গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেমিফাইনালে ভারত, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া
মাঠে মুখোমুখি ভারত ও নিউজিল্যান্ড। সেই ম্যাচ ‘দেখতে’ কিনা পাকিস্তান থেকে দুবাইয়ে হাজির অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা দল!
দুবাইয়ে না গিয়ে অবশ্য উপায় ছিল না অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার। কাল বাদে পরশু দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম সেমিফাইনাল। সেই ম্যাচে খেলার জন্য একটু আগেভাগেই তো উপস্থিত থাকা উচিত। তবে সেই সেমিফাইনালটা কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে হবে না। হবে ভারতের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা—যেকোনো একটি দলের। ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচটাই তো নির্ধারণ করবে ভারত-অস্ট্রেলিয়া, না ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সেমিফাইনাল সেটি।
শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল খেলতে আবার পাকিস্তানের ফ্লাইট ধরতে হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৪৪ রানে হারিয়ে ভারত যে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। যার অর্থ ৪ মার্চ দুবাইয়ে প্রথম সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলবে রোহিত শর্মার দল।
আবারও টসে হেরে ব্যাটিং পাওয়া ভারত করেছিল ৯ উইকেটে ২৪৯ রান। রান তাড়ায় ৪৫.৩ ওভারে নিউজিল্যান্ড অলআউট ২০৫ রানে। ভারতীয় স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী নিয়েছেন ৫ উইকেট। রান তাড়ায় নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন করেছেন সর্বোচ্চ ৮১ রান।
ভারতের শুরুটা ভালো ছিল না। ৭ ওভারের মধ্যেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলে দলটি। সপ্তম ওভারে বিরাট কোহলি যখন গ্লেন ফিলিপসের অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ হয়ে ফিরলেন, ভারতের স্কোর ৩ উইকেটে ৩০।
ইতিহাসের ২২তম খেলোয়াড় হিসেবে ৩০০তম ওয়ানডে খেলতে নামা কোহলি ম্যাট হেনরির করা বলটিতে স্লাশ করে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে সীমানাছাড়া করতে গিয়েছিলেন। অন্য কোনো ফিল্ডার হলে নিশ্চিত চারই হতো। কিন্তু ফিলিপস যে ‘সুপারম্যান’। দুর্দান্ত সব ক্যাচ নেওয়া যাঁর অভ্যাস, সেই ফিলিপস পুরো শরীরটাকে ডানে ভাসিয়ে ডান হাতটা বাড়িয়ে মুঠোবন্দী করে ফেললেন বলটিকে। ১৪ বলে ১১ রান করা কোহলির যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না! পরে রবীন্দ্র জাদেজাকে ফেরাতে একই জায়গায় প্রায় একইভাবে আরেকটি দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছেন কেইন উইলিয়ামসন।
কোহলিকে ফেরানোর আগেই শুবমান গিলকে এলবিডব্লু করে নিউজিল্যান্ডকে প্রথম উইকেট এনে দেন হেনরি। ১৫ রানে প্রথম উইকেট হারানো ভারত ২২ রানে হারিয়ে ফেলে অধিনায়ক রোহিত শর্মাকেও। এরপর সপ্তম ওভারে গেলেন কোহলি। ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের পর ওয়ানডেতে আজই সবচেয়ে কম ওভারের মধ্যে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারাল ভারত। ২০১৯ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে ৩.১ ওভারে মধ্যে ভারতের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে ফেরানো দলটির নামও ছিল নিউজিল্যান্ড। সেই ম্যাচটি জিতে ফাইনালে উঠেছিল কিউইরা।
এমন বাজে অবস্থা থেকে ভারত যে শেষ পর্যন্ত আড়াই শ ছুঁই ছুঁই স্কোর গড়ল, তাতে বড় অবদান শ্রেয়াস আইয়ার, অক্ষর প্যাটেল ও হার্দিক পান্ডিয়ার। চারে নামা আইয়ার অক্ষরকে নিয়ে প্রথমে শুরু করেন ইনিংস মেরামতের কাজ। চতুর্থ উইকেটে ২২.৪ ওভারে ৯৮ রানের জুটি গড়েন দুজন। ৬১ বলে ৪২ রান করে অক্ষরের বিদায়ের পর লোকেশ রাহুলকে নিয়ে ৪৪ রানের জুটি গড়েন। আইয়ার ফেরেন ৩৭তম ওভারে দলকে ১৭২ রানে রেখে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে। ৯৮ বলে ৭৯ রান করা আইয়ার টানা দ্বিতীয় ফিফটি পেলেন।
ভারতের ইনিংসের পরের গল্পটা পান্ডিয়ার। আইয়ারের মতোই ৪ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো ইনিংসে ৪৫ বলে ৪৫ রান করেছেন এই অলরাউন্ডার। পান্ডিয়াকে ফিরিয়ে চতুর্থ উইকেট পাওয়া কিউই পেসার হেনরি পরে মোহাম্মদ শামির উইকেট নিয়ে ভারতকে একটি ‘প্রথম’ উপহার দিয়েছেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ২৭ বছরের ইতিহাসে ভারতের বিপক্ষে এই প্রথম কোনো বোলার ৫ উইকেট পেলেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ৫০ ওভারে ২৪৯/৯ (আইয়ার ৭৯, পান্ডিয়া ৪৫, অক্ষর ৪২, রাহুল ২৩; হেনরি ৫/৪২, ১/৩১ জেমিসন, ১/৩১ রবীন্দ্র।)। নিউজিল্যান্ড: ৪৫.৩ ওভারে ২০৫ (উইলিয়ামসন ৮১, স্যান্টনার ২৮, ইয়াং ২২, মিচেল ১৭; চক্রবর্তী ৫/৪২, কুলদীপ ২/৫৬)। ফল: ভারত ৪৪ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: বরুণ চক্রবর্তী।।