আফগান স্পিনারদের গতিও যখন বাংলাদেশের ভয়
আফগানিস্তানের স্পিনত্রয়ীর গতি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের।
একবার ভেবে দেখুন, আফগানিস্তানের স্পিনার মুজিব–উর রেহমান যদি মিডিয়াম পেসার হতেন, তাহলে কেমন হতো? বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের জন্য সেটা সুখবরই হতো। মজার ব্যাপার হলো, মুজিব খেলাটা শুরু করেছিলেন মিডিয়াম পেসার হিসেবেই। পরে শুরু করেন স্পিন বোলিং। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান তথ্যটা জানার পর অবাকই হলেন। এরপর দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে বললেন, ‘সে জন্যই হয়তো স্পিনটা মিডিয়াম পেসের মতোই করে।’
সেটা কীভাবে? মুজিবের রানআপের কথাই ধরুন। আর দশজন স্পিনারদের তুলনায় মুজিবের রানআপ একটু লম্বা। আরেকটু দীর্ঘ হলেই সেটা মিডিয়াম পেসারের রানআপের চেয়ে কম মনে হতো না। আর গতি! মুজিবের স্পিন বোলিংয়ের গতি দেখে অনেকেই আঁতকে উঠে বলতে পারেন, ‘এত জোরে স্পিন করছে কীভাবে!’ ব্যাটসম্যানদের জন্য মুজিব ভয়ংকর ওই গতির কারণেই। কাল বাংলাদেশেরই আরেক ব্যাটসম্যান বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, ‘দেখুন, ওর অনেক ভেরিয়েশন আছে। খেলতে খেলতে একটা সময় পর সেটা ধরতে পারবেন। কিন্তু তারপরও জোরে করার কারণে মানিয়ে নেওয়া কঠিন। মুজিব তো ১০০-তে বল করে।’
১০০ মানে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। কথাগুলো শুনতে শুনতে মনে পড়ল আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচের দুটি বলের কথা। মুজিবের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই লিটন দাস পরপর দুটি চার মারেন। ঠিক পরের বলটি ওয়াইড অব দ্য ক্রিজ থেকে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় লিটনের প্যাড খুঁজে নেয়।
আম্পায়ারও আফগান ফিল্ডারদের জোরালো এলবিডব্লুর আবেদনে সাড়া দেন আঙুল তুলে। লিটন রিভিউ নেওয়ায় রক্ষা। বলটি প্যাডে লাগার আগেই লিটনের ব্যাট ছুঁয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বলটির গতি ছিল ঘণ্টায় ১০১ কিলোমিটারের বেশি। এই গতিতে বলটা ভেতরে এলে সেই মুভমেন্টকে ‘ড্রিফট’ না বলে ‘সুইং’ বলাই শ্রেয়।
কিছুক্ষণ পর মুজিবের যে অফ স্পিনে নাজমুল হোসেন বোল্ড হন, সেটার গতি ঘণ্টায় ১০০.৪ কিলোমিটার। বলটায় পরাস্ত হয়ে হতবুদ্ধি হয়ে কিছুক্ষণ ক্রিজে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে ইন ফর্ম ব্যাটসম্যান। পেসারদের গতিতে ব্যাটসম্যানদের রাতের ঘুম হারাম হওয়ার কথা শুনেছেন নিশ্চয়ই। কিন্তু কখনো কি স্পিনারদের গতি ব্যাটসম্যানদের মনে ভয়ের জন্ম দিয়েছে? মুজিব বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডারে সেই ভয়ের বীজ বুনেছেন, যা এখন ডালপালা মেলতে শুরু করেছে।
শুধু মুজিব নন, রশিদ খান ও মোহাম্মদ নবীর নামের পাশেও ‘ফাস্ট স্পিনার’ লেখা যায়। রশিদের গুগলি কিংবা লেগ স্পিন বুঝতে পারলেও গতির কারণে তা সামলানো কঠিন। নবীর অফ স্পিনও তা–ই। বেশির ভাগ বল স্টাম্প বরাবর। ক্রিজে নতুন এলে এ ধরনের বোলিংয়ের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা সহজ নয়। এই সমস্যার সমাধানও আছে। বাংলাদেশ দলের সাপোর্ট স্টাফের এক সদস্য সেটি ধরিয়ে দিয়েছেন এভাবে, ‘মুজিবকে ভালো খেলতে হবে। পাওয়ারপ্লেতে তাকে উইকেট না দিলে বাকিদের কাজটা সহজ হয়ে যাবে। তখন রশিদ ও নবীকে এত ভয়ংকর মনে হবে না।’
২০২২ সালে এই আফগানদেরই ২-১–এ সিরিজে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই সিরিজে মুজিব ৩ ম্যাচে ২৮ ওভার বল করে উইকেট নিয়েছেন মাত্র ১টি। বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গত বছরের সাফল্যের উদাহরণটা টেনে এনে তিনি বললেন, ‘মুজিবকে ওই সিরিজে আমরা ভালো খেলেছি। কারণ, খেলাটা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে, ঠিক বিপিএলের পর। আর বিপিএলে আমাদের ছেলেরা মুজিবকে নিয়মিত খেলেছে। তাই সিরিজে খেলতে সমস্যা হয়নি। এটা অভ্যাসের ব্যাপার। ওদের বিপক্ষে যত খেলবেন, তত অভ্যস্ত হবেন।’
এই সিরিজটা সেই অভ্যস্ততার মঞ্চ হিসেবেই দেখছে বাংলাদেশ দল। সেপ্টেম্বরের এশিয়া কাপ ও অক্টোবরের বিশ্বকাপে এই স্পিনত্রয়ীর বিপক্ষে আবারও দেখা হবে লিটন-সাকিবদের। দ্বিপক্ষীয় সিরিজের সাময়িক ‘ক্ষতি’ যেন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে ‘লাভে’ পরিণত হয়—বাংলাদেশ দলের ভাবনাটা এখন এমনই।