রমিজ রাজা বললেন: আমি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ফ্যানদের বিরাট ভক্ত
খেলোয়াড়ি জীবনের ছবিটা ধূসর হয়ে গেছে অনেক আগেই। অনেক বছর ধরে ধারাভাষ্যকার হিসেবেই বেশি পরিচিতি। ২০০৩ সালে সেই ভূমিকা ছেড়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন কিছুদিনের জন্য। ২০২১ সালে এসে তো পিসিবির চেয়ারম্যানই হয়ে যান। পাকিস্তানে বোর্ড প্রধান নিয়োগ দেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে পিসিবির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেন তাঁর একসময়ের সতীর্থ রমিজ রাজাকে। ইমরান প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তাঁকেও সরে যেতে হয়।
পিসিবির প্রধান হিসেবে ইতিবাচক অনেক পরিবর্তনই করার চেষ্টা করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সাফল্য সম্ভবত পাকিস্তান সুপার লিগকে (পিএসএল) জনপ্রিয় করা। বিদেশি ক্রিকেটারদের কাছে পিএসএলকে আইপিএলের পরেই ‘দ্বিতীয় সেরা গন্তব্যে’ পরিণত করার কৃতিত্বটাও তাঁকেই দিতে হয়।
সেই ক্রিকেট প্রশাসক রমিজ এখন আবার ফিরেছেন ধারাভাষ্যে। বাংলাদেশেও এসেছেন বিপিএলে ধারাভাষ্য দিতেই। আজ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ধারাভাষ্যকক্ষের সামনে তাঁর সঙ্গে দেখা। নানা আলোচনার মধ্যে কথা হং বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের নিয়ে। কথাটি উঠতেই বলেছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সমর্থকদের বিরাট ভক্ত তিনি।
অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, কুশল বিনিময়ের পর খেলার কথায় আসতে না আসতেই যে রমিজকে দেখা গেল, তাঁর সঙ্গে ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজার মিল কমই। দায়িত্ব ছাড়লেও ভেতরে ভেতরে হয়তো পিসিবি প্রধান রমিজকে এখনো বয়ে বেড়ান তিনি।
বিশেষ করে পিএসএল নিয়ে তাঁর কাজের আলোচনা উঠতেই যে ব্যাখ্যা দিলেন, তাতে মনে হবে পিএসএল এখনো তাঁরই টুর্নামেন্ট। তাঁর মুখেই শুনুন, ‘আমাদের ভাগ্য ভালো যে পাকিস্তানে অনেক স্থানীয় প্রতিভা আছে। শাহিন শাহ আফ্রিদি, বাবর আজম অথবা রিজওয়ান, ওদের নাম ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে গত ৩-৪ বছরে। কারণ, ওরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করছিল। সুতরাং বলা যায় শুরুটা ভালো করার রসদ ছিল আমাদের।’
পিসিবি প্রধান হিসেবে যা করতে চেয়েছিলেন, তা যে পুরোপুরি করতে পারেননি, সেই আক্ষেপটাও ফুটে উঠল দ্রুতই। বিদেশি খেলোয়াড়দের টানতে পিএসএলে আইপিএলের মতো নিলামে খেলোয়াড় কেনার নিয়ম চালু করতে চেয়েছিলেন। নিজে তা করতে না পারলেও ভবিষ্যতে এটির কোনো বিকল্প দেখেন না, ‘আমি চাইব ভবিষ্যতে পিএসএলে যেন হাইব্রিড মডেল আসে। যেখানে কিছু খেলোয়াড় বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দলে জায়গা করে নেবে, আইপিএলে নিলামের মাধ্যমে যা হয়। আর বাকিরা ড্রাফটের মাধ্যমে আসবে। কারণ, এখন অনেক লিগ হচ্ছে। আপনাকে আলাদা হতে হলে ভিন্ন কিছু করতে হবে। প্রথমত, স্থানীয় তারকা থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে বেশি টাকা থাকতে হবে। সে জন্য পিএসএলকে হাইব্রিড মডেলে যেতে হবে। আইপিএলের পর বাকিদের চ্যালেঞ্জ জানাতে হলে হাইব্রিড মডেল লাগবে।’
পিএসএলকে বলা হয় বিশ্বের সেরা ‘বোলিং লিগ’। রমিজও পিএসএলের ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে এই তকমা ব্যবহার করেছেন। এর পেছনে অবশ্য শক্ত যুক্তিও আছে, ‘অনেক পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার পিএসএল দিয়ে উঠে আসে। গত বছর আমরা গুনে দেখেছি, ২০-২৫ জন ফাস্ট বোলার পিএসএলে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার বেগে বল করে। এ কারণেই পিএসএলে রান করা খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনি পিএসএলে রান করতে চাইবেন, কারণ এখানকার চ্যালেঞ্জটা কঠিন।’
একটা সময় পিএসএলের জায়গাটা ছিল বিপিএলের। ক্রিকেটারদের মধ্যে আইপিএলের পরে জনপ্রিয়তায় বিপিএলই ছিল দ্বিতীয় স্থানে। পরে এসেও সে জায়গাটা এখন পিএসএলের। হারানো আসন ফিরে পেতে বিপিএলের করণীয় কী, তা জানতে চাওয়ার আদর্শ ব্যক্তিও তো রমিজই। টুর্নামেন্ট জমিয়ে তুলতে দরকার সমর্থন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় শক্তিও সমর্থক। রমিজ সবার আগে সেই শক্তিটাকে কাজে লাগাতে বললেন, ‘আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট সমর্থকদের বিরাট ভক্ত। দল যেমনই করুক, ওরা দলকে সমর্থন দিয়ে যায়। পাকিস্তানে আমি তা দেখি না। পাকিস্তানের সমর্থকেরা সব সময় ভালো ফল চায়। বিপিএলও যদি এই সমর্থকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়, তাহলেই হবে। কারণ, সমর্থকেরাই টুর্নামেন্ট গড়ে দেয়।’
লিগ জনপ্রিয় করতে বিদেশি ক্রিকেটারও দরকার। সূচির বিড়ম্বনা থাকলেও দুই বছর ধরে বিপিএলে বড় বড় তারকা আসছেন। তরুণ ক্রিকেটারদের তাঁদের সাহচর্য পাওয়া বেড়ে ওঠা বাংলাদেশ ক্রিকেটে ইতিবাচকতা যোগ করবে বলে মনে করেন রমিজ। ম্যাচগুলো যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়, রমিজের পরামর্শে এসেছে সে কথাও। সে জন্য দরকার ভালো উইকেট। বিপিএলের মাধ্যমে প্রতিভাবান ক্রিকেটার যেন উঠে আসেন, সে মঞ্চও থাকতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, রমিজের শর্তগুলোর কয়টি বিপিএল পূরণ করতে পারছে?