মার্ক ওয়াহর মতে, শাস্তিটা একদমই নরমসরম হয়ে গেছে। বিরাট কোহলি খুব ভাগ্যবান। মাইকেল ভনের মতামতও তেমনই। এই যুগে আর্থিক জরিমানা খেলোয়াড়দের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও মনে করেন সাবেক এই ইংল্যান্ড অধিনায়ক। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের প্রশ্নও আর্থিক জরিমানা নিয়েই।
বাজে ও প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ থামাতে কোহলির মতো মিলিয়নিয়ার ক্রিকেটারকে আর্থিক জরিমানা ঠিক কতটা কার্যকর—প্রশ্ন গিলক্রিস্টের। শুধু অস্ট্রেলিয়ান ও ইংলিশরাই নন, ভারতের সাবেক ক্রিকেটার রবি শাস্ত্রী ও ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলেও মনে করেন, কোহলি খুব ভাগ্যবান। আরও বড় শাস্তির সম্মুখীন হওয়া থেকে বেঁচে গেছেন। তবে সরাসরি খোঁচা মেরেছেন অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম নাইন নেটওয়ার্কের সাংবাদিক টম মরিস।
মেলবোর্ন টেস্টে গতকাল প্রথম দিনে কোহলি যে অপরাধ করেছেন, তাতে আইসিসি তাঁকে যে শাস্তি দিয়েছে, সেটি বিশ্ব ক্রিকেট ও আইসিসির জন্যই বিব্রতকর বলে মনে করেন মরিস।
ঘটনাটা নিশ্চয়ই এতক্ষণে জানা। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসের ১০ম ওভার শেষে ওপেনার স্যাম কনস্টাসকে ইচ্ছাকৃতভাবে কাঁধে ধাক্বা মারেন কোহলি। এ নিয়ে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয় দুজনের মধ্যে, যা আরেক ওপেনার উসমান খাজা ও মাঠের আম্পায়ারদের হস্তক্ষেপে থামে।
আইসিসির আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, ‘ক্রিকেটে যেকোনো ধরনের শারীরিক সংঘর্ষ নিষিদ্ধ। ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা না বুঝে, সেটা যেভাবেই হোক।’ তাই বেশির ভাগ বিশ্লেষক মনে করেছিলেন, বড় শাস্তিই হতে যাচ্ছে কোহলির। কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে বলেও ফেলেছিলেন, ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট যদি মনে করেন, কোহলি লেভেল টু পর্যায়ের অপরাধ করেছেন, তাহলে ৩ কিংবা ৪টি ডিমেরিট পয়েন্ট পেতে পারেন। ৪ ডিমেরিট পয়েন্ট পেলে এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা হতে পারে, অর্থাৎ সিডনিতে শেষ টেস্টে তাঁকে না–ও দেখা যেতে পারে।
কিন্তু কাল দিনের খেলা শেষে কোহলিকে আচরণবিধির লেভেল ওয়ান পর্যায়ের অপরাধের জন্য ম্যাচ ফির ২০ শতাংশ অর্থ জরিমানা করে আইসিসি। একটি ডিমেরিট পয়েন্ট যোগ করা হয় তাঁর নামের পাশে। ভারতের ক্রিকেটাররা প্রতি টেস্টের জন্য ১৫ লাখ রুপি ম্যাচ ফি পেয়ে থাকেন। ২০ শতাংশ হিসেবে কোহলিকে মেলবোর্ন টেস্টে ৩ লাখ রুপি জরিমানা দিতে হবে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের মতে, শাস্তিটা কড়া হয়নি। চ্যানেল সেভেনকে বলেছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় না শাস্তিটি কড়া হয়েছে। আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে এবং সাধারণত ১৫–২৫ শতাংশ অর্থ জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনাটির বিশালতায় তাকান। সারা দুনিয়া মিলিয়ে বছরের এ দিনটিতেই সবচেয়ে বেশি লোক ক্রিকেট দেখেছে। ভাবুন তো, গ্রেড ম্যাচে এমন কিছু ঘটলে কি হতো? আমার মনে হয় লোকে এখন ভাববে, ব্যাপারটা আর তেমন কিছুই না।’
ফক্স ক্রিকেটে মেলবোর্ন টেস্টের ধারাভাষ্য দেওয়া ভন এই শাস্তি নিয়ে বলেছেন, ‘আমার মতে, বিরাট খুব ভাগ্যবান। যে বিরোধটা হয়েছে, সেটি ব্যক্তি হিসেবে তার জন্য মোটেও ভালো ছিল না। অ্যাডিলেড ওভালে মোহাম্মদ সিরাজ যে শাস্তি পেয়েছে, তাকেও একই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাই আমার মতে, সে আসলে ছাড় পেয়ে গেল।’ অ্যাডিলেড টেস্টে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ট্রাভিস হেডের সঙ্গে মাঠে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের জন্য সিরাজকে একটি ডিমেরিট পয়েন্টসহ তাঁর ম্যাচ ফির ২০ শতাংশ অর্থ জরিমানা করেছিল আইসিসি।
বিরাট যখন এই ঘটনাটা পেছন ফিরে দেখবে, সে ভাববে, যে শাস্তিটা পেয়েছে, সে জন্য সে ভাগ্যবান...মাঠে যে ঘটনা সবার শেষে দেখতে চাই, সেটা হলো শারীরিক সংঘর্ষ। এটা কেউ চায় না। এটা খেলা। কেউ এই সীমানাটা পেরোয় নাভারতের সাবেক কোচ ও ধারাভাষ্যকার রবি শাস্ত্রী
কিন্তু উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের চেয়ে কাঁধে ধাক্কা মারা স্বাভাবিকভাবেই আরও বড় অপরাধ। যেহেতু আইসিসির আচরণবিধিতেই বলা হয়েছে, ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় ক্রিকেটে শারীরিক সংঘর্ষের কোনো স্থান নেই। ফক্স ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ওপেনার মার্ক ওয়াহ তাই বলেছেন, ‘আপনি যে–ই হন, এমন আচরণের কোনো জায়গা নেই। সে খুব খুব ভাগ্যবান, শাস্তিটা একদমই কম হয়েছে...খুব সহজেই সে লেভেল টু পর্যায়ের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হতে পারত। আর্থিক জরিমানাই যদি করা হবে, সেটা ম্যাচ ফির ৭৫ শতাংশ অর্থ হতে পারত। কোনো অবস্থাতেই শারীরিক সংঘর্ষ হতে পারে না। এর জায়গা নেই।’
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ওপেনার গিলক্রিস্টও এ নিয়ে ফক্স ক্রিকেটে বলেছেন, ‘আমার মনে হয় না, এমন খেলোয়াড়দের ওপর আর্থিক জরিমানা কোনো প্রভাব ফেলবে। তারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ আয় করে এবং (শাস্তি) তাতে পরিস্থিতি খুব একটা পাল্টাবে না।’ গিলক্রিস্টও অবাক হয়েছেন, কারণ অ্যাডিলেডে সিরাজ ও হেড সামান্য কথা–কাটাকাটির জন্য যে শাস্তি পেয়েছেন, সেই একই শাস্তি কোহলিও পাওয়ায়।
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার রবি শাস্ত্রীও মনে করেন, কোহলি বেঁচে গেছেন বড় শাস্তি থেকে, ‘বিরাট যখন এই ঘটনাটা পেছন ফিরে দেখবে, সে ভাববে, যে শাস্তিটা পেয়েছে, সে জন্য সে ভাগ্যবান...মাঠে যে ঘটনা সবার শেষে দেখতে চাই, সেটা হলো শারীরিক সংঘর্ষ। এটা কেউ চায় না। এটা খেলা। কেউ এই সীমানাটা পেরোয় না...প্রায় দেড় যুগ হয়ে গেল সে খেলছে, পেছনে ফিরে এ ঘটনায় তাকালে সে গর্ব অনুভব করবে না।’
ভারতের আরেক ধারাভাষ্যকার ভোগলে বলেছেন, ‘সে (কোহলি) ভীষণ ভাগ্যবান। ম্যাচ রেফারি কিছুটা নরমভাবে বিষয়টি দেখেছেন বলে মনে করি। আমি অবশ্য সবচেয়ে বাজে কিছুর শঙ্কায় ছিলাম।’
অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম এসইএন মরিসের উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে। মরিস অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবল এবং ক্রিকেট নিয়ে কাজ করেন। নাইন নেটওয়ার্কের এই প্রধান ফুটবল প্রতিবেদক বলেছেন, ‘কোহলির যে সম্পদ, তাতে ২০ শতাংশ ম্যাচ ফি তার জন্য হাতের ময়লা। আমি বিস্মিত হইনি, তবে হতাশ হয়েছি...আমার মতে, ব্যাপারটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে না পারাটা আমার মনে হয় বিশ্ব ক্রিকেট ও আইসিসির জন্য বিব্রতকর।’