আফগানিস্তান এক দশকের মধ্যে আইসিসি টুর্নামেন্ট জিততে পারে, বললেন স্টেইন

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে এবার ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে আফগানিস্তানএএফপি

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে গতকাল দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রায় বিদায়ই নিয়েছে আফগানিস্তান। আগে ব্যাট করে ২৭৩ রান তোলার পর অস্ট্রেলিয়া তাড়া করতে নেমে ১ উইকেটে ১০৯ রানে থাকতে বৃষ্টির কারণে ম্যাচে আর খেলা হয়নি। আগেই ১ পয়েন্টে এগিয়ে থাকা আফগানিস্তানকে পেছনে ফেলে সেমিফাইনালে উঠে গেছে অস্ট্রেলিয়া।

রশিদ খানদের সেমিফাইনালে ওঠার সুযোগ আছে শুধু কাগজে–কলমে। আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা অন্তত ২০৭ রানে হারলেই শুধু শেষ চারের টিকিট পাবে আফগানিস্তান, যেটা বাস্তবে প্রায় অসম্ভব।

আরও পড়ুন

কিন্তু চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আফগানিস্তানের খেলা অনেকেরই নজর কেড়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে লড়াকু পুঁজি গড়ার আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২৫ রান তুলে ম্যাচ জিতেছিল আফগানিস্তান। এর আগে ২০২৩ বিশ্বকাপেও একই দলকে হারিয়েছিল রশিদ–হাশমতদের দল। জাগিয়েছিল সেমিফাইনালের সম্ভাবনা। ২০২৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তো নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সেমিফাইনালেও খেলেছে দলটি। এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে শেষ চারে না যেতে পারলেও দলটির ধারাবাহিক সাফল্যে ভবিষ্যতে ভালো কিছুই দেখছেন অনেকে। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি পেসার ডেল স্টেইন।

দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসার ডেল স্টেইন
ডেল স্টেইনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট

আফগানিস্তানের ক্রিকেট নিয়ে তিনি ক্রিকইনফোর কাছে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেছেন, ‘আগের দিনে অনেকে (ইংল্যান্ডে) কাউন্টি খেলতে যেতেন। কিংবা দক্ষতা ও ধৈর্য বাড়াতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলতেন। আমার মনে হয়, আমরা এমন এক সময়ে বসবাস করছি, যখন মানুষের ধৈর্য নেই। ইনস্টাগ্রামে দুই সেকেন্ডের স্টোরিও আমরা বড় কষ্টে দেখি। ব্যাপারটা ঠিক আফগানিস্তানের ক্রিকেটারদের মতোই, যখন তারা ক্রিকেট খেলে।’

আরও পড়ুন

৯৩ টেস্টে ২২.৯৫ গড়ে ৪৩৯ উইকেট নেওয়া স্টেইন এরপর বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘তারা (আফগানিস্তান দল) চায় সবকিছু দ্রুত ঘটুক—যেমন এই বলে উইকেট পেতেই হবে। কিন্তু পরিস্থিতি তৈরি করে উইকেট নেওয়ার মতো ধৈর্য নেই। কখনো কখনো ব্যাটারদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা দেখা যায়। তারা হয়তো প্রথম ওভারে ব্যাট করছে, যখন ক্রিজে প্রচুর মুভমেন্ট হয়। তখন তারা ছক্কা মেরে খেলার চেষ্টা করে।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অল্প সময়ে উন্নতি করেছে আফগানিস্তান
এএফপি

ইতিহাসের অন্যতম সেরা পেসারের স্বীকৃতি পাওয়া স্টেইনের কথা শুনে মনে হতে পারে, তিনি আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের সমালোচনা করছেন। আসলে তা নয়। উন্নতির সোপানে উঠে পরের ধাপে যেতে কী করতে হবে, সে বিষয়ে কথা বলেছেন ৪১ বছর বয়সী কিংবদন্তি পেসার, ‘তাদের অনেকেই বিশ্বজুড়ে টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলে, যেটা খুব ভালো বিষয়। শেখার পাশাপাশি পকেটের জন্যও ভালো। তবে চার দিনের ম্যাচ থেকেও শেখার আছে। ওয়ানডে তো আসলে টেস্টেরই সংক্ষিপ্ত রূপ। ধৈর্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের শিখতে হবে। একবার তারা ধৈর্য ধরা শিখতে পারলে সত্যি বলতে, পরের দশকে আইসিসি টুর্নামেন্ট জিততে পারে।’

ভারতের সাবেক ওপেনার ওয়াসিম জাফরও আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুত উন্নতির প্রশংসা করেছেন, ‘আফগানিস্তান উঠে আসছে। তাদের প্রশংসা করতে হবে, কারণ ২০২৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছে, ভালো ভালো দলকে হারিয়েছে। তারা কাউকে হারালে সেটি আর আপসেট নয় মোটেও। তাই আফগানিস্তানের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করাই যায়।’

আফগানিস্তানকে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন ওয়াসিম জাফর, ‘এমন সব টুর্নামেন্টে ভালো শুরু খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, খুব বেশি সুযোগ থাকে না। একটি হারেই বাদ পড়তে হতে পারে, যেটা ঘটেছেও। তাদের ব্যাটিংয়ে উন্নতি করতে হবে। বড় রান তাড়া করার মতো দল হয়ে ওঠেনি তারা। তাদের ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক হতে হবে। (সেদিকউল্লাহ) আতাল আজ (কাল) ভালো খেললেও রহমত শাহকে ধারাবাহিক হতে হবে। সে প্রথম ম্যাচে ৯০ করলেও হাশমতউল্লাহ শহীদি আজ (কাল) হাঁসফাঁস করেছে। গুরবাজ তাদের প্রধান খেলোয়াড়, টুর্নামেন্টে তার বাজে ফর্ম যাচ্ছে। আমার মনে হয়, এবার তারা এই জায়গাটাতে পিছিয়ে।’