বিপিএলে পারিশ্রমিক কমানোর প্রস্তাব কার আগ্রহে
ক্রিকেটাররা নিজ থেকে বিপিএলের পারিশ্রমিক কমাতে বলছেন, ব্যাপারটা একটু বিস্ময়করই। এ ধরনের প্রস্তাব সাধারণত আসার কথা ফ্র্যাঞ্চাইজি বা বিসিবির পক্ষে থেকে। সেখানে ক্রিকেটারদের একটি প্রতিনিধিদল কিনা নিজেরাই বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের কাছে গিয়ে বলেছেন, প্রয়োজনে পারিশ্রমিক কিছুটা কমিয়ে হলেও যেন বিপিএলটা ঠিকঠাকমতো হয়!
অথচ বিপিএল যে যথাসময়ে হবে, সেটা বোর্ড সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর জোর দিয়েই বলেছেন ফারুক আহমেদ। অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজিও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ডিসেম্বরের শেষ দিকে শুরু হতে যাওয়া টুর্নামেন্টটির জন্য।
এমন প্রস্তাবে বিপিএলের অনেক ক্রিকেটারের মধ্যে অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ কাজ করছে। তাঁদের প্রশ্ন—সিংহভাগ ক্রিকেটারের মতামত না নিয়ে কার আগ্রহে হঠাৎ করে পারিশ্রমিক কমানোর প্রস্তাব? যেখানে বোর্ড বা ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে বিপিএল নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তার কথা শোনা যাচ্ছে না, সেখানে একদল ক্রিকেটার কেন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিসিবি সভাপতির কাছে এমন প্রস্তাব দিতে গেলেন!
সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাতে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন ও জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বর্তমানে জাতীয় দলের বাইরে থাকা তামিম ইকবালও।
ক্রিকেটারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ, এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এখনো জাতীয় দলের পরিধিতে আছেন, এমন একজন সিনিয়র ক্রিকেটারের উদ্যোগেই বিসিবিকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ওই ক্রিকেটার নাকি খেলোয়াড়দের বলেছেন, এটা তাঁর ‘ব্যক্তিগত চিন্তা’।
গত মঙ্গলবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমে নিজেদের মধ্যে এক আলোচনার পর পরশু সন্ধ্যায় বিসিবি কার্যালয়ে জাতীয় দলের কয়েকজন ক্রিকেটার বিপিএলের পারিশ্রমিক নিয়ে কথা বলেন ফারুক আহমেদের সঙ্গে। তাঁরা বলেছেন, প্রয়োজনে পারিশ্রমিক কিছুটা কমিয়ে হলেও যেন বিপিএল ঠিকঠাকভাবে হয়।
কিন্তু পারিশ্রমিক কমানোর এই মনোভাব সব ক্রিকেটারের নয়। সাধারণ ক্রিকেটাররা এ নিয়ে দ্বিমত তো পোষণ করেনই, অনেকের অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে কথা না বলেই বোর্ডপ্রধানকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা পারিশ্রমিক কমানোর পক্ষে নন। এর পেছনে ক্রিকেটাররাও বিশেষ কারও ব্যক্তিগত স্বার্থের গন্ধ পাচ্ছেন।
গত বিপিএলে রংপুর রাইডার্সে খেলা এক ক্রিকেটারের প্রশ্ন, ‘এ বছর টাকা না বাড়ালে আমার মনে হয় না কেউ আপত্তি করতেন; কিন্তু টাকা কমাতে হবে কেন!’ ফরচুন বরিশালে খেলা আরেক ক্রিকেটারও বিষয়টি মানতে পারছেন না, ‘যাঁরা নিয়মিত জাতীয় দলে খেলছেন, তাঁদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সমস্যা বাইরের ক্রিকেটারদের। তাঁদের জন্য বিপিএল, ডিপিএল তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
খুলনা টাইগার্সের এক ক্রিকেটার বলেন, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি কিন্তু ঠিকই দুই ম্যাচের জন্য এক কোটি টাকা দিয়ে বিদেশি ক্রিকেটার নিয়ে আসবে। আমাদের ক্ষেত্রে তারা বরাবরই হিসাবি।’
পরশু সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করা জাতীয় দলের শীর্ষ কয়েকজন ক্রিকেটার মনে করেন, ক্রিকেট বোর্ড পারিশ্রমিকে হাত দিলে সেটা বেশি কমে যেতে পারে। তখন তাঁদের বড় আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হতে পারে। সে কারণেই তাঁরা বিসিবির প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন। যদিও খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা না করে বিসিবির পারিশ্রমিক কমানোর কথা নয়, বিসিবি সে রকম কোনো চিন্তা করছে বলেও কারও জানা নেই।
ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস বিপিএল ও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। জাতীয় দলের এক ক্রিকেটার বলেছেন, পারিশ্রমিক কমালে শীর্ষ ক্রিকেটাররই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বেশি। তাঁদের পারিশ্রমিক যদি ২০ লাখ টাকা কমে, অন্যদের নাকি কমবে লাখ তিনেক টাকা। গত বিপিএলের ড্রাফটে স্থানীয় ক্রিকেটারদের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক ছিল ৮০ লাখ টাকা ও সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকা।
সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাতে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন ও জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বর্তমানে জাতীয় দলের বাইরে থাকা তামিম ইকবালও। সভায় তামিমের উপস্থিতি নিয়েও অনেক ক্রিকেটারের প্রশ্ন আছে। যদিও কোয়াব সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল বলেছেন, ‘ক্রিকেটারদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকের দিন আমি উপস্থিত ছিলাম। বোর্ডপ্রধানের সঙ্গে দেখা করার দিন আমার ব্যক্তিগত ব্যস্ততা থাকায় তামিম আমাদের অনুরোধে ক্রিকেটারদের সঙ্গে গেছে।’