হিসাবের গরমিল: ২০০৩ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০২৩ এশিয়া কাপে আফগানিস্তান

আফগানিস্তানের হিসাবের এই গরমিল ফিরিয়ে এনেছে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার স্মৃতিছবি: এএফপি ও রয়টার্স

ফজলহক ফারুকি দুটি বল ডট দিলেন। শট খেলার চেষ্টাই করলেন না সে অর্থে। নন-স্ট্রাইক প্রান্তে রশিদ খানের চোখেমুখে তার আগে থেকেই ফুটে উঠেছে হতাশা। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার করা ৩৮তম ওভারের প্রথম বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন মুজিব উর রেহমান, রশিদ বেরোতে পারছিলেন না সে হতাশা থেকেই।

অথচ রশিদ যদি জানতেন, সুপার ফোরে যাওয়ার সুযোগটা মুজিব আউট হয়ে যাওয়ার পরও আছে আফগানিস্তানের!

সুপার ফোরে বাংলাদেশের সঙ্গী হতে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৯২ রানের লক্ষ্য আফগানিস্তানকে ছুঁতে হতো ৩৭.১ ওভারের মধ্যে। কিন্তু ৩৭.১ ওভারের মধ্যে জিততে না পারলেও সুযোগ ছিল তাদের। সেক্ষেত্রে ৩৭.৪ ওভারের মধ্যে করতে হতো ২৯৫ রান। এমনকি স্কোর টাই করার পর, মানে ২৯১ রান করার পরও ছক্কা মেরে জিতলে আফগানিস্তানের সুযোগ ছিল ৩৮.১ ওভার পর্যন্ত।

আরও পড়ুন

৩৭তম ওভারের শেষ বলে রশিদ চার মারার পর আফগানিস্তানের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩ রান। মুজিব আউট হয়ে যাওয়াতেই আশা শেষ, আফগানিস্তানকে দেখে মনে হয়েছে এমন। ফারুকির ব্যাটিংয়ের ধরনেও ফুটে উঠেছে সেটি।

বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পর ড্রেসিংরুমে হতাশ পোলকরা
ছবি: রয়টার্স

আফগানিস্তানের হিসাবের এই গরমিল ফিরিয়ে এনেছে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার স্মৃতি। সেবারও তাদের প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কাই। ২৬৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করছিল স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। সুপার সিক্সে যেতে ম্যাচটি জিততেই হতো তাদের।

হার্শেল গিবস ও গ্রায়েম স্মিথ দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের পর বোয়েটা ডিপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। অবশ্য শন পোলক ও মার্ক বাউচারের জুটি আবার ম্যাচে ফেরায় তাদের।

আরও পড়ুন

৪৪ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ছিল ৬ উইকেটে ২১৬ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার রান তাড়ায় ৪৫তম ওভারটি করতে আসেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। আর কোনো উইকেট না হারালে ডিএল পদ্ধতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার ৪৫তম ওভার শেষে জয়ের জন্য প্রয়োজন ২২৯ রান, দক্ষিণ আফ্রিকা জানত এমন।

প্রথম চার বলে ওয়াইডে চারসহ দক্ষিণ আফ্রিকা তোলে ৭ রান। পঞ্চম বলে ছক্কা মারেন বাউচার। এরপর উল্লাসও করেন, কারণ ‘প্রয়োজনীয়’ ১৩ রান যে উঠে গেছে! শেষ বলটি ব্লক করেন, সিঙ্গেল নেওয়ার কোনো চেষ্টাই করেননি। এরপরই বৃষ্টির কারণে বন্ধ হয়ে যায় খেলা, আর শুরুই হতে পারেনি সেটি।

ক্লুজনার যদি জানতেন!
ছবি: এএফপি

ভুলটা কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। আদতে জয়ের জন্য ৪৫তম ওভার শেষে তাদের প্রয়োজন ছিল ২৩০ রান, ২২৯ রান করলে ম্যাচ হতো টাই। শেষ পর্যন্ত হয়েছে সেটিই। ওই ম্যাচ টাই হওয়াতে সুপার সিক্সের দৌড় থেকে ছিটকে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা, ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে তারা হয়ে পড়ে দর্শক।

১৯৯২ সালে অদ্ভুত বৃষ্টি আইনের কবলে পড়ে বিদায় নেওয়ার পর আবারও অদ্ভুতভাবে বিদায় নিতে হয় তাদের।

২০ বছর পর সেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গেই হিসাবের গরমিলে এশিয়া কাপের পরের রাউন্ডে যেতে ব্যর্থ আফগানিস্তান। বাউচার-পোলক দেখে থাকলে নিশ্চয়ই রশিদ-ফারুকিদের জন্য সমবেদনা জেগেছে তাঁদের মনে!

আরও পড়ুন