আইসিসির নিয়মের বদলে দুইয়ে নেমে গেল ভারত
করোনাভাইরাস আরেক দিক দিয়েও ভারতের ক্ষতি করে গেল!
একে তো একের পর এক সিরিজ বাতিল হয়েছে করোনার কারণে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বোর্ড বলে পরিচিত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) অনেক ক্ষতি গুনেছে সে কারণে। এবার করোনা আরেকটি ক্ষতির মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেছে ভারতকে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট নির্ধারণের পদ্ধতিতে বদল এনেছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি, তাতে কপাল পুড়েছে ভারতের।
এত দিন ৩৬০ পয়েন্ট নিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ছিল ভারত। কিন্তু এবার আইসিসি নিয়ম বদলে প্রাপ্ত পয়েন্টের অঙ্কের বদলে সম্ভাব্য পয়েন্টের মধ্যে কত শতাংশ পয়েন্ট পেয়েছে, সেটির ভিত্তিতে তালিকা নির্ধারণের নিয়ম করেছে। তাতে দুইয়ে নেমে গেছে ভারত। তাদের টপকে শীর্ষে উঠে গেছে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের অবস্থানের অবশ্য কোনো অদলবদল হয়নি। এখন পর্যন্ত যে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে কোনো জয় নেই বাংলাদেশের! এত দিন ০ পয়েন্ট নিয়ে নয় দলের পয়েন্ট তালিকার তলানিতে ছিল বাংলাদেশ, এখনো তা-ই আছে।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এত দিনে যতগুলো ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল, করোনার কারণে হতে পেরেছে মাত্র তার অর্ধেক। গত মার্চ থেকে পুরো বিশ্বই লকডাউনে যাওয়ার পর জুলাই পর্যন্ত করোনার কারণে একের পর এক সিরিজ বাতিল হয়েছে। জুলাইয়ের পর ক্রিকেট ফিরেছে বটে, তবে অনেকগুলো সিরিজ হতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২১ সালের জুলাইয়ে প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তত দিনে প্রস্তাবিত ম্যাচের ৮৫ শতাংশই মাত্র শেষ করা যাবে।
সে ক্ষেত্রে দুটি পথ ছিল আইসিসির সামনে। যে ম্যাচগুলো হতে পারেনি, সেগুলোকে ড্র ধরে নিয়ে পয়েন্ট তালিকা সমন্বয় করে নেওয়া। তা না হলে পয়েন্ট প্রাপ্তির হারের ভিত্তিতে পয়েন্ট তালিকা বদলে নেওয়া। ভারতীয় কিংবদন্তি লেগ স্পিনার অনিল কুম্বলের অধীন আইসিসির কমিটি দ্বিতীয় পথেই হেঁটেছে। যে ম্যাচগুলো খেলা হয়েছে বা হবে, সেগুলোতে জয়ের হারের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে পয়েন্ট তালিকা। গত সোমবার শুরু হওয়া আইসিসির ত্রৈমাসিক সভায় নেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্তগুলো।
কুম্বলের অধীন এই কমিটির প্রস্তাবিত পদ্ধতি পাস হওয়ার আগে ভারত ৩৬০ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে ছিল, অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট ছিল ২৯৬। কিন্তু ভারত ৩৬০ পয়েন্ট পেয়েছে চারটি সিরিজে সম্ভাব্য ৪৮০ পয়েন্টের মধ্যে, অর্থাৎ তাদের পয়েন্ট প্রাপ্তির হার ৭৫ শতাংশ। আর অস্ট্রেলিয়ার ২৯৬ পয়েন্ট এসেছে তিন সিরিজে, সম্ভাব্য ৩৬০ পয়েন্টের মধ্যে। অর্থাৎ তাদের পয়েন্ট প্রাপ্তির হার ৮২.২ শতাংশ। সে কারণে শীর্ষে উঠে গেছে অস্ট্রেলিয়া। কোহলিদের কপাল পুড়েছে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে গত বছর দুই টেস্টের সিরিজে ভরাডুবি হওয়াতেই!
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত দেড়টি সিরিজ খেলেছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে। ভারতের মাটিতে দুই টেস্টের সিরিজে হেরেছে ২-০ ব্যবধানে। পাকিস্তানের মাটিতে দুই টেস্টের সিরিজের একটি হতে পেরেছে করোনা হানা দেওয়ার আগে, আরেকটি এখনো হতে পারেনি। যে টেস্টটি খেলেছে বাংলাদেশ, সেটিতে হেরেছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৮০ পয়েন্টের জন্য লড়েছে বাংলাদেশ, তাতে একটি পয়েন্টও এখনো পাওয়া হয়নি। পয়েন্ট প্রাপ্তির হারও তাই শূন্য।
প্রাথমিক সূচি অনুযায়ী নয় দলের এই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিটি দলের বাকি আট দলের মধ্যে ছয়টির সঙ্গে টেস্ট সিরিজ খেলার কথা ছিল। তিনটি নিজেদের মাটিতে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। সিরিজে কতটি ম্যাচ থাকবে, সেটি অবশ্য একেক দলের ক্ষেত্রে একেক রকম। যে কারণে বাংলাদেশের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল ১৪টি টেস্টে। অস্ট্রেলিয়ার খেলার কথা ছিল ১৯টি টেস্ট, ভারতের ১৮টি, আবার ইংল্যান্ডের ২২টি টেস্ট খেলার কথা ছিল!
লিগ পর্ব শেষে শীর্ষে থাকা দুই দল লর্ডসে ফাইনাল খেলবে।