রশিদদের লাফিয়ে ওঠা বলে কী করবেন তামিম
বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমের সামনে ছোট্ট একটা সেশন। সেখানে কোচের ভূমিকায় মুশফিকুর রহিম ও ‘ছাত্র’ তামিম ইকবাল।
৫ জুলাই থেকে চট্টগ্রামে শুরু আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ সামনে রেখে মিরপুরে কাল আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন। একাডেমি মাঠে দীর্ঘ সময় ব্যাটিং অনুশীলন করার পর ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম নেটের বাইরে এসেও বেশ খানিকটা সময় কথা বললেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে।
অধিনায়ক–কোচ আলোচনার বিষয়বস্তু দূর থেকে বোঝার উপায় ছিল না। তবে ড্রেসিংরুমে ফেরার একটু পর মাঠে এসে তামিম অভিজ্ঞ সতীর্থ মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে যে ওই আলোচনাটা করলেন, দুজনের শরীরি ভাষাতেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছিল তার অনুবাদ।
হাতের ইশারায় তামিম যে রকম দেখাচ্ছিলেন, তাতে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না যে হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বল খেলার কৌশলই আলোচনার বিষয়। ব্যাট হাতে সামনের পায়ে খেলার শ্যাডো করে তামিম পরামর্শ চাচ্ছিলেন মুশফিকের—এ রকম বল সামনের পায়ে না খেলে আর কীভাবে খেলা যায়?
তামিমের শ্যাডো দেখার পর মুশফিক খালি হাতে শ্যাডো করে প্রথমে সামনের পায়ে গেলেন, সঙ্গে সঙ্গে পেছনে এসে বলটাকে বুকের কাছাকাছি জায়গা থেকে খেলার ভঙ্গি করলেন। এরপর দেখালেন, এই কৌশল নিলে বলটাকে অফ, অন বা সামনের দিকেও ঠেলে খেলা যেতে পারে। সামনের পায়েই খেলব, এমন প্রতিজ্ঞা নিয়ে খেললে তামিম একটা শটেই আটকে যাবেন এবং সেটি থেকে রান নাও আসতে পারে। এর চেয়ে যদি শরীরের ভারসাম্য ধরে রেখে সামনে গিয়েও বল বুঝে দ্রুত পেছনের পায়ে চলে আসা যায়, তাহলে তিন দিকেই খেলার দরজা খোলা থাকে।
পেস বোলারদের ক্ষেত্রে একবার সামনে গিয়ে আবার পেছনে আসার অতটা সময় ব্যাটসম্যান পাবেন না। মুশফিক–তামিমের আলোচনাটা তাই পেসারদের নিয়ে হওয়ার কথা নয়, সেটি স্পিনারদের লাফিয়ে ওঠা বলে করণীয় ঠিক করতেই।
এমন নয় যে এরকম বল খেলার কৌশল তামিমের অজানা। কিন্তু পরীক্ষা কাছে চলে এলে জানা বিষয়েও ‘গ্রুপ স্টাডি’ তো হতেই পারে। আর আফগান স্পিন আক্রমণটার দিকেও একবার তাকান—রশিদ খান, মোহাম্মদ নবী, মুজিব উর রেহমানের মতো অভিজ্ঞদের সঙ্গে আছেন আন্তর্জাতিক অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা লেগ স্পিনার ইজহারুলহক নাভিদসহ আরও দু–একজন। বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের সিলেবাসে স্পিন সামলানোর কলাকৌশল গুরুত্ব পাওয়াটাই তো স্বাভাবিক এখন।
এর আগে একাডেমি মাঠের নেটে আরেকটা দৃশ্যেও চোখ আটকে থাকতে বাধ্য হলো অনেকটা সময়। ফিল্ডিং কোচ নিক লি থ্রোয়ার দিয়ে স্পিনের গতিতে বল ছুড়ছেন। ও প্রান্তে লিটন দাস সমানে খেলে যাচ্ছেন স্কুপ শট। কখনো কখনো তো স্টান্সও বদলে ফেলে দাঁড়াচ্ছিলেনই স্কুপ খেলার ভঙ্গিমায়!
লিটন অবশ্য এই মুহূর্তে অন্য কারণেও আলোচনায়। বছর দুয়েক আগেও নামের সঙ্গে ‘তরুণ’ ক্রিকেটারের পরিচয় বহন করেছেন। আর এখন তিনি টেস্ট দলের সহ–অধিনায়ক, অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে একটি টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং খুব সম্ভবত অলিখিত সহ–অধিনায়ক থাকবেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন ওয়ানডে সিরিজেও।
ওয়ানডে দলে বিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে সহ–অধিনায়ক উল্লেখ করেনি। বিসিবির সে রকম চিন্তাও নাকি নেই। তবে অধিনায়ক তামিম ইকবাল যেহেতু মাত্রই চোট থেকে ফিরেছেন, ম্যাচের মধ্যে বা সিরিজেও তাঁর অপ্রত্যাশিত ‘বিশ্রাম’–এর প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।
তাই ঠিক হয়েছে, ওয়ানডে সিরিজের আগে দলকে জানিয়ে দেওয়া হবে, জরুরি প্রয়োজনে মাঠ চালাতে হলে তামিমের বিকল্প কে হবেন। বলা বাহুল্য, অলিখিত সহ–অধিনায়ক হিসেবে যে তিনটি নাম বিবেচনায় আছে, অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকা এবং সদ্যই এক টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুবাদে তার প্রথমটি লিটন দাস। অন্য দুজন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন।