চাপ সরানোর দায়িত্বটা সাকিবের
ভারত-পাকিস্তান তো ফেবারিটই। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান—সবার জন্যই এবারের এশিয়া কাপটা দারুণ এক মঞ্চ হবে। ফরম্যাটটা যেভাবে সাজানো, সেটাই মূলত সব দলের জন্য এবারের টুর্নামেন্টটাকে রোমাঞ্চকর করে তুলছে। সামনে যেহেতু বিশ্বকাপের মতো আরও একটি বড় আসর, সব দলই চাইবে এশিয়া কাপে ভালো খেলে সেখানে যেতে।
তার আগে এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে ভালো করার ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর বাংলাদেশ এমন এক গ্রুপে পড়েছে, শুরুর আগে কাউকেই উল্লেখযোগ্য ফেবারিট বলা কঠিন। কেউই বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকবে না। সবার ওপরই এক ধরনের চাপ থাকবে। শ্রীলঙ্কা যেহেতু স্বাগতিক, তাদের ওপর চাপ থাকবে। আফগানিস্তানও নিজেদের প্রমাণ করতে চাইবে। আর বাংলাদেশ যেহেতু ওয়ানডে সংস্করণের এশিয়া কাপে অতীতে বেশ ভালো করেছে, তাদের ওপরও প্রত্যাশা মেটানোর চাপ থাকবে।
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচে আসি, দুই দলই এবারের এশিয়া কাপে তাদের সেরা দলটা পাচ্ছে না। শ্রীলঙ্কা তো তাদের মূল বোলারদের কাউকেই পাচ্ছে না। স্পিন আক্রমণের প্রাণভোমরা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও পেস আক্রমণের তিনি চেনা মুখ দিলশান মাদুশঙ্কা, দুষ্মন্ত চামিরা ও লাহিরু কুমারা—সবাই চোটে। সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কা আজ খেলতে নামবে একদমই পঙ্গু বোলিং আক্রমণ নিয়ে। বাংলাদেশও চোটের কারণে ইবাদত হোসেনকে পাচ্ছে না। অসুস্থতায় শেষ মুহূর্তে বাদ পড়লেন লিটন দাসও; যা বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডারকে অনেকটাই অনভিজ্ঞ করে তুলবে।
সেখানে বাংলাদেশ দল কয়েকজন প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড়কে সুযোগ করে দেবে। কিন্তু ফর্ম তাঁদের পক্ষে নেই। মোহাম্মদ নাঈমের কথাই যদি বলি, হয়তো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রান করেছেন, কিন্তু জাতীয় দলে ফিরে এখনো সেই অর্থে ভালো করেননি। নাঈমের সঙ্গে তানজিদ হাসানেরই অভিষেক হওয়ার কথা। এত বড় মঞ্চে নিজের প্রথম ম্যাচে তিনি কেমন করেন, তা দেখার বিষয়। সাকিব ও মুশফিকের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। বাংলাদেশকে এশিয়া কাপের পরের ধাপে যেতে হবে ব্যাটিংয়ের সামর্থ্যটা প্রমাণ করেই। কারণ, আমি মনে করি বোলিং আক্রমণটা বাংলাদেশের বড় শক্তি। পেস ও স্পিনের যে সমন্বয় দলে আছে, তা কার্যকরী হয়ে উঠলে দারুণ হবে।
ম্যাচটায় যদি আমরা টসে জিততে পারি, তাহলে আমাদের রান তাড়া করা উচিত। ওদের বোলিং আক্রমণটাকে আমি অনভিজ্ঞই বলব। আমাদের ব্যাটসম্যানরা সে সুযোগটা নিতে পারেন। যেহেতু আমাদের বোলিং শক্তিটা ভালো, শ্রীলঙ্কাকে অল্প রানে বেঁধে ফেলতে পারলে তা আমাদের জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে নেবে। শ্রীলঙ্কার মহীশ তিকশানা ও মাতিশা পাতিরানা ছাড়া বাকি যে বোলাররা আছেন, তাঁরা এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিশ্রুতিশীল নন।
বাংলাদেশের বোলিং সমন্বয়টা কেমন হয়, সেটাও দেখতে চাইব। আমার ধারণা, সাকিব সঙ্গে দুজন স্পিনার নিয়ে খেলবেন। শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ে বাঁহাতির সংখ্যা বেশি থাকলে হয়তো মেহেদী হাসান মিরাজ ও শেখ মেহেদী হাসানের সুযোগ হতে পারে। আমার ধারণা, মেহেদীকে টপ অর্ডারে খেলিয়ে ব্যাটিং অর্ডারটা লম্বা করতে পারে বাংলাদেশ। আর সঙ্গে তিনজন পেসার—তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদের সঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান থাকতে পারেন। শরীফুল ইসলামও খারাপ নন। উইকেট নেওয়ার সামর্থ্য আছে তাঁরও। তবে একই বোলিং আক্রমণে দুজন বাঁহাতি পেসার খেলার সম্ভাবনা কম।
সাকিব আল হাসানের অধিনায়কত্বটা এই টুর্নামেন্টে খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। কারণ, অনেক তরুণ ক্রিকেটার খেলবেন সাকিবের অধীনে। তাঁদের অনুপ্রাণিত করার ক্ষেত্রে সাকিবকে মুনশিয়ানা দেখাতে হবে। এখানে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কথাও বলব। প্রথম ম্যাচটায় খেলোয়াড়েরা প্রচণ্ড মানসিক চাপে থাকবেন। সে চাপটা সরাতে হবে কোচ ও অধিনায়ককে। আত্মবিশ্বাসটা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে তাঁদেরই।
খেলাটা যে মাঠে হবে, সেই পাল্লেকেলেতে ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের খেলা দেখেছিলাম। আজ অনেক পাঠকের মতো খেলাটা দেখব টিভিতে। সবার মতো আমিও এশিয়া কাপে বাংলাদেশের দারুণ এক শুরুর আশায় আছি।