ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারদের টেস্টে কেন আগ্রহ নেই, জানালেন রাসেল

ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেলআইসিসি

এদিকে অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ দল নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ একের পর এক টেস্ট হেরেই চলেছে। ওদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা ক্রিকেটাররা ব্যস্ত অর্থের ঝনঝনানির ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিয়ে। ক্রিকেটের সবচেয়ে কুলীন সংস্করণে জাতীয় দলের এমন দুরবস্থা নিয়ে কোনো হেলদোল নেই তাঁদের।

যাঁরা নিয়মিত ক্রিকেট দেখেন, এ ধরনের দৃশ্য তাঁদের কাছে বেশ পরিচিতই। এই তো কদিন আগেই আনকোরা এক দল নিয়ে ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাই হয়ে ফিরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাফেট আর অলরাউন্ডার জেসন হোল্ডারকে সরিয়ে রাখলে স্কোয়াডের বাকি ১৩ জনের চেয়ে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস একাই খেলেছেন বেশি টেস্ট!  

একসময়ের মহাপরাক্রমশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের এমন অধঃপতনের জন্য নানা কারণকেই সামনে আনা হয়। তবে যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়, তা হলো দলটির তারকা ক্রিকেটারদের টেস্টের প্রতি অনীহা। কারিকারি টাকার গন্ধে তাঁরা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছেন—এমন অভিযোগও বেশ পুরোনো।

আন্দ্রে রাসেলও মনে করেন, ক্রিকেটারদের অর্থের অভাবের চেয়ে আগ্রহের অভাব বেশি। কেন, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী এই তারকা অলরাউন্ডার।

সম্প্রতি ইংল্যান্ড সফরে টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাই হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ইসিবি

লন্ডন স্পিরিটের হয়ে দ্য হানড্রেড খেলতে এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডেই আছেন রাসেল। এবারের আসরে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া (১ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা) পাঁচ ক্যারিবীয় ক্রিকেটারের একজন তিনি। তাঁর সমান পারিশ্রমিক পাচ্ছেন লন্ডন স্পিরিট সতীর্থ শিমরন হেটমায়ার, নর্দার্ন সুপারচার্জার্সের নিকোলাস পুরান, ট্রেন্ট রকেটসের রোভম্যান পাওয়েল ও সাউদার্ন ব্রেভের কাইরন পোলার্ড।

পাঁচজনেরই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান হিসেবে নামডাক থাকলেও পুরান, পাওয়েল ও পোলার্ড কখনো টেস্ট খেলেননি। সেই ২০১০ সালে রাসেলের অভিষেক টেস্টটাই হয়ে আছে সর্বশেষ। আর হেটমায়ার ১৬ টেস্টের সর্বশেষটি খেলেছেন ২০১৯ সালে।

লন্ডন স্পিরিটের হয়ে দ্য হানড্রেডে খেলতে এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডে আছেন আন্দ্রে রাসেল
এক্স

দীর্ঘকাল ধরে বলা হচ্ছে, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড (সিডব্লুআই) তারকা খেলোয়াড়দের ঠিকমতো বেতন-ভাতা দিতে পারে না বলেই তাঁরা টেস্টের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু রাসেল মনে করেন, ক্যারিবীয় ক্রিকেটারদের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারকে দীর্ঘায়িত না করার পেছনে অন্যান্য বিষয়গুলোও বিবেচনা করে দেখা উচিত। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা পিএকে রাসেল বলেছেন, ‘আমি মনে করি না টাকাই সমস্যা। বিশ্বজুড়ে এখন এত বেশি টি-টোয়েন্টি লিগ হচ্ছে, তাতে অনেক খেলোয়াড়ই টেস্ট খেলতে আগ্রহী নয়।’

রাসেল আরও বলেছেন, ‘অন্যান্য ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানদের দেখেও আমার মধ্যে সব সময় রোমাঞ্চ কাজ করে, বিশেষ করে যখন তারা বাউন্ডারির পর বাউন্ডারি মারতে থাকে। যত দিন পর্যন্ত তারা দেশের বাইরের চুক্তি থেকে ভালো (আয়) করতে পারবে, তত দিন তারা সুযোগটি লুফে নিতে চাইবে। তবে সবাই (ওয়েস্ট ইন্ডিজের) হয়ে বড় মঞ্চে খেলতে চায়। আমি জানি টেস্ট ক্রিকেটেরও বড় মঞ্চে খেলতে পারলে তরুণ ক্রিকেটাররা খুশি হবে। তাই টাকা বা এ রকম কিছু (টেস্ট না খেলার কারণ) নয়।’

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫ দিনের টেস্ট সিরিজে মাত্র ১০ দিনেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ধবলধোলাই হওয়ায় ব্যথিত রাসেল। তাহলে দলের এমন দুরবস্থার সময়েও তিনি কেন টেস্ট খেলছেন না? তাঁর উত্তর, টানা পাঁচ দিন খেলার মতো ফিটনেস নেই, ‘লাল বলের ক্রিকেট আমার জন্য নয়। মনে হয় না আমার শরীর টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে। তবে এই মুহূর্তে যারা (টেস্ট) দলে আছে, তারা যথেষ্ট ফিট এবং চ্যালেঞ্জ নিতে জানে।’

২০১০ সালে অভিষেকের পর আর কোনো টেস্ট খেলেননি আন্দ্রে রাসেল
এএফপি

ইংল্যান্ডের সঙ্গে পেরে না উঠলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ বেশ কয়েকবার স্টোকস-রুটদের কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছিল। সেই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে না পারলে ফল অন্যরকম হলেও হতে পারত বলে মত রাসেলের, ‘টেস্ট সিরিজে তাদের সামনে কিছু মুহূর্ত এসেছিল, যেখান থেকে তারা সবকিছুকে ঘুরিয়ে দিতে পারত। ইংল্যান্ডের ঘরের মাঠে তাদের বিপক্ষে খেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য সব সময়ই কঠিন।’