আফ্রিদিকে দেখে গর্বের সঙ্গে অস্বস্তিও কি হয় বড় ভাইয়ের
‘ক্রিকেটের সঙ্গে যখন মাত্র পরিচয় হয়েছিল, ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি আমি। অনেক শিখিয়েছেন তিনি আমাকে। এখনো তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাই।’
খুব বেশি আগের কথা নয়, গত ডিসেম্বরে কথাগুলো বলেছিলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তখন টেস্ট সিরিজ খেলতে নেমেছে পাকিস্তান। বিশেষ সিরিজই ছিল বটে পাকিস্তানের জন্য। দশ বছর আগে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের বাসে সন্ত্রাসী হামলার কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বলতে গেলে বন্ধই হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানের মাটিতে, সেই শ্রীলঙ্কাই তখন আবার গিয়েছিল পাকিস্তানের মাটিতে।
কিন্তু শাহীন শাহ আফ্রিদির পরিবারের জন্য হয়তো সিরিজটার বিশেষত্ব আরেকটু বেশি ছিল, সেটি শাহীনের বড় ভাই রিয়াজ আফ্রিদির কারণে। রিয়াজের ক্যারিয়ারে আক্ষেপের গল্পও জড়িয়ে সে অধ্যায়ে।
সময়ের ক্রিকেটে শাহীন শাহ আফ্রিদি মোটামুটি বড় তারকাই। মাত্র ২০ বছর বয়সেই সময়ের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার হয়ে গেছেন পাকিস্তানি তরুণ। পাকিস্তানের জার্সি গায়ে উঠেছে দুই বছরের একটু বেশি হলো, এর মধ্যেই টেস্ট-ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ৪৫টি ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে শাহীনের, করোনার কারণে ক্রিকেট অনেক দিন ঘরবন্দী না থাকলে ‘ফিফটি’ ছাড়িয়ে যেত নিশ্চিত। আন্তর্জাতিক উইকেটসংখ্যাতেও হয়তো শাহীনের সেঞ্চুরি হয়ে যেত—মাত্র ৪৫ ম্যাচেই যে ৯৩ উইকেট।
দারুণ সব ইয়র্কার আর বাউন্সার তাঁর প্রধান অস্ত্র। শেষ দিকে স্লোয়ারও করতে পারেন। সব মিলিয়ে দারুণ ‘প্যাকেজ’ শাহীন। টি-টোয়েন্টিতে তাঁর চেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট পাওয়ার কীর্তি আছে শুধু শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি লাসিথ মালিঙ্গার। অথচ মালিঙ্গার ক্যারিয়ার বলতে গেলে শেষ, শাহীনের শুরুই হলো মাত্র! ভাবা যায়!
তা শাহীনকে নিয়ে এত মাতামাতি দেখে কি গর্বের পাশাপাশি কখনো কখনো একটু খারাপও লাগে তাঁর বড় ভাই রিয়াজ আফ্রিদির? শাহীনের ক্যারিয়ার যেখানে নিয়মিত নতুন নতুন ধাপ পেরোচ্ছে, পাকিস্তানের জার্সিতে রিয়াজের ক্যারিয়ারটা শুরু হতে না হতেই শেষ! যে শুরু ও শেষে জড়িয়ে শ্রীলঙ্কা।
শাহীন বিশ্বমঞ্চে প্রথম নাম ছড়িয়েছিলেন ২০১৮ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দিয়ে। সে টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হয়েছিল পাকিস্তান, শাহীন ১৪.৫৮ গড়ে নিয়েছিলেন ১২ উইকেট। কিন্তু যে গল্পটা মানুষের অজানা, সেটি হলো, ১৪ বছর আগে এ রকমই এক অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নাম ছড়িয়েছিলেন শাহীনের বড় ভাই রিয়াজ।
বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সেই টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন রিয়াজ, পাকিস্তান সেবারই প্রথম জিতেছিল অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ! ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ক্রিজে দারুণ দাপটে দাঁড়িয়ে যাওয়া অধিনায়ক দীনেশ রামদিনের উইকেটও নিয়েছিলেন রিয়াজ।
এমন পারফরম্যান্সের পুরস্কার শিগগিরই পেয়েছিলেন রিয়াজ। ১৯ বছর বয়সেই করাচিতে তারকাখচিত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। একেবারে খারাপ হয়নি অভিষেক। পাকিস্তান ৬ উইকেটে জিতেছিল ম্যাচটা। তাতে দ্বিতীয় ইনিংসে ১২ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে কোনো উইকেট না পেলেও প্রথম ইনিংসে ১৯ ওভারে ৪২ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছিলেন রিয়াজ। তা-ও কোন দুই উইকেট? কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে!
এরপর কী হলো? রিয়াজ আফ্রিদির আর কখনো পাকিস্তানের জার্সিতে খেলা হয়নি। না টেস্ট, না ওয়ানডে, না টি-টোয়েন্টি! পাকিস্তানের হয়ে ওই ম্যাচের পর ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবেই ভালো খেলেছেন, শুধু এক মৌসুমেই তাঁর বোলিং গড় ২৭-এর ওপরে উঠেছিল। কিন্তু কখনো জাতীয় দলে ডাক মেলেনি।
অন্য কিছু ব্যাপারও অবশ্য ছিল। চোট তাঁর ক্যারিয়ারের অনেকটা খেয়ে ফেলেছে! বোলিং অ্যাকশন নিয়েও প্রশ্ন ছিল। ২০১৫ সালে ৩০ বছর বয়সে সর্বশেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচটি খেলেন রিয়াজ। নামের পাশে ছিল ২৪.৬০ গড়ে ৩২৮টি ফার্স্ট ক্লাস উইকেট।