কনস্টাসকে নিয়ে চমকালে পন্টিং–লসনরা আপনার দলে নেই
মেলবোর্ন টেস্টে আজ প্রথম দিনে স্যাম কনস্টাসের ব্যাটিং দেখেছেন? ১৯ বছর বয়সী তরুণের অভিষেকে এমন ব্যাটিং দেখে কি বিস্মিত? যদি সেটাই হয়, রিকি পন্টিং এবং জিওফ লসন তাহলে আপনার দলে পড়েন না।
কেন, সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে কনস্টাসের ইনিংসটি একটু বলতে হয়। আন্তর্জাতিক অভিষেকে তাঁর খেলা প্রথম ১৮টি বলই ছিল যশপ্রীত বুমরার। পেয়েছেন মাত্র ২ রান। কিন্তু ইনিংসটি শেষ হয়েছে ৬৫ বলে ৬০ রানে আউট হয়ে। যেখানে আছে বুমরাকে র্যাম্প ও স্কুপে মারা চার-ছক্কা, যেখানে আছে তাঁর এক ওভার থেকে ১৮ রান তুলে নেওয়ার ‘মাস্তানি’—টেস্টে বুমরার একটি ওভার থেকে কেউ কখনোই এত রান নিতে পারেনি। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে আজকের আগ পর্যন্ত কেউ তাঁকে ছক্কাও মারতে পারেনি। সব মিলিয়ে বুমরার ৩৩ বলে কনস্টাস তুলেছেন ৩৪।
লসন ও পন্টিংয়ের প্রসঙ্গে ফেরা যাক।
কনস্টাসকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার ও কোচ লসনের একটি কলাম গত শনিবার ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ এ প্রকাশিত হয়। লসন সেখানে লিখেছেন, ‘কিছু প্রতিভা নিজেরাই নিজেদের পথ বের করে নেয়। তাদের শীর্ষে উঠে আসার জন্য অর্ন্তদৃষ্টিপূর্ণ নির্বাচন-প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয় না।’ লসন এ প্রসঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান চার্লস ব্যানারম্যান ও কনস্টাসকে একই চোখে দেখেছেন। ব্যাটিং দুই ধাঁচের হলেও তাঁরা দুজনেই বিশেষজ্ঞ ওপেনার। কনস্টাসকে নিয়ে লসন একটি ঘটনার কথা বলেছেন, ‘২০২৩ সালে ইংল্যান্ডে অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সফর শেষে সহকারী কোচ ড্যান ক্রিস্টিয়ানের সঙ্গে দেখা হয়েছিল (তখন আমি নিউ সাউথ ওয়েলসের নির্বাচক)। সে বলেছিল “কনস্টাস ছেলেটার বয়স ১৭ বছর, কিন্তু শিল্ড দলে নিয়ে ছেড়ে দিন। সে খুব খুব ভালো করবে!’’’
লসন এই ঘটনা বলার আগেই উল্লেখ করেছেন, মৌসুমের শুরুতে শেফিল্ড শিল্ডে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেন কনস্টাস। অর্থাৎ ক্রিস্টিয়ানের সেই অনুরোধ রেখেছিলেন লসন। শুধু ক্রিস্টিয়ান নয়, অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ অ্যান্থনি ক্লার্কও কনস্টাসকে নিয়ে বলেছিলেন, এই ছেলেটা ‘ওয়ান অব দ্য স্পেশাল ওয়ানস।’
লসন কনস্টাসকে নিয়ে স্পষ্টভাবে লিখেছেন, ‘কনস্টাস খেলাটা জানে। খেলাটিতে সে সহজাত, যেটা এত কাঁচা বয়সে কারও মধ্যে খুব বিরল; যেন তরুণ কাঁধের ওপর একটা পাকা মাথা, যা যেকোনো দারুণ বোলিংয়ের বিপক্ষে মানসিক লড়াই চালিয়ে যায়।’ কনস্টাস কেন টেস্ট খেলতে প্রস্তুত—লসন সে ব্যাখ্যায় তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার গল্পটাও বলেছেন। সেটি ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিউ সাউথ ওয়েলসের সর্বশেষ শিল্ড ম্যাচে।
লসনের ভাষায়, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার পেসার ল্যান্স মরিস এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে দ্রুততম বোলার। টেস্ট দলে ডাক পাওয়ার অপেক্ষায়। সেদিন বিকেলের সেশনে সিডনির আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গিয়েছিল। কনস্টাস তাঁর ওপেনিং সতীর্থকে নিয়ে ক্রিজে নামার সময় এসসিজির ফ্লাড লাইটও জ্বালানো হয়। পেস বোলিংয়ের জন্য একদম আদর্শ কন্ডিশন।
কনস্টাস কিছু বলে বিট হওয়া এবং ছাড়ার পর ‘গ্রেগ চ্যাপেলের ক্লাসে কাভার ড্রাইভ খেললেন, তারপর ব্যাক ফুট ড্রাইভ, ফ্রন্ট ফুট ড্রাইভ; সবই টাইমিং এবং প্লেসমেন্টে। এসব চলল আম্পায়ার দিনের খেলা শেষ ঘোষণার আগ পর্যন্ত। পরের দিন সকালে ৮৮ রানে অফ স্টাম্পের বাইরে ভালো লেংথের ১৫০ কিলোমিটার গতির বলে রিভার্স র্যাম্প খেলে কোচ গ্রেগ শেফার্ডকে ক্রোধে দিশেহারা বানিয়ে দেয়। কিন্তু (আগের দিন) সেই মেঘে ঢাকা বিকেলে মরিসের জ্বালানো আলোয় আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম এই কিশোর ছেলেটি বড় ম্যাচের জন্য তৈরি—এখনই।’
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক পন্টিং নিজেই কনস্টাসের ভক্ত। গত মাসে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অস্ট্রেলিয়া সফর শুরুর আগে পন্টিং প্রত্যাশা করেছিলেন কনস্টাসকে টেস্ট স্কোয়াডে ডাকা হবে। কিন্তু তখন সুযোগ পেয়ে যান নাথান ম্যাকসুয়েনি। পন্টিং হতাশ না হলেও অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘এসইএন’কে বলেছিলেন, ‘বছরের প্রথম শিল্ড ম্যাচে দুটি সেঞ্চুরির পর তার বিষয়ে অনেকেই জিজ্ঞেস করেছে। ভেবেছিলাম তাকে টেস্ট দলে নেওয়া হবে। কিন্তু পরে আরও গভীরভাবে ভেবে দেখলাম, গোটা অস্ট্রেলিয়া জুড়ে তার অভিজ্ঞতা এখনো তেমন হয়নি। ১২টি মাস সময় দেওয়া হোক, আরেকটু অভিজ্ঞ হোক। তার প্রতিভার কমতি নেই। সে ১৮ মাসের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওপেন করবে।’
পন্টিংয়ের এই বক্তব্য এসইএন-এ প্রকাশিত হয়েছিল গত ১৩ নভেম্বর। ১৮ মাস নয়, তাঁর কথা বলতে সময় লাগল মাত্র দেড় মাস!
মেলবোর্নে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের আত্মজীবনী ‘দ্য শোম্যান’ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানেও কনস্টাসের প্রসঙ্গে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন পন্টিং। ছেলেটির আত্মবিশ্বাসে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছিলেন। পন্টিং তখন বলেছিলেন আইপিএল নিলামে ছেলেটির ওপর চোখ রাখতে হবে, সেটি তাঁর পাঞ্জাব কিংসের কোচ হওয়ার আগে।