হাবিবুল বাশারের অন্য ভুবন

‘কেউ এই প্রশ্ন করলে আমি সঙ্গে সঙ্গে বলি, দিল চাহতা হ্যায়’

খেলোয়াড় পরিচয়েই সবাই তাঁদের চেনেন। কিন্তু সেই পরিচয়ের বাইরে তাঁদের অন্য জীবনটা কেমন? সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়দের সঙ্গে এই ঝটপট প্রশ্নোত্তর পর্বে সেটাই জানার চেষ্টা—


আজকের তারকা: হাবিবুল বাশার
জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক, পরে হয়েছেন নির্বাচক, এখন বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের সমন্বয়ক। নিজের সময়ে বাংলাদেশের অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকা ব্যাটসম্যান মনে করা হতো হাবিবুলকে। তাঁর অধিনায়কত্বে প্রথম টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ, জিতেছিল প্রথম ওয়ানডে সিরিজও।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তারেক মাহমুদ

প্রথম আলো :

আপনাকে তো সব সময় ক্রিকেটেই দেখলাম। খেললেন, নির্বাচক হলেন, এখনো ক্রিকেটে আছেন অন্য ভূমিকায়। ক্রিকেট ছাড়া আর কিসে আগ্রহ?

হাবিবুল বাশার: অনেক কিছুতেই। আমি ঘুরতে ভালোবাসি, অ্যাডভেঞ্চার ভালো লাগে। পাহাড়ে উঠতে ভালো লাগে। গান, সিনেমা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, স্বপ্ন দেখা। সবচেয়ে কম ভালোবাসি ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করতে।

আরও পড়ুন

প্রথম আলো :

এই ভালোবাসার কাজগুলো মন ভরে করতে পারেন?

হাবিবুল: পারি না। কারণ, আমার স্ত্রী কিছুটা আমার বিপরীত। আমি যতটা ঘুরতে ভালোবাসি, ও ততটা বাসে না। ধরুন আমি সুন্দরবনে যেতে খুব চাই, তার হয়তো এতটা ভালো লাগে না। সেই সুযোগও নেই যে চাইলেই একা ঘুরতে চলে যাব। পরিবার না নিয়ে গেলে আমারও ভালো লাগে না। পেশাগত কাজে অনেক জায়গায় যেতে হয়। কিন্তু এসব সফরে ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ কম।

প্রথম আলো :

ক্রিকেটার হয়েছেন খেলাটাকে ভালোবেসে। যদি ক্রিকেট না খেলতেন, আপনার ভালোবাসার পেশা কী হতে পারত?

হাবিবুল: এমন কিছু, যেখানে ট্রাভেলিং আছে। দেশ–বিদেশ ঘুরে বেড়ানো যায়। জঙ্গলের প্রতি আমার একটা আকর্ষণ আছে। ফরেস্টার হলে হয়তো খুব ভালো হতো (হাসি)। ঘুরতে আমার খুব পছন্দ। নতুন নতুন জায়গায় যাওয়াটা আমার কাছে অনেক রোমাঞ্চকর। একটা পাহাড়ে ওঠার বা একটা জঙ্গলে ঢোকার যে আনন্দ, সেটা আমি আর কোথাও পাই না।

বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার
প্রথম আলো

প্রথম আলো :

এ পর্যন্ত কয়টা জঙ্গলে ঢুকেছেন, কয়টা পাহাড়ে উঠেছেন?

হাবিবুল: আমার আফ্রিকার সাফারি খুব পছন্দ। যখনই আফ্রিকা গিয়েছি, সাফারিতে গিয়েছি; কিন্তু অনেকটা জু (চিড়িয়াখানা) টাইপের সাফারিতে। আসল সাফারিতে কখনো যেতে পারিনি, এটা অনেক বড় আক্ষেপ। আমার একটা ওয়াইল্ড গ্রিজলি বিয়ার দেখার শখ, যেটা কখনো দেখা হয়নি। একটা ওয়াইল্ড কিং কোবরা দেখার স্বপ্ন আছে। অনেক দেশে গিয়েছি, কিন্তু সেভাবে ঘুরতে যাইনি কখনো।

প্রথম আলো :

তার মানে তো সবচেয়ে বেশি আনন্দ যে কাজটাতে পাবেন বলে ভাবেন, সেটাই এখনো আপনার করা হয়নি?

হাবিবুল: না, হয়নি। সুন্দরবনে গিয়েছি ফ্যামিলি ট্রিপে। গাইডেড ট্যুর ছিল। ওটা ঠিক আমার মনের মতো ট্যুর হয়নি।

আরও পড়ুন

প্রথম আলো :

কার গান বেশি ভালো লাগে?

হাবিবুল: সব শিল্পীরই কিছু না কিছু গান ভালো লাগে। নির্ভর করে মুডের ওপরে। হাঁটতে গেলে, জিম করার সময় বা যখন কনসার্টে যাই তখন রক গান খুব ভালো লাগে। নির্দিষ্ট কোনো প্রিয় শিল্পী নেই। আমি সবার গান শুনি। একসময় একটা ফেবারিট ব্যান্ড দল ছিল আমার, শূন্য। কিন্তু তারা খুব বেশি দিন টিকতে পারেনি।

প্রথম আলো :

নিজে কখনো গানটান গাওয়ার চেষ্টা করেছেন?

হাবিবুল: চেষ্টা করেছি, কিন্তু কেউ কোনো দিন আমাকে এ ব্যাপারে উৎসাহ দেয়নি। সব সময় নিরুৎসাহিত হয়েছি, গান না গাওয়ার জন্য পুরস্কারও পেয়েছি (হাসি)।

প্রথম আলো :

কে দিয়েছে পুরস্কার?

হাবিবুল: বন্ধুরা দিয়েছে। তারা আমাকে বলেছে, ‘প্লিজ তুই গান গাইস না, তোকে এইটা দেব…’, এই আর কি (হাসি)। আমি হলাম ও রকম শিল্পী। ওদের সামনে দু–একবার চেষ্টা করেছি গান গাওয়ার; কিন্তু সুর–তাল উল্টাপাল্টা করে এতটাই খারাপ গেয়েছি যে ওরা আর আমার গান শুনতে চায় না। আমাকে গান গাওয়ার ব্যাপারে সবাই সব সময় নিরুৎসাহিত করে।

প্রথম আলো :

কী ধরনের বই আপনাকে টানে?

হাবিবুল: একটা বয়সে মাসুদ রানা পড়ে অনেক সময় কেটেছে। তবে আমার অলটাইম ফেবারিট শীর্ষেন্দু। শীর্ষেন্দুর কোনো বই পড়ে খারাপ লাগেনি।

আরও পড়ুন

প্রথম আলো :

গল্প–উপন্যাসের বাইরে অন্য বই পড়েন? ইতিহাস, অ্যাডভেঞ্চার বা ভ্রমণকাহিনি…যেহেতু আপনি ঘুরতে পছন্দ করেন?

হাবিবুল: ভ্রমণকাহিনি, শিকারের গল্প—এসব আমাকে টানে। জিম করবেটের বই পড়তে খুব লাগত।

প্রথম আলো :

খেলাধুলা বা ক্রিকেটের বই?

হাবিবুল: ক্রীড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্র কী মনে করবেন জানি না, তবে আমি যখন অধিনায়ক হই, ক্যাপ্টেন্সির ওপর এবং ক্রিকেট নিয়ে বেশ কয়েকটি বই তিনি আমাকে দিয়েছিলেন। আমি সেসব বই খুব একটা পড়িনি। দু–একটি হয়তো পড়েছি বা পড়ার চেষ্টা করেছি। আসলে ক্রিকেটারদের বায়োগ্রাফি বা ক্রিকেট নিয়ে লেখা বইয়ের আমি খুব বড় ফ্যান বা পাঠক নই।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

প্রথম আলোতে খেলা নিয়ে আপনি অনেক কলাম লিখেছেন, অন্য জায়গায়ও লিখেছেন। আপনার কি মনে হয় না, লেখালেখিটাকে সিরিয়াসলি নিলে লেখক হিসেবে খারাপ করতেন না?

হাবিবুল: (হাসি) আমার ইচ্ছা আছে একটা বই লেখার। কারণ, মাথার ভেতর অনেক সময় স্টোরি ঘোরে। রাতে আমার যখন ঘুম আসে না বা এমনিতেও ঘুমানোর আগে আমি মনে মনে কোনো একটা স্টোরি বানাই। ঘটনা সাজাই, নায়ক–নায়িকা সাজাই…এটা আমার একটা অভ্যাস। বলতে পারেন, এগুলো আমার বেড টাইম স্টোরি, নিজের কাছে নিজের স্টোরি।

প্রথম আলো :

তো সেগুলো লিখে ফেললেই তো হয়…

হাবিবুল: না না, লেখালেখি ভিন্ন জগৎ। লেখক হওয়া অনেক বড় ব্যাপার। আমি যে কলাম লিখি, সেগুলো তো সব ক্রিকেট নিয়ে। ক্রিকেটটা আমি ভালো বুঝি, ভালো জানি। কিন্তু স্টোরি দাঁড় করানো ভিন্ন ব্যাপার। সে প্রতিভা মনে হয় না আমার আছে। অত কষ্টে না গিয়ে আমি বরং ভালো একটা বই কিনব, যখন সময় পাব পড়ব। ওটাই আনন্দ।

প্রথম আলো:

আত্মজীবনী লেখারও ইচ্ছা নেই?

হাবিবুল: অনেকেই প্রস্তাব দিয়েছেন। অনেক উৎসাহ দিয়েছেন, আমি চিন্তাও করেছি। কিন্তু ছোটবেলায় কী করেছি, কী খাই, কী পরি—আমার ও রকম আত্মজীবনী লেখার ইচ্ছা নেই। আমার কিছু না বলা গল্প আছে, কিছু অজানা স্টোরি আছে। সেগুলো যদি কোনো দিন লিখতে পারি, তখন আত্মজীবনী লিখব।

প্রথম আলো :

সিনেমা তো দেখেন, কেমন সিনেমা পছন্দ?

হাবিবুল: রোমান্টিক কমেডি। সিনেমা দেখার ক্ষেত্রে আমার শর্ত নায়ক–নায়িকার মিল হতে হবে। স্যাড রোমান্টিক হতে পারবে না। অনেক গ্যাঞ্জাম হবে, অনেক ঝামেলা হবে; তারপর নায়ক–নায়িকার মিল হবে—এটাই আমার সিনেমা।

প্রথম আলো :

সিনেমা দেখার সময় কি কখনো মনে হয়, আপনিই নায়ক? বা আপনি যে গল্পের প্লট সাজান, সেখানে কি নিজেকেই নায়ক হিসেবে দেখেন?

হাবিবুল: হ্যাঁ, অবশ্যই দেখি। আমি যখন গল্পের প্লট সাজাই, সেভাবেই তো সাজাই—নায়ক আমি…হা হা হা।

প্রথম আলো :

কোনো পছন্দের সিনেমা?

হাবিবুল: কেউ এই প্রশ্ন করলে আমি সঙ্গে সঙ্গে বলি, ‘দিল চাহতা হ্যায়’। দারুণ সিনেমা। এটার মধ্যে অনেক কিছু আছে। তিনটা বন্ধু তিন রকম। তিনজনের তিন রকম জীবন। কিন্তু দিনশেষে সবার মিল হয়ে যায় (হাসি)। আমার কাছে মিল হওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটা যত জটিল পরিস্থিতি পার হয়ে হবে, তত ভালো।

আরও পড়ুন