ইদানীং একটু ভিডিও করার নেশা হয়েছে। বিশেষ করে ভারতের এক শহর থেকে আরেক শহরে নামার সময়। পাখির চোখে আরেকটা শহর দেখার সেই ভিডিও ফেসবুকে শেয়ারও করছি কখনো কখনো।
গতকাল বিকেলে চেন্নাই থেকে উড়ে পুনেতে নামার সময়ও যা করলাম। এবার নিজের একটু বাড়তি আগ্রহ ছিল। পুনেতে এর আগে কোনো দিন আসিনি। নতুন দেশ, নতুন শহর দেখার মধ্যে একটা রোমাঞ্চ আছে। এত দিন শহরের নামটা শুনে, সেই শহর নিয়ে পরে মনে যে ছবিটা আঁকা হয়ে আছে, তার সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়ার একটা ব্যাপার থাকে। কখনো কখনো তা মেলে, বেশির ভাগ সময়ই মেলে না।
পুনেতে নামার পর ভিডিওটা ফেসবুকে শেয়ার করে ট্যাক্সিতে উঠেছি। ঠিকমতো শেয়ার হলো কি না, দেখতে গিয়ে একটা কমেন্টে চোখ আটকে গেল। ‘গিয়ে লাভ কী? লিটন তো সবাইকে বের করে দিচ্ছে!’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের হাজারো সমস্যা থাকতে পারে, অনেক সময়ই তা বিভ্রান্তি ছড়ায়। তবে এটাও তো ঠিক যে অনেক সময় নিউজটা সবচেয়ে আগে সেখানেই পাওয়া যায়। ওই কমেন্টটা দেখেই যেমন বুঝলাম, নিশ্চয়ই পুনেতে লিটন সাংবাদিকদের সঙ্গে কিছু একটা করেছেন।
বুঝে ফেলার কারণ আছে। চেন্নাই থেকে পুনের বিমানে ওঠার আগে বাংলাদেশের অনুজপ্রতিম সাংবাদিককে ফোন করেছিলাম। বাংলাদেশের বেশির ভাগ সাংবাদিকই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পরপরই চেন্নাই থেকে পুনে চলে এসেছেন। টেলিভিশনে হলেও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটা শান্তিমতো দেখব বলে আমি চেন্নাইয়ে থেকে গেছি। বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার রাবীদ ইমামকে ফোন করে আগেই জেনে নিয়েছি, পুনেতে আসার পর প্রথম দুদিন বাংলাদেশ দলের দৃশ্যমান কোনো কর্মকাণ্ড নেই। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে পাঁচ দিনের বিরতি। প্রথম দুদিন জিম-সুইমিং-মিটিং এসব হয়তো চলবে, তবে এর কোনো কিছুই সাংবাদিকদের জন্য উন্মুক্ত নয়। বাংলাদেশ পুনেতে প্রথম অনুশীলন করবে ১৭ অক্টোবর, মানে আগামীকাল।
তবে বাংলাদেশ থেকে এই বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা প্রায় ৫০ জন সাংবাদিক কি আর বসে থাকবেন নাকি! প্রতিদিনই তো তাঁদের কিছু না কিছু পাঠাতে হয়। অন্য দলগুলো এই ফাঁকা দিনগুলোতে মিডিয়ার কথা ভেবে দলের কাউকে না কাউকে কথা বলতে পাঠায়। বাংলাদেশ দল যদিও এখন পর্যন্ত ব্যতিক্রম। তা ব্যতিক্রমেরও তো ব্যতিক্রম হয়। তা হয়েছে কি না জানতেই মূলত ওই সাংবাদিককে ফোন করা। বাংলাদেশের ৪০ জনের মতো সাংবাদিক তখন পুনেতে বাংলাদেশ দলের ঠিকানা করনাড পুনে হোটেলের লবিতে অপেক্ষমাণ। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নাকি কথা বলবেন।
ফেসবুকে আমার ভিডিওর নিচে ওই কমেন্টটা পড়েই তাই অনুমান করে নিয়েছি, হোটেল লবিতেই তাহলে সাংবাদিকদের সঙ্গে লিটনের কিছু একটা হয়েছে। খোঁজখবর করে যা জানলাম, তাতে রীতিমতো অবাক। এমন কোনো কিছু বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে হয়েছে বলেই তো মনে করতে পারছি না। ঘটনা হলো, দুপুরে খাওয়ার জন্য বাইরে যাওয়ার সময় হোটেল লবিতে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের দেখে একদমই ভালো লাগেনি লিটনের। হোটেলের নিরাপত্তাকর্মীদের বলে তাঁদের বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
অথচ এর কিছুক্ষণ আগেই তাসকিন, হৃদয় ও তানজিদ বাংলাদেশ দলের অ্যানালিস্টের সঙ্গে খেতে বেরিয়েছেন। তাসকিন হাসিমুখে টুকটাক কথাবার্তাও বলেছেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। তাহলে লিটনের সমস্যা হলো কেন? একবার ভেবেছিলাম, সাংবাদিকদের কেউ কিছু বলেননি তো! যে কারণে হয়তো লিটন অমন খেপে গেছেন। না, তেমন কিছুও হয়নি। তাহলে? লিটনের কথা বলতে ইচ্ছা না করলে না বলতেন। সোজা হেঁটে বেরিয়ে গেলেই তো হতো। কে তাঁর পথ আগলে দাঁড়াত!
ঘটনাচক্রে এই বিশ্বকাপে পুনেতেই প্রথম টিমের হোটেলে উঠেছি। চেক ইন করার সময় মনে হলো, কে জানে, লিটন এতেও আবার আপত্তি তোলেন কি না! বলতে পারেন, একটু ভয়েই আছি।