স্টার্কের ক্যাচকে বৈধতা না দেওয়ায় পন্টিং–ম্যাকগ্রাদের ক্ষোভ, ব্যাখ্যা দিল এমসিসি
ভারতের বিপক্ষে ওভালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের পর লর্ডসে অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্ট—অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডারদের ক্যাচ নেওয়া নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে দুই ম্যাচেই।
ওভালে ভারতীয় ওপেনার শুবমান গিলের ক্যাচটি নিয়েছিলেন ক্যামেরন গ্রিন, লর্ডস টেস্টে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে জো রুটের ক্যাচ নেন স্টিভেন স্মিথ। দুই ক্ষেত্রেই আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে গেছে। কিন্তু লর্ডসে কাল রাতে মিচেল স্টার্ক ফাইন লেগে বেন ডাকেটের ক্যাচটি নিলেও আম্পায়াররা ইংলিশ ওপেনারকে আউট দেননি। শেষ পর্যন্ত ৫০ রানে অপরাজিত থেকে চতুর্থ দিন পার করেছেন ডাকেট।
‘জীবন’ পাওয়া ডাকেট আজ কী করবেন, সেটা পরেই জানা যাবে। কিন্তু ফাইন লেগে স্টার্কের ক্যাচটিকে বৈধতা না দেওয়ায় এরই মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন রিকি পন্টিং-গ্লেন ম্যাকগ্রারা। বিতর্কের মধ্যেই ক্রিকেটের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) জানিয়েছে, ডাকেটকে আউট না দেওয়ার সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল।
জয়ের জন্য ৩৭১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে একপর্যায়ে ৪৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে ইংল্যান্ড। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে দেননি ওপেনার বেন ডাকেট ও অধিনায়ক বেন স্টোকস। পঞ্চম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করেন তাঁরা। ৪ উইকেটে ১১৪ রান নিয়ে দিনের খেলা শেষ করেছে ইংল্যান্ড।
তবে ২৯তম ওভারে গুবলেট পাকিয়ে বসেন ডাকেট। গ্রিনের বাউন্সারে বল থার্ড ম্যান দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ঠিকভাবে টাইমিং না হওয়ায় বল চলে যায় ফাইন লেগে। বাঁ দিকে কিছুটা দৌড়ে এসে ক্যাচ নেন স্টার্ক।
আম্পায়ার আউট দিলে ডাকেট বাউন্ডারি লাইন পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু মাঠের দুই আম্পায়ার এহসান রাজা ও ক্রিস গ্যাফানি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তাঁকে ডেকে পাঠান। এরপর তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য চান মাঠের দুই আম্পায়ার। টিভি আম্পায়ার মরিস এরাসমাসের মনে হয়েছে স্টার্ক ক্যাচটি নিলেও শারীরিক ভারসাম্য ঠিক রাখতে গিয়ে বলসহ বাঁ হাতটা মাটিতে রেখেছিলেন। বেঁচে যান ডাকেট।
ডাকেটকে ফিরিয়ে আনায় মাঠেই আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্কে জড়ান অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ও ক্যাচ নেওয়া স্টার্ক। বিসিবি টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ম্যাকগ্রা। ডাকেটকে আউট না দেওয়ায় তখনই এ নিয়ে তাঁর অসন্তুষ্টির কথা বলেন, ‘ইংল্যান্ড এই ক্যাচ নিলে আউট দেওয়া হতো, কিন্তু আমাদের বেলায় নটআউট। আমি দুঃখিত, কিন্তু এটা আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে বড় আবর্জনা। বলকে সে (স্টার্ক) পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল। এটা যদি নটআউট হয়, তাহলে এখন পর্যন্ত যত ক্যাচ নেওয়া হয়েছে, সবই নটআউট হওয়া উচিত।’
আর দিনের খেলা শেষে স্কাই স্পোর্টসের সঙ্গে আলোচনায় অস্ট্রেলিয়ার সফলতম অধিনায়ক পন্টিং বলেছেন, ‘মিচেল স্টার্কের সেই বলের ওপর অনেক ভালো নিয়ন্ত্রণ ছিল। স্টিভেন স্মিথকে জো রুট যে ক্যাচ দিয়েছিল, সেটার চেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণ ছিল।’
তবে এমসিসি বলছে, স্টার্কের ক্যাচটি বৈধ ছিল না। টুইটারে এমসিসি ব্যাখ্যা দিয়েছে এভাবে, ‘ক্রিকেটের আইনের ৩৩.৩ ধারা অনুযায়ী, একটি ক্যাচ তখনই বৈধ হবে, যখন বল ও নিজের শরীরের ওপর ফিল্ডারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। দুটিই নিয়ন্ত্রণে থাকার আগে পর্যন্ত বল মাটি স্পর্শ করতে পারবে না।’
স্টার্কের ক্ষেত্রে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, তিনি ক্যাচটি ঠিকঠাক নিলেও শারীরিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং পিছলে পড়ার একপর্যায়ে বাঁ হাতসহ বল মাটিতে রেখেছিলেন। আইন অনুযায়ী তাই তৃতীয় আম্পায়ার এরাসমাসের সিদ্ধান্তই সঠিক। অর্থাৎ, স্টার্কের ক্যাচটি বৈধ নয়, ডাকেট নটআউট ছিলেন।