তানজিম-ধাক্কার পর নড়বড়ে শ্রীলঙ্কা থামল ২৫৫ রানে
যেটায় খেলা হবে আর যেগুলোতে খেলা হবে না, ম্যাচের আগে কোনো উইকেটকেই আলাদা করে চেনার উপায় ছিল না। সব উইকেট প্রায় একই রকম সবুজ। স্টাম্প আর সাদা রঙে পপিং ক্রিজের দাগ টানা না থাকলে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সব উইকেট যেন যমজ ভাই!
ম্যাচ শুরুর আগে ধারাভাষ্যকার রাসেল আরনল্ডের পিচ রিপোর্ট উইকেট সম্পর্কে আরেকটু ধারণা দিল। পিচ বেশ শক্ত, ঘাস আছে। চট্টগ্রামের উইকেট অনেকটা সিলেটের মতোই রানপ্রসবা হতে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছিল সাবেক এই লঙ্কান ক্রিকেটারের।
বাংলাদেশ দলের জন্য অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়। চট্টগ্রামে রানের উইকেটই থাকে। তা ছাড়া মাঠ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকেও এটা আগেই জানা হয়ে গেছে যে, এখানে আগে ব্যাট করলে রানটা ৩০০ এর নিচে থাকা অনিরাপদ। পরে ব্যাট করলেও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে বড় রান তাড়ার জন্য।
তবে আগে ব্যাটিং করে স্কোরবোর্ডে বড় রান তোলার সুযোগ পেয়েও সেটা কাজে লাগাতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। দুই ওপেনার আভিস্কা ফার্নান্ডো ও পাতুম নিশাঙ্কার ভালো শুরুর পরও ৪৮.৫ ওভারে তারা অলআউট ২৫৫ রানে।
দুপুরে নাজমুল হোসেন টসে হেরে যাওয়ার পর শ্রীলঙ্কা প্রত্যাশিত সিদ্ধান্তটাই নিয়েছিল। বাংলাদেশকে বোলিংয়ে পাঠিয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন তাদের দুই ওপেনার নিশাঙ্কা ও আভিস্কা। ব্যাটিং উইকেটেও শরীফুল ইসলাম প্রথম ওভারটা খারাপ করেননি। কিন্তু ইনিংসের দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ দিয়ে দিলেন ১২।
তাসকিন তাঁর পরের ওভারটা মেডেন নিলেও শ্রীলঙ্কার ওপেনারদের ব্যাটে শৃঙ্খল পরানো যাচ্ছিল না তখনো। একে উইকেট ব্যাটিং সহায়ক, বল স্বচ্ছন্দে ব্যাটে আসছে, আউটফিল্ডও তীব্র গতিময়। তারওপর শুরুতে শরীফুল, তাসকিন মিলে অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়েরই প্রদর্শনী দেখালেন বেশি। যার সুবিধা নিচ্ছিলেন শ্রীলঙ্কান ওপেনাররা।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে খেলে আসা সর্বশেষ সিরিজে ১৮২, ১৯ ও ১৭৩ রানের তিনটি জুটি গড়া আভিস্কা-নিশাঙ্কা প্রথম ৬ ওভারে তুলে ফেলেন ৪১ রান। শরীফুলের শর্ট বলে আভিস্কার ছক্কায় দলের রান ৫০ হয়ে যায় পরের ওভারেই। দশম ওভারের পঞ্চম বল পর্যন্ত একসঙ্গে থেকে গড়েছেন ৭১ রানের জুটি।
কখনো কাভার দিয়ে, কখনো বোলারের মাথার ওপর দিয়ে মারা ড্রাইভে, কখনোবা হুক-পুলে ইনিংসের অষ্টম ওভার পর্যন্ত বোলারদের শাসিয়েই গেছেন আভিস্কা ও নিশাঙ্কা। অষ্টম ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে এসে প্রথম ও শেষ বলে তানজিম হাসানও দুটি চার খেয়ে যান নিশাঙ্কা ও আভিস্কার ব্যাটে।
তবে দশম ওভারে ওই তানজিমের হাত ধরেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এক ওভার বল করেই যেন তিনি বুঝে গিয়েছিলেন এমন পিচে উইকেট নেওয়ার সূত্রটা। ওভারের পঞ্চম বলটা শরীরের অনেক বাইরে খেলালেন। সেটাতেই চড়াও হতে গিয়ে কট বিহাইন্ড আভিস্কা। প্রথম ধাক্কা খেয়ে নড়বড়ে শ্রীলঙ্কা উইকেট হারিয়েছে তানজিমের পরের দুই ওভারেও। ১২তম ওভারের প্রথম বল নিশাঙ্কা ও ১৪তম ওভারের প্রথম বলে সামারাবিক্রমা ফিরে যান ড্রেসিংরুমে।
নিশাঙ্কার আউটটাকে একটু অদ্ভুতই বলতে হবে। সৌম্য সরকারও অবাক এমন ক্যাচ নিয়ে। সৌম্য ছিলেন গালিতে, কিন্তু নিশাঙ্কার ওই শট থেকে বল যে গালিতেও যেতে পারে, সেটা ভাবাই যে কঠিন ছিল! তানজিমের শর্ট বলে পুল করতে গিয়েছিলেন নিশাঙ্কা। তবে শটটা একটু আগে খেলে ফেলায় বল ব্যাটের নিচের দিকের কানায় লেগে ক্যাচ চলে যায় গালিতে।
তানজিমের তিন ধাক্কার পর নড়বড়ে হয়ে পড়া শ্রীলঙ্কার ইনিংস শুরুর গতিটা আর ফিরে পায়নি। বরং শুরুর এলোমেলো বোলিং থেকে বেরিয়ে এসেছেন শরীফুল, তাসকিনও চোখ রাঙিয়েছেন তাদের। শেষ পর্যন্ত দুজনই নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট। তবে দুর্ভাগ্য তানজিমের। নিজের নবম ওভার বোলিংয়ের সময় পায়ে চোট পেয়ে ওভার অসমাপ্ত রেখেই মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে
দুই স্পিনারের মধ্যে বাঁহাতি তাইজুল ইসলাম একটু বেশি খরুচে হলেও (৮ ওভারে ৫৪/০) অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের বলে নিয়ন্ত্রণ যথেষ্টই ছিল। ১০ ওভারের কোটা পূরণ করে ১ মেডেনসহ ৩৩ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট।
অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসের ৭৫ বলে ৫৯ ও পরে জানিত লিয়ানাগের ৬৯ বলে ৬৭ রানে শ্রীলঙ্কা অলআউট হওয়ার আগ পর্যন্ত করতে পেরেছে ২৫৫ রান। তবে শুরুটা যেরকম হয়েছিল, এই রান নিয়ে তাদের তৃপ্ত হওয়ার কোনোই কারণ নেই। অবশ্য জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের একটা পরিসংখ্যান এখনো পক্ষেই আছে তাদের। এ মাঠে এর আগে প্রথম ইনিংসে ২৫০ এর বেশি রান হওয়া ১০ ম্যাচের ৮টিতেই জিতেছে প্রথমে ব্যাট করা দল।