‘সিংহহৃদয়’ রিজওয়ানে গর্বিত ওয়াসিম আকরাম
ম্যাচে ৩৬ ওভারের খেলা চলছিল তখন। মাতিশা পাথিরানার অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল খেলতে যান মোহাম্মদ রিজওয়ান। বলের নাগাল পাননি। আম্পায়ার ওয়াইডের সংকেত দেন। কিন্তু বলটি খেলতে গিয়ে ক্র্যাম্পের শিকার হন রিজওয়ান। দ্রুত মাঠে ঢোকেন ফিজিও। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আবার শুরু করেন ব্যাটিং। তখন তাঁর রান ৮২।
পরের ওভারে ছক্কা মারার পর আবার ক্র্যাম্পের কারণে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন রিজওয়ান। আবারও শরণাপন্ন হতে হন ফিজিওর। এত কিছুর পরও অবশ্য হাল ছাড়েননি রিজওয়ান। ব্যথা সহ্য করে শেষ পর্যন্ত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ১২১ বলে অপরাজিত ১৩১ রানের অসাধারণ এই ইনিংসের পর তাঁকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটাররা। কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরাম তো তাঁকে ‘সিংহহৃদয়’ তকমাও দিয়েছেন।
গতকাল ম্যাচ শেষে এক টেলিভিশন টক শোতে রিজওয়ানকে নিয়ে আকরাম বলেছেন, ‘রিজওয়ান সিংহহৃদয়ের খেলোয়াড়। ক্র্যাম্প হচ্ছিল তার। নিজেকে নিজেই ঘুষি মারছিল। এটাতেই বোঝা যায় যে সে দেশের জন্য জিততে কতটা মরিয়া ছিল। পাকিস্তানের পুরো দলকে শুভেচ্ছা। তারা আমাদের গর্বিত করেছে।’
রিজওয়ানের ইনিংসটি নিয়ে পাকিস্তানের সাবেক উইকেটরক্ষক–ব্যাটসম্যান মঈন খান বলেছেন, ‘রিজওয়ান অসাধারণ ইনিংস খেলেছে। খুবই বুদ্ধিমান ক্রিকেটার। সত্যিকার অর্থে লড়াকু বলতে যা বোঝায়, সে হচ্ছে তেমন ক্রিকেটার। ক্র্যাম্প হওয়ার পরও জেতার যে স্পিরিট তার মধ্যে ছিল, সেটা দারুণ ব্যাপার।’
ক্র্যাম্পের সময় কেমন ব্যথা হয়, সেটা মনে করিয়ে দিয়ে ওয়াসিম বলেছেন, ‘ক্র্যাম্পে (শিরায় টান) বেশ ভালোই ব্যথা হয়। আপনার না হলে বুঝবেন না। ক্র্যাম্প নিয়ে খেলাটা খুবই কঠিন। যদি আপনার পায়ে ক্র্যাম্প হয়, তবে শট মারার সময় মনোযোগ ৭০ শতাংশ পায়ের ওপরে থাকে।’
এ সময় শোয়েব মালিক যোগ করেন, ‘ক্র্যাম্প হলে আপনি বাকি সব ভুলে যাবেন। সে যদিও ৮০ রানের বেশিতে ব্যাট করছিল। সেই রানও তখন আপনি ভুলে যাবেন।’ ওয়াসিম তখন বলেন, ‘অনেক সময় ক্র্যাম্প হলে ব্যাটসম্যানরা মাঠ ছেড়ে চলে যায়। এটাই সহজ সমাধান। কিন্তু সে তা করেনি, দাঁড়িয়ে ছিল। তার এই মনোভাবই বুঝিয়ে দেয়, ম্যাচটা জেতার জন্য সে কতটা মরিয়া ছিল।’
রিজওয়ান এ বছর ১৮ ম্যাচে ৭৫.১৮ গড়ে ৮২৭ রান করেছেন। এ বছর সবচেয়ে বেশি রান করা উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানও তিনি। রিজওয়ান কেন অনন্য, তা ব্যাখ্যা করেছেন সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ–উল–হকও। তিনি বলেছেন, ‘যদি ভেতরে ফাইটিং স্পিরিট থাকে, তবে কঠিন পরিস্থিতিতে আপনি অনেক সতর্ক হয়ে যান। রিজওয়ানের মধ্যে এ বিষয়টা লক্ষ্য করা যায়। যদি কোনো চ্যালেঞ্জ আসে, তবে তার পারফরম্যান্স আপনা–আপনি আরও ভালো হয়ে যায়। এটা পাকিস্তানের জন্য খুব ভালো। আমাদের এমন ম্যাচ উইনার প্রয়োজন, যে কিনা কঠিন পরিস্থিতিতে এসে ম্যাচকে সামলাবে। আর দ্রুত দুজন আউট হওয়ার পর এসে ম্যাচকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাবে।’