হারের পর নাজমুল বললেন, আমাদের অন্তত ১৭০ রান করা উচিত ছিল
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ডিএলএস পদ্ধতিতে ২৮ রানে হারের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের কণ্ঠে কম রান করার আক্ষেপ ঝরল।
অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত এ ম্যাচে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ১৪০ রান তুলেছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া এই রান তাড়া করতে নামার আগেও আরও একবার বৃষ্টির কারণে বিঘ্ন ঘটেছে। ব্যাটিংয়ে নামার পর আরও দুবার বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে শেষবার বৃষ্টিতে বিঘ্ন ঘটার সময় ১১.২ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ২ উইকেটে ১০০। ডিএলএস পদ্ধতিতে তখন ২৮ রানে এগিয়ে ছিল অস্ট্রেলিয়া। এই ব্যবধানেই ম্যাচটি জিতেছে মিচেল মার্শের দল।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল বলেছেন, ‘উইকেট একটু মন্থর হলেও ভালো ছিল। আমাদের অন্তত ১৭০ রান করা উচিত ছিল।’
মিচেল স্টার্কের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে তানজিদ হাসানকে হারিয়ে বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশ। স্টার্কের বলটি ব্যাটে পেলেও বোল্ড হন তানজিদ। টানা দুই ম্যাচে ০ রানে আউট হলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। দ্বিতীয় উইকেটে লিটন দাস ও নাজমুলের কাছ থেকে ৪৮ বলে ৫৮ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বাংলাদেশ। এই জুটিতে নাজমুলের অবদান ২৩ বলে ৩২। লিটন করেছেন ২৫ বলে ১৬। নবম ওভারে অ্যাডাম জাম্পার বলে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন লিটন। ক্রিজে তাঁকে মোটেও স্বস্তি নিয়ে ব্যাটিং করতে দেখা যায়নি। দুটি চার মারলেও লিটন নিজের খেলা প্রথম ১০ বলে মাত্র ১ রান করেন। তখন বাংলাদেশের স্কোর ৩ ওভারে ১ উইকেটে ৮। শেষ পর্যন্ত ৬৪ স্ট্রাইক রেটে ২৫ বলে ১৬ রানে আউট হওয়া লিটনের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
দীর্ঘদিন রানখরায় থাকা নাজমুল এ ম্যাচে হাল ধরেছিলেন। তিনে নামা অধিনায়ক ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে স্টার্ককে চার মেরে আক্রমণাত্মক মেজাজের পরিচয় দেন। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে জস হ্যাজলউডকে ডাউন দ্য উইকেট এসে স্ট্রেট দিয়ে ছক্কাও মারেন। লিটন আউট হওয়ার পর চারে নামা রিশাদ হোসেনকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন নাজমুল। রিশাদকে তখন নামানোর কারণ ছিল লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। সে সময় তাঁকে বোলিংয়ে আনেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক মিচেল মার্শ।
কিন্তু ৪ বলে ২ রান করে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের স্পিনে জাম্পাকে ক্যাচ দেন রিশাদ। বাংলাদেশের স্কোর তখন ১০ ওভারে ৩ উইকেটে ৬৭। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে নাজমুল রিশাদকে নামানো প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এমন (অস্ট্রেলিয়া) দলের বিপক্ষে আমাদের ঝুঁকি নিতেই হতো। আজ যেমন রিশাদ চারে নেমেছে। কারণ, তখন জাম্পা বোলিং করছিল। আমরা জানি, রিশাদ স্পিন খুব ভালো খেলে; কিন্তু আজ পারেনি। এটা হতেই পারে। তবে আজ আমরা ভিন্ন কিছু চেষ্টা করেছি।’
৩৬ বলে ৪১ রান করা নাজমুল ১৩তম ওভারে জাম্পার শেষ বলে এলবিডব্লু হন। ক্রিজে অন্য প্রান্তে তাওহিদ হৃদয় এরপর নাজমুলের পালন করা দায়িত্বটি নিজের কাঁধে তুলে নেন। দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন হৃদয়। ২ ছক্কা ও ২ চারে ২৮ বলে ৪০ রান করা হৃদয় আউট হন ২০তম ওভারের শেষ বলে—সেটি আবার অস্ট্রেলিয়া পেসার প্যাট কামিন্সের হ্যাটট্রিক উইকেট। এর মধ্যে কামিন্সের করা ১৮তম ওভারের শেষ দুই বলে আউট হন মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদী হাসান। ভালো করতে পারেননি অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসানও। ১০ বলে ৮ রানে আউট হন তিনি।
নিজের ইনিংসটি নিয়ে নাজমুল বলেছেন, তিনি দায়িত্ব নিতে ভালোবাসেন, ‘দায়িত্ব নেওয়াটা উপভোগ করি। এখন পর্যন্ত ঠিক পথেই আছি। আশা করি, আরও অবদান রাখতে পারব। আজ টপ অর্ডার রান পেয়েছে, যেটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আগের কয়েকটি ম্যাচে আমরা ভুগেছি। আগের দুই-তিনটি সিরিজ এবং এই বিশ্বকাপেও বোলাররা ভালো করেছে। আশা করি, তারা এটা ধরে রাখবে।’
বোলিংয়ে অবশ্য বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। পাওয়ারপ্লের প্রথম ৬ ওভারেই বিনা উইকেটে ৫৯ তোলেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেড। এই ইনিংসে প্রথমবার বৃষ্টিতে বিঘ্ন ঘটার পর খেলা পুনরায় শুরু হলে ২১ বলে ৩১ রান করা হেডকে তুলে নেন রিশাদ। নিজের পরের ওভারে এই স্পিনার মার্শকেও (৬ বলে ১) তুলে নেন। ৩৫ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন আরেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। ৬ বলে ১৪ রানে আরেক প্রান্ত ধরে রেখেছিলেন ম্যাক্সওয়েল।
অ্যান্টিগার এই মাঠে আগামীকাল রাত ৮টা ৩০ মিনিটে সুপার এইটে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। নাজমুল এই ম্যাচ নিয়ে বলেছেন, ‘আশা করি, ভারতের বিপক্ষে আমরা ভালো খেলব।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪০/৮ (নাজমুল ৪১, হৃদয় ৪০, লিটন ১৬, তাসকিন ১৩*, সাকিব ৮, তানজিম ৪, রিশাদ ২, মাহমুদউল্লাহ ২: স্টার্ক ১/২১, হ্যাজলউড ০/২৫, কামিন্স ৩/২৯, জাম্পা ২/২৪, স্টয়নিস ১/২৪, ম্যাক্সওয়েল ১/১৪)।
অস্ট্রেলিয়া: ১১.২ ওভারে ১০০/২ (ওয়ার্নার ৫৩*, হেড ৩১, ম্যাক্সওয়েল ১৪*, মার্শ ১; মেহেদী ০/২২, তানজিম ০/৯, তাসকিন ০/২২, মোস্তাফিজ ০/২৩, রিশাদ ২/২৩)।
ফল: অস্ট্রেলিয়া ডিএলএস পদ্ধতিতে ২৮ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: প্যাট কামিন্স (অস্ট্রেলিয়া)।