রাহুলের বিতর্কিত আউট: মাঞ্জরেকার বললেন ‘প্রতারণা’, লেম্যানের চোখে ‘কৃপণতা’
লোকেশ রাহুল ভালোই খেলছিলেন। যশস্বী জয়সওয়াল, দেবদূত পাড়িক্কাল ও বিরাট কোহলির উইকেট গেলেও পার্থের বাড়তি বাউন্সের উইকেটে অস্ট্রেলীয় পেসারদের ভালোই সামলে নিচ্ছিলেন।
কিন্তু ২৩তম ওভারে মিচেল স্টার্কের অ্যাঙ্গেলে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট ছুঁইয়ে আউট হন রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে পার্থ টেস্টে ওপেন করতে নামা রাহুল। অস্ট্রেলিয়ানদের কট বিহাইন্ডের আবেদনে আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবরো প্রথমে সাড়া না দিলে অধিনায়ক প্যাট কামিন্স রিভিউ নেন। রিভিউয়ে টিভি আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ রাহুলকে আউট দেন।
৭৪ বল খেলে ২৬ রান করা রাহুলকে আউট দেওয়ার ক্ষেত্রে ইলিংওয়ার্থ মাত্র দুটি ফ্রেম ও স্নিকোমিটারের স্পাইক দেখেছেন। জায়ান্ট স্ক্রিনে যা দেখে রাহুলকে বেশ অবাকই হতে দেখা গেছে। তাঁর দাবি, স্নিকোমিটারের স্পাইকটি ছিল ব্যাট–প্যাড সংঘর্ষের।
স্টার্কের বলে ডিফেন্সিভ শট খেলার সময় ব্যাটের সঙ্গে বলের কোনো সংযোগ হয়নি বলে মনে করেন রাহুল। স্বাভাবিকভাবেই রাহুলকে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়ে মাঠ ছাড়তে দেখা যায়। এদিকে আম্পায়ারিং ও প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার না দেখে হতাশ হয়েছেন ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার ও বিশ্লেষকেরা।
স্টার স্পোর্টসে সঞ্জয় মাঞ্জরেকার যেমন বলছিলেন, ‘প্রথমত টিভি আম্পায়ার যা দেখিয়েছেন, তাতে আমি খুবই হতাশ। তাঁর আরও কিছু প্রমাণ দেখানো উচিত ছিল। মাত্র দুটি অ্যাঙ্গেল দেখেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আরও গভীর পর্যবেক্ষণ দরকার ছিল। খালি চোখে দেখে মনে হয়েছে বল প্যাডে লেগেছে। অন্য সবকিছুর জন্য আপনার প্রযুক্তির ব্যবহার দরকার, এ ক্ষেত্রে যেমন স্নিকো।’
পরে মাঞ্জরেকার যোগ করেন, ‘যদি বল ব্যাটে লেগে থাকে, তাহলে স্নিকোমিটারে আগেই স্পাইক দেখানোর কথা। চোখে দেখতে পাচ্ছি, বল লেগেছে প্যাডে। যদি স্নিকোমিটারে স্পাইক দেখায়, তাহলে সেটি ব্যাট প্যাডে লাগার শব্দ থেকে এসেছে। যদি দুটি স্পাইক দেখায়, তাহলে আপনি বলতে পারেন, বল প্রথমে ব্যাটে লেগেছে, পরে ব্যাট লেগেছে প্যাডে। এ ক্ষেত্রে টিভি আম্পায়ারের প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল খুবই নিচু মানের। তাঁর বলা উচিত, তিনি সিদ্ধান্তটা ঠিক নেননি।’
ভারতের সাবেক এই ব্যাটসম্যান পুরো বিষয়টিকে একরকম প্রতারণাই বলছেন। তাঁর মুখেই শুনুন, ‘আমি অন-ফিল্ড আম্পায়ারকে দোষ দিচ্ছি না। রাহুলের জন্য আপনার খারাপ লাগার কথা। কারণ, সে এই ইনিংসে অনেক পরিশ্রম করেছে। মুহূর্তটা ম্যাচের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং ব্যক্তিগতভাবে রাহুলের জন্যও…বিশেষ করে তাঁর ক্যারিয়ার ও ভারতের কথা যদি চিন্তা করেন, তাহলে এটি বিরাট ব্যাপার ছিল। বিষয়টি একরকম প্রতারণা।’
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার ও প্রধান কোচ ড্যারেন লেম্যান কড়া সমালোচনা করেছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার। ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিরিজে সব ধরনের প্রযুক্তি না থাকা নিয়ে এবিসি স্পোর্টসে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
ক্রিকেট বিশ্বের দুই ধনী বোর্ডের এত টাকা থাকার পরও হটস্পট প্রযুক্তি না থাকা নিয়ে তাঁর কথা ছিল এমন, ‘সিএ–র (ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া) উচিত ছিল হটস্পট প্রযুক্তির জন্য পয়সা খরচ করা। তাহলে তো এই সমস্যা হতো না। আপনার হট স্পট থাকতে হবে, খরচ নিয়ে চিন্তা করলে হবে না। সম্প্রচারক, টিভি ও রেডিও—ওরা যথেষ্ট টাকা খরচ করে সম্প্রচার–স্বত্ব কিনে নিয়েছে। আপনার কাছে সেই টাকা আছে। আপনি বড় দর্শক পাচ্ছেন, বড় দুটি দেশ খেলছে, টাকা দিচ্ছে, তাহলে সমাধান করুন এবং সঠিক সিদ্ধান্তটা নিন।’
আম্পায়ারের এমন ভুল দুই দলের সিরিজের আরও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ঘটলে কী হতে পারে, সেটার একটা ধারণাও দিয়েছেন লেম্যান। তাঁর যুক্তি, ‘মনে করেন এই ম্যাচটা সিরিজের পঞ্চম টেস্ট, সিডনিতে খেলা হচ্ছে। দুই দলই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের জন্য খেলছে। তখন এমন একটা ঘটনা ঘটল আর আপনার কাছে হট স্পট নেই।’
বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাছে ব্যাখ্যাও চেয়েছেন তিনি, ‘যদি খরচের ব্যাপার থাকে, তাহলে তাদের বলা উচিত যে খরচের কারণে হট স্পট রাখা হয়নি। এটা হতেই পারে। কারণ, টাকা হয়তো তৃণমূল ক্রিকেটে যাচ্ছে, মেয়েদের ক্রিকেটের উন্নতিতে যাচ্ছে। তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু তাঁরা যদি টাকা বাঁচানোর জন্যই এ কাজটা করে থাকে, তাহলে বিষয়টি ঠিক নয়।’