কার ছক্কা কত বড়, প্রতিযোগিতায় তামিম-পারভেজ
দুজনই বাঁহাতি। দুজনই খেলেন ওপেনার হিসেবে। দুজনই চট্টগ্রামের। তামিম ইকবালের সঙ্গে পারভেজ হোসেনের এ ছাড়াও অনেক মিল আছে। দুজনই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে ক্যারিয়ারের শুরুতে পরিচিতি পেয়েছেন। তামিম ঘরোয়া ক্রিকেটে পা দেওয়ার পর থেকেই মেরে খেলার জন্য পরিচিতি পেয়ে যান। পারভেজ তো এর মধ্যেই বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে দ্রুততম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন।
আজ হারারে স্পোর্টস ক্লাবের মাঝমাঠে এই দুজন মিলে ছক্কা মারার অনুশীলন করছিলেন। জেমি সিডন্সের থ্রো ডাউনে প্রথমে পারভেজ, এরপর তামিম চেষ্টা করছিলেন বল সীমানার ওপারে পাঠানোর। হারারে স্পোর্টস ক্লাবের বড় বাউন্ডারি খুব সহজেই পার করছিলেন পারভেজ। কিছু কিছু বল তো গ্রাস ব্যাংকও ছাড়িয়ে যাচ্ছিল।
পারভেজের ছক্কা মারা দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন তামিম। পাশেই ছিলেন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। টি-টোয়েন্টি দলে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা এই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে দুজন কী যেন বলছিলেন। কিছুক্ষণ পর তামিম এগিয়ে গিয়ে পারভেজের ব্যাট-গ্লাভস নিয়ে হাতে নেন। এরপর সিডন্সের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বল ছুড়তে বলেন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দেখে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের সঙ্গে তামিমদের পার্থক্য বোধ হয় এখানেই। চার-ছক্কা মারায় সে জন্যই যেন তাঁদের ব্যাটিংয়ে নামা। এটাই যেন সহজাত দক্ষতা।
তরুণ বাঁহাতির পর ছক্কা মারার প্রতিযোগিতায় তামিম কেমন করেন, সেদিকে ছিল সবার আগ্রহ। কিন্তু পারভেজের সঙ্গে বল দূরে পাঠানোর প্রতিযোগিতায় পারলেন না তামিম। বাউন্ডারির সীমানা ছাড়াতে ব্যর্থ তামিমকে দেখে বাংলাদেশের দুই প্রজন্মের ক্রিকেটের ছবিটা ভেসে উঠল।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেই জহির খানকে খ্যাপাটে ছক্কা মারা সেই তামিমের সঙ্গে এখনকার তামিমের অনেক পরিবর্তন। তাড়াহুড়ো করে ব্যাটিংটা এখন আর তিনি করেন না। সময় নিয়ে লম্বা সময় ক্রিজে পড়ে থাকার চেষ্টা দেখা যায় অভিজ্ঞ তামিমে। ব্যাটিংয়ে পেশির জোর দেখানোর সময় যেন পেছনে ফেলে এসেছেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে বিদায়ও হয়তো এই ধরনের কারণেই নিয়েছেন।
অন্যদিকে পারভেজ? টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দেখে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের সঙ্গে তামিমদের পার্থক্য বোধ হয় এখানেই। চার-ছক্কা মারায় সে জন্যই যেন তাঁদের ব্যাটিংয়ে নামা। এটাই যেন সহজাত দক্ষতা।
১০ বছর আগেও ব্যাটসম্যানরা বল দূরে পাঠানোয় এতটা দক্ষ ছিলেন না। গত বছর স্কাই স্পোর্টস ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার কেভিন পিটারসনের সঙ্গে লিয়াম লিভিংস্টোনকে ছক্কা প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দেয়। প্রতিযোগিতার শুরুতেই পিটারসনের আত্মসমর্পণ, ‘আমি কি প্রতিযোগিতা করব তাঁর সঙ্গে? আমি যদি ৬ মেরে থাকি, তাহলে সে মারে ১২। আধুনিক ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে আমাদের প্রজন্মের কোনো প্রতিযোগিতাই হয় না।’
থ্রো-ডাউনে দুজনের প্রতিযোগিতায় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের তারকা লিভিংস্টোনই জিতেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। তামিমও হয়তো স্বাচ্ছন্দ্যে আজ মেনে নিয়েছেন সে বাস্তবতা। কুড়ি ওভারের দ্রুতগামিতা অতীতে ফেলে এসে সুযোগ করে দিচ্ছেন পারভেজদের প্রজন্মকে। আজ হারারে স্পোর্টস ক্লাবে বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অনুশীলনটা হয়েছে একসঙ্গে। টি-টোয়েন্টির অনুশীলন ঐচ্ছিক হওয়ায় দলের সবাই মাঠে আসেননি। যাঁরা এসেছেন, তাতেই যুগের পার্থক্যটা পরিষ্কার ধরা দিচ্ছিল।