বাংলাদেশের হার না–মানা এক ক্রিকেটার লিখছেন ‘দ্বিতীয় জীবনের’ গল্প
ছকে বাঁধা পথে এগোচ্ছিলেন রাজশাহীর স্পিনার নিহাদুজ্জামান। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। বিসিবির হাই পারফরম্যান্স বিভাগেও ছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটেও ছিলেন নিয়মিত।
বাংলাদেশের যেকোনো তরুণ ক্রিকেটারের ক্রিকেট–যাত্রাটা এ পথেই এগোয়। এরপর দক্ষতা, পরিশ্রম, পারফরম্যান্স ও সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেই পরের ধাপের দুয়ার খোলে।
কিন্তু নিহাদুজ্জামানের যাত্রাটা ২০১৫ সালেই থমকে যায় মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায়। ঢাকায় এইচপি ক্যাম্প শেষে জাতীয় লিগের জন্য রাজশাহী দলের ক্যাম্পে যোগ দিতে গিয়ে সিরাজগঞ্জে নিহাদের বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের। দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন নিহাদ, রক্তক্ষরণ হয় প্রচুর। মাথায় তিনটি জায়গায় ফেটে যায়। তাঁর মাথার পেছন দিকে সেলাই লেগেছে ছয়টি, কপালে দুটি ও বাঁ ভ্রুতে আরও চারটি।
প্রতিশ্রুতিশীল এই বাঁহাতি স্পিনার মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন সেবার। আবার সে বছরই ক্রিকেটে ফিরেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়েনি নিহাদের। ২০১৭ সালে বল লেগে হাত ভেঙে যায় তাঁর।
সে ধাক্কা কাটিয়ে আবার ক্রিকেটে ফিরতে নিহাদের লেগেছে আরও দুই বছর। করোনার বিরতিও তাঁর ফেরার পথে ছিল আরেক বাধা। তত দিনে নিহাদের সঙ্গে ২০১৪ সালের সেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলা লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, নাজমুল হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেনরা জাতীয় দলে নিয়মিত। ইয়াসির আলী, জাকির হাসানও ছিলেন সে দলে। আর নিহাদ একের পর এক অঘটন থেকে ফেরার লড়াই করছিলেন।
গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও এবারের জাতীয় লিগ দিয়ে আবার খেলায় ফেরা এই বাঁহাতি স্পিনার নতুন করে নিজের ক্যারিয়ারের গল্প লিখছেন। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে এবারের বিপিএলে ৫ ম্যাচ খেলে ৮ উইকেট নিয়েছেন, যার মধ্যে ৪টিই নিয়েছেন গতকাল তারকায় ঠাসা ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে। শিশিরভেজা বলে বোলিং করে ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, চতুরঙ্গ ডি সিলভা ও ইফতিখার আহমেদের মতো ব্যাটসম্যানদের উইকেট।
ম্যাচ শেষে কাল নিহাদ নিজের বোলিং নিয়ে তৃপ্তির কথাই শোনালেন, ‘বোলিং ভালো হচ্ছে। কিন্তু নিজে নিজে পরিকল্পনা করেছি; সে অনুযায়ী বোলিং করেছি। কীভাবে কোন অবস্থায় বল করতে হবে, এসব নিয়ে ভেবেছি। ভেজা বলেও অনুশীলন করেছি। যেটা চেষ্টা ছিল, সেটা কাজে দিচ্ছে।’ প্রতিপক্ষ দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যান সাকিব ও ইফতিখারের উইকেট নেওয়ার তৃপ্তির বিষয়ও লুকাননি তিনি, ‘সাকিব ভাই খুবই ভালো ফর্মে ছিল। ইফতিখারও ভালো খেলছিল। আমার ইচ্ছা ছিল ওই দুজনের উইকেট নেওয়ার। শেষ পর্যন্ত নিতে পেরে ভালো লাগছে। তবে সবচেয়ে প্রিয় উইকেট ছিল সাকিব ভাইয়েরটা।’
নিহাদ কথাগুলো বলছিলেন মুখে তৃপ্তির হাসি নিয়ে। আবার ক্রিকেটে ফেরা, পারফরম্যান্স দিয়ে আলোচনায় আসার আনন্দটা যে প্রায় হারিয়েই গিয়েছিল নিহাদের জীবন থেকে! গল্পটা নিহাদের মুখেই শুনুন, ‘আমি খুব ভালো প্ল্যাটফর্মে ছিলাম। ছোটবেলা থেকে, অনূর্ধ্ব-১৫, ১৭, ১৯...বিশ্বকাপও খেলেছি, এইচপিতে ছিলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার জীবনে পরপর কয়েকটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। চোটেও পড়েছি আমি। আমার বাঁ হাত ভেঙে গিয়েছিল। অ্যাকশন পরিবর্তন করতে হয়েছিল। আমি আমার জীবনের খুব বাজে সময় পার করেছি।’
এখন বিপিএল হচ্ছে নিহাদের শূন্য থেকে শুরু করার মঞ্চ, ‘আমার জন্য ফেরার খুব ভালো প্ল্যাটফর্ম এটা। শেষ দুটি বিপিএল গ্যাপ গিয়েছে, সে জন্য আমার জন্য এটা খুবই একটা বড় সুযোগ।’