অবশ্য কথা বলেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট থেকে সরে যাওয়া আরেকজনকে নিয়েও। তিনি অবশ্য অনেকটা বিস্মৃত এক নাম—সামি আসলাম।
পাকিস্তানের জাতীয় দলে সুযোগ না পেয়ে হতাশ আসলাম পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। দুজনের পাকিস্তান ক্রিকেট থেকে সরে যাওয়া নিয়ে মানির আক্ষেপ, ‘মোহাম্মদ আমির ও সামি আসলামের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে যাওয়ার খবর শুনে বেশ কষ্ট পেয়েছি। ওরা দুজন সিদ্ধান্ত জানানোর আগে পিসিবির সঙ্গে যদি একবার কথা বলত!’
পিসিবির দেওয়া বিবৃতিতে মানির বক্তব্য দেখে অবশ্য মনে হয়, দুজনের সিদ্ধান্তকেই ভুল মনে হচ্ছে তাঁর চোখে, ‘অন্য অনেক সেরা ফাস্ট বোলারই ফিটনেসের চূড়ায় থাকার জন্য সব সংস্করণেই খেলেন। কিন্তু আমির অবসরের আগে প্রথমে শুধু সাদা বলের ক্রিকেট খেলবে বলে ঠিক করল। আর সামির উচিত ছিল ফাওয়াদ আলমকে অনুসরণ করা, ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ কিছু করে জাতীয় দলে ফিরে আসার চেষ্টা করা।’
বিবৃতিতে এ দুজনের অবসর ছাপিয়ে আরও অনেক বিষয় নিয়েই কথা বলেছেন পিসিবি চেয়ারম্যান।
পাকিস্তানের ক্রিকেট দলের কোচিংয়ে এখন সাবেক অনেক তারকার সমাগম। এ নিয়ে মানির উচ্ছ্বাস, ‘জাতীয় দলের কোচিং প্যানেলটা খুব শক্তিশালী। মিসবাহ-উল-হক, ওয়াকার ইউনিস ও ইউনিস খান—সবাই খেলোয়াড়ি জীবনে নিজেদের জাত চিনিয়েছেন। এই তরুণ ক্রিকেটাররা নিশ্চিতভাবেই তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারবে, নিজেদের ক্রিকেট জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে পারবে। এই তিন সাবেক তারকার পাশাপাশি আমরা (ন্যাশনাল হাই পারফরম্যান্স সেন্টারে) সাকলায়েন মুশতাক ও মোহাম্মদ ইউসুফকেও নিয়োগ দিয়েছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যে মানের কোচ আমরা কাজে লাগাতে পেরেছি, তাতে সঠিক দিকেই যাচ্ছি আমরা।’
গতকাল মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে দারুণ লড়াই করেও হেরে গেছে পাকিস্তান। টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারের পর প্রথম টেস্টেও হার—সফরে পাকিস্তানের দলের খেলোয়াড়দের আসলে নিউজিল্যান্ডের মতো কন্ডিশনে খেলার দক্ষতা কতটুকু আছে, তা নিয়ে ঠারেঠুরে প্রশ্ন উঠছে। মিসবাহ-উল-হকের কোচিংও প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু মানি বলছেন, ‘আর দশজন কোচের মতো মিসবাহও তো শুধু তাঁর হাতে যে রকম মানের ক্রিকেটার আছে, তা নিয়েই কাজ করতে পারবে। আমার হিসাবে নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য দল নির্বাচনের শেষ তারিখ ১২ অক্টোবরে যে ক্রিকেটাররা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে সেরা ক্রিকেটাররাই সফরে তাঁর (মিসবাহ) হাতে আছে।’