আইপিএলে জুয়ায় হেরে ডাব বিক্রেতার আত্মহত্যা
গুঞ্জন ছাপিয়ে এখন ব্যাপারটা সত্যিই হয়ে দাঁড়িয়েছে। টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর সবচেয়ে বড় সমালোচনাগুলোর একটিও এটি। ব্যাপারটি এই, টি-টোয়েন্টি লিগগুলো খেলার পাশাপাশি জুয়ারও আস্তানা। জুয়াড়িদের আনাগোনারও একটা বড় জায়গা এই লিগগুলো।
ভারতের আইপিএল বলুন, বাংলাদেশের বিপিএল, পাকিস্তানের পিএসএল কিংবা অন্য যেকোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ—জুয়া আর জুয়াড়িদের সংশ্লিষ্টতা ঘিরে এসব অভিযোগ হয়তো এখন আর কারও অজানা নয়। অভিযোগগুলো এখন আর অভিযোগের সীমানাতেও বদ্ধ নয়। তবে এসব আলোচনা তো কোটি কোটি টাকার জুয়া নিয়ে, আইপিএলের মতো টুর্নামেন্ট ঘিরে ছোট পরিসরে কত জুয়াও তো হয়! তেমনই জুয়ার কারণে এবার প্রাণ গেল এক ভারতীয়র। জুয়ায় হেরে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।
তাঁর নাম সনু কুমার যাদব। বয়স মাত্র ১৯! পেশায় ডাব বিক্রেতা। মাত্র তিন মাস আগে ভাগ্যের সন্ধানে ভাইয়ের সঙ্গে নিজের এলাকা ঝাড়খন্ড থেকে হায়দরাবাদ শহরে এসেছিলেন। ভাগ্যের খোঁজে একটু হয়তো বেশি তাড়াহুড়া ছিল সনুর, এসেই আইপিএলে জুয়ার আসরে জড়িয়ে গেলেন। অতি লোভের ফলটাই পেলেন! ভারতের সংবাদ সংস্থা এএনআইকে হায়দরাবাদের পাঞ্জাগুট্টা থানার পুলিশ পরিদর্শক বলেছেন, ‘অর্জুন কুমার যাদব নামের একজনের কাছ থেকে ৩ নভেম্বর একটা অভিযোগ পেয়েছি আমরা।’ তিনি জানিয়েছেন, সেদিন সকাল সাড়ে আটটায় তাঁর ছোট ভাই, পেশায় ডাব বিক্রেতা সনু কুমার যাদব, স্নানঘরের গ্রিলের সঙ্গে কাপড়ে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন।
আত্মহত্যার পেছনে কারণ যে আইপিএলে জুয়ায় সব খোয়ানো, তা-ও নিশ্চিত করেছেন পুলিশ পরিদর্শক, ‘তিনি (সনু) সঞ্জয় যাদব ও মনোজ নামে তাঁর দুই বন্ধুর সঙ্গে এক কক্ষে ভাগাভাগি করে থাকতেন। আইপিএলের জুয়ায় তিনি জড়িয়ে গিয়েছিলেন, যেটির কারণে অনেক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। সেই ক্ষতির চাপ সইতে না পেরে এই চরমতম পথটি বেছে নিয়েছেন তিনি।’ আত্মহত্যার সময় তাঁর কক্ষের সঙ্গীরা কেউ ছিলেন না বলেও জানাচ্ছে পুলিশ, সকালবেলা তাঁর কক্ষের সঙ্গীরা কাজে যাওয়ার পর সনু আত্মহত্যা করেন। ঘটনাটির আরও তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সনু বন্ধুদের কাছ থেকে ধার নিয়েও জুয়ায় লাগান। কিন্তু খুব বেশি টাকা আয় করতে পারেননি, ম্যাচের ফলগুলো তাঁর অনুমানের সঙ্গে মেলেনি। টাকা হারানোর শোক আর টাকা ফেরত দেওয়ার চাপের মুখে জীবনই অসহনীয় হয়ে পড়ে একসময় ১৯ বছর বয়সী তরুণের কাছে।
ভারতীয় দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, করোনার কারণে চারদিকে লকডাউনের সময় সনুর বড় ভাই অর্জুন বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর তিন মাস আগে আবার যখন হায়দরাবাদ ফেরেন অর্জুন, ছোট ভাইকেও নিয়ে আসেন। প্রথম দুই মাস ঠিকঠাকই চলেছে। মাসখানেক আগে আইপিএল শুরু হতেই যত ঝামেলা। জুয়ার ফাঁদে পড়ে যান সনু। বন্ধুদের কাছ থেকে ধার নিয়েও জুয়ায় লাগান। কিন্তু জুয়ার বিপরীতে খুব বেশি টাকা আয় করতে পারেননি, ম্যাচের ফলগুলো তাঁর অনুমানের সঙ্গে মেলেনি। টাকা হারানোর শোক আর টাকা ফেরত দেওয়ার চাপের মুখে জীবনই অসহনীয় হয়ে পড়ে একসময় ১৯ বছর বয়সী তরুণের কাছে।
অবশ্য ভারতেই যে শুধু এমন জুয়ার আসর বসছে, তা নয়। বাংলাদেশেও আইপিএলকে ঘিরে অঞ্চলভিত্তিতে এমন অনেক জুয়ার আসর বসে। ম্যাচের ফল তো বটেই, ওভারে কয়টি চার-ছক্কা কিংবা রান হবে বা উইকেট পড়বে—সেসব নিয়েও জুয়া হয় বলে গুঞ্জন আছে। এই তো, দিন চারেক আগে কিশোরগঞ্জে আইপিএলকে ঘিরে এক জুয়ার আড্ডায় অভিযান চালিয়ে ১৩ জনকে জেল-জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। শুক্রবার রাতে কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া চৌরাস্তা মোড় এলাকায় এই অভিযান চালানো হয়।
এসব হচ্ছে ছোট পরিসরে জুয়ার হিসাব। কোটি কোটি টাকার অঙ্কের জুয়ার হিসাব তো আলাদা। সেটি প্রতিরোধে অনেক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। এমনকি জুয়ার সঙ্গে পরোক্ষভাবেও জড়িয়ে থাকতে পারে, এমন কিছুও বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গতকালই খবর এসেছে, জুয়ায় ‘উৎসাহ’ দেওয়ায় ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি আর ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ও কিংবদন্তি অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীকে উকিল নোটিশ দিয়েছেন এক আইনজীবী। যদিও সরাসরি জুয়ায় জড়াননি তাঁরা। কোহলি ও গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টকে ভিত্তি করে তৈরি করা অনলাইন ফ্যান্টাসি গেমিং অ্যাপের বিজ্ঞাপনে মডেল হয়ে ‘জুয়া’য় উৎসাহ দিচ্ছেন!