একে তো রাজনৈতিকভাবে চির বৈরী। সীমান্তে প্রায়ই সংঘাত হয়। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধেও জড়িয়েছে দুই প্রতিবেশী। রণক্ষেত্র থেকে খেলার ময়দান—যেখানেই মুখোমুখি হোক ‘যুদ্ধ’ শব্দটা তাই আপনিই চলে আসে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে। নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আজ দুই প্রতিবেশীর তেমনই এক ‘যুদ্ধ’। আর সেই যুদ্ধে ‘ফৌজি’র ডাক পড়াই স্বাভাবিক।
ফৌজি শব্দের মানে নিশ্চয়ই জানা—সৈনিক। খেলার মাঠে খেলোয়াড়দের রূপক-সৈনিক ভাবার অবকাশ থাকলেও পাকিস্তান দলে সত্যি সত্যিই এক সৈনিক আছেন। কে—সেটাও হয়তো আপনার জানা। শৈশবে ক্রিকেটার হতে চাইলেও বাবার আদেশ মেনে যোগ দিয়েছিলেন নৌবাহিনীর নাবিক পদে। কিন্তু ক্রিকেটের নেশা থেকে গিয়েছিল। সে নেশায় ডুবেই ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল ডিফেন্স ক্রিকেট চ্যালেঞ্জ কাপে হয়েছিলেন সেরা খেলোয়াড়।
পরে প্রায় পাঁচ বছর পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে কেউ তাঁকে সেভাবে খেয়াল করেননি। ২০১৬-১৭ মৌসুমে কায়েদে আজম ট্রফি এবং সে মৌসুমে পিএসএলের পারফরম্যান্স তাঁকে জাতীয় দলের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। বাকি পথের চুম্বকাংশও নিশ্চয়ই আপনার জানা। সেই যে ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল, প্রতিপক্ষ ভারত এবং ফখর জামানের ম্যাচ জেতানো ১১৪।
তারপর মাঠের বাইরে ফখর জামান ফখর জামানই থাকলেন। কিন্তু ড্রেসিংরুমে তাঁর নামটা পাল্টে গেল। সতীর্থদের চোখে ফখর তখন থেকেই ফৌজি। বলা হয়, পাকিস্তানের টপ অর্ডার বাবর-রিজওয়ানের ওপর নির্ভরশীল। দুজনের স্ট্রাইক রেট নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ফখরের ক্ষেত্রে নেই। স্কোয়াডের সবচেয়ে পরীক্ষিত ‘ক্লিন হিটার।’ ওপেনিংয়ে দুজন যদি ভালো না–ও করতে পারেন, দ্রুত রান না–ও ওঠে, চারে ভরসা রাখা হয় ফখরে। কেন? সে প্রশ্নের উত্তরে একবার জানিয়ে রাখা ভালো পেসারদের বিপক্ষে ফখরের (১৩৪.৭) স্ট্রাইক রেট শুধু বাবরের (১৩৪.৯) সঙ্গেই তুলনীয়।
আরও জানিয়ে রাখা ভালো, এ বছর টি-টোয়েন্টিতে ১২ ইনিংসে ৩৯৩ রান করা ফখরের স্ট্রাইক রেট ১৫৭.৮। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর টি-টোয়েন্টি এ বছরই সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করছেন বাবর। এমন ব্যাটসম্যানকে পাকিস্তান একদম সঠিক জায়গাতেই ব্যবহার করতে চাইবে। তবে আরেক বাঁহাতি সাইম আইয়ুব
আজ সুযোগ পেলে ফখরের ব্যাটিং পজিশনটা একটু পাল্টাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ম্যাচে সাইমকে খেলানো হয়নি। মাত্র ২১ টি-টোয়েন্টির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাইমের সঙ্গে অবশ্য ফখরের তুলনার সময়টা এখনই হয়নি। আর ভারতের বিপক্ষে আইসিসির বৈশ্বিক ইভেন্টে ফখরের ব্যাট বরাবরই তলোয়ার। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফাইনালের কথা তো আগেই বলা হয়েছে। ২০১৯ বিশ্বকাপে ম্যানচেস্টারে ৬২ রানের সেই ইনিংসটও ভোলা যায় না।
ফখর নিজেও নিশ্চয়ই ভালো করতে মুখিয়ে আছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে দলের হারে এমনিতেই মনের মধ্যে জিদটা চেপে বসার কথা। সে ম্যাচে সুপার ওভারে ১৮ রান তাড়া করতে নেমেছিলেন ফখর ও ইফতিখার। স্ট্রাইক নিয়ে ইফতি প্রথম ৩ বলে মোট ৫ রান তুলে আউট হন। পাকিস্তান ম্যাচটা হেরে যাওয়ার পর ভারতের সাবেক অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং প্রশ্ন তুলেছিলেন, ফখরকে কেন স্ট্রাইক নিতে দেওয়া হয়নি?
২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফাইনালে মাঠেই ছিলেন যুবরাজ। ভারতের বিপক্ষে ফখর কী করতে পারেন, সেটা তো তাঁর জানাই।
জানে পাকিস্তান ও ফখর নিজেও। এখন মাঠে ফলানোর অপেক্ষা।