যেদিকেই তাকাবেন, দূরে পাহাড়ের ওপর দুর্গ, রাজপ্রাসাদ, নানা রকম স্থাপত্যশৈলী। রাজাদের শহর গোয়ালিয়রের মোড়ে মোড়ে দেখা মেলে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের। এয়ারপোর্ট রোড থেকে শ্রীমন্ত মাধবরাও সিন্ধিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দিকে এগোতে থাকলে চোখে পড়বে প্রস্তর যুগের নিদর্শন গোয়ালিয়র দুর্গ। রাজা মানসিংহ তোমর এই দুর্গ বানিয়েছিলেন, পরে দখল করে মোগলরা। পরে মারাঠা ও ব্রিটিশদের হাত হয়ে গোয়ালিয়রের সর্বশেষ রাজা মাধবরাও জিভাজিরাও সিন্ধিয়া নেন এর দখল। রাজাদের দিন গত হলেও এই শহর এখনো ‘সিন্ধিয়া’ পরিবারকে রাজার পরিবারই মনে করে।
গোয়ালিয়রের নতুন স্টেডিয়ামের নামকরণও হয়েছে জিভাজিরাওর ছেলে শ্রীমন্ত মাধবরাওয়ের নামে। আজ সন্ধ্যায় বাংলাদেশ-ভারতের তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হবে এ মাঠের। রাজাদের শহরে শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে দুই দলই ‘নতুন রাজা’র খোঁজ করছে। ভারতকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন ক্রিকেটের দুই মহাতারকা বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা। স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় দলে এখন নতুন নামের ছড়াছড়ি। এদিকে বাংলাদেশও পাচ্ছে না সাকিব আল হাসানকে। ভবিষ্যতে আবার টি-টোয়েন্টিতে ফেরার দরজা খোলা রাখলেও তিনি জানিয়েছেন, গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই এই সংস্করণে শেষ ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন। অভিজ্ঞদের মধ্যে এখনো আছেন দলের একমাত্র ত্রিশোর্ধ্ব ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ।
আশা করা যায়, ২০–এর ঘরে থাকা তরুণদের মধ্য থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরবর্তী সুপারস্টার মাথা তুলবেন। ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলা মানেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া। সেটা যদি হয় ভারতেরই মাঠে, তাহলে তো কথাই নেই। তামিম যেমন ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের জহির খানকে ছক্কা মেরে রাতারাতি তারকা বনে গিয়েছিলেন। যদিও সে ম্যাচটি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের পোর্ট অব স্পেনে। একই ম্যাচে ভালো করেছিলেন সাকিব আর মুশফিকও। ২০১২ সালের এশিয়া কাপে ভারতকে হারানোতেও ভূমিকা ছিল সাকিব-মুশফিকের। তিনজনই এর পর থেকে তারকাখ্যাতির চূড়ায় উঠেছেন। এবার পরবর্তী প্রজন্মের ক্রিকেটারদের সামনে ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলে ‘সুপারস্টার’ হয়ে ওঠার সুযোগ।
‘সুপারস্টার’ কথাটা অবশ্য গতকাল সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা তাওহিদ হৃদয়ের পছন্দ হচ্ছিল না। কৌশলী হাসি দিয়ে শব্দটাকে এড়িয়ে যেতে চাইলেন, ‘সুপারস্টার তৈরি হওয়া নিয়ে আমি বলতে পারব না। এটা সময়ই বলে দেবে। আগে পারফর্ম করাটা গুরুত্বপূর্ণ। পারফর্ম যদি করি, দলের ফল যদি ভালো হয়, দেখা যাবে এখান থেকেই ইনশা আল্লাহ ভবিষ্যতে অনেকেই আসবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পারফরম্যান্স ছাড়া আসলে কোনো কিছু চিন্তা করা যায় না। দলের সবাই পারফর্ম করতে চায় এবং চেষ্টা করব ভালো কিছু করতে।’
ভারতে টি-টোয়েন্টির সঙ্গে ‘ধামাকা’ শব্দটা খুব যায়। যেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই চার-ছক্কার বিস্ফোরণ! তবে হৃদয় সেভাবেও চিন্তা করতে চান না, ‘সত্যি বলতে “ধামাকা” বা এ রকম কিছু আমাদের মাথায় নেই। যেটা আগেও বললাম, আমরা জেতার জন্যই খেলব। আমাদের লক্ষ্য, যেন আমরা সিরিজটা জিততে পারি, ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি, এটাই। আমরা ভাবছি ম্যাচ বাই ম্যাচ কীভাবে ভালো করা যায়।’
সিরিজে ভারতীয় দলের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবও সিরিজটিকে নিচ্ছেন দলের তরুণদের জন্য নিজেদের চেনানোর আদর্শ মঞ্চ হিসেবে, ‘তরুণদের জন্য দারুণ সুযোগ এটি। মায়াঙ্ক, নীতীশরা যখনই তাদের রাজ্য দলের হয়ে খেলেছে, ওরা ভালো করেছে। এখানেও তাদের ব্যতিক্রম কিছু করতে হবে না।’
আজ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আগে দুই দলেরই দুশ্চিন্তা গোয়ালিয়রের প্রচণ্ড গরম আবহাওয়া নিয়ে। ম্যাচ সন্ধ্যায় হলেও রোদ আর গরমের কারণে ম্যাচের জন্য নির্ধারিত উইকেট উন্মুক্ত রাখা যাচ্ছে না। মোটা চট দিয়ে ঢেকে রাখতে হচ্ছে সিন্ধিয়া স্টেডিয়ামের ২২ গজ। উইকেট খোলা রাখলে নাকি রোদের তাপে তা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে উইকেটে একবার পানিও ছিটানো হয়েছে। আজ বেলা দুইটা নাগাদ আরও একবার পানি দেওয়ার কথা।
তো এমন আবহাওয়ায় চটে ঢাকা গোয়ালিয়রের উইকেট কেমন আচরণ করতে পারে, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই সঞ্জীব আগারওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করা। মধ্যপ্রদেশের এই কিউরেটর একসময় সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে উত্তর প্রদেশের শহর লক্ষ্ণৌর একানা স্টেডিয়ামের কিউরেটর সঞ্জীব কাজ করেছেন সিন্ধিয়া স্টেডিয়ামেও। এ মাঠে ঘরোয়া ক্রিকেটের কিছু ম্যাচের উদাহরণ দিয়ে আজকের জন্য বড় রানের পূর্বাভাসই দিলেন তিনি, ‘আমার ধারণা ভালো কিছুই হবে। গরম হলেও সেটা বড় সমস্যা হবে না। ওই মাঠে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ম্যাচগুলো দেখুন। প্রতি ম্যাচেই বড় রান আছে।’
রাজাদের শহরে রাজার নামের স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক অভিষেকে সে রকম ম্যাচই দেখতে চাইবেন গোয়ালিয়রের দর্শকেরা। আর বাংলাদেশ ও ভারতীয় দল খুঁজতে শুরু করবে টি-টোয়েন্টির নতুন রাজা।