আশরাফুলের যা চট্টগ্রামে, হেডের তা ব্রিসবেনে

মোহাম্মদ আশরাফুল ও ট্রাভিস হেড

চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে এখন আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয় না। বিপিএলও নয়। এখন চট্টগ্রামে ক্রিকেট মানেই শহরের একপ্রান্তে অবস্থিত জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে হারিয়ে যাওয়ার আগে এমএ আজিজ স্টেডিয়াম বাংলাদেশকে দিয়েছে আনন্দ–বেদনায় মোড়ানো নানা মুহূর্ত। যেমন টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম জয়টা এসেছিল এ মাঠেই।

এই এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ভালো–মন্দ দুই ধরনের স্মৃতি আছে মোহাম্মদ আশরাফুলেরও। বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রথম বড় তারকা ও সাবেক অধিনায়কের ‘এম এ আজিজ–পর্ব’ আজ ব্রিসবেনের গ্যাবায় মনে করিয়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড। দুজনই ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যরকম এক পাতায় একসঙ্গে আছেন।

তো, কী এমন কারণে আশরাফুল–হেড একসঙ্গে মিলে গেলেন? ভারতের বিপক্ষে বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফির তৃতীয় টেস্টে আজ সেঞ্চুরি করেছেন হেড। সেঞ্চুরি তিনি আগের টেস্টেও করেছেন, তবে এই সেঞ্চুরির মাহাত্ম্য প্রতিপক্ষে নয়, ভেন্যুতে। যে গ্যাবায় আজ হেড ব্যাটের হাতলে হেলমেট ঝুলিয়ে সেঞ্চুরি উদ্‌যাপন করলেন, সে একই মাঠ থেকে আগের দুই টেস্ট ইনিংসে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। তা–ও এ বছরই।

জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্রিসবেন টেস্টের দুই ইনিংসেই শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন হেড। দুটিতেই প্রথম বলে। বছরের শেষ মাসে এসে সেই ব্রিসবেনেই সেঞ্চুরি করলেন হেড। এক মাঠে একই বছরে টানা দুটি শূন্য, এরপর সেঞ্চুরি—এ জায়গাতেই আশরাফুলকে ফিরিয়ে এনেছেন হেড।

আরও পড়ুন

২০ বছর আগে হেডের মতো এভাবেই বেদনার ভূমিকে আনন্দে রূপ দিয়েছিলেন আশরাফুল। চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ২০০৪ সালের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ইনিংসেই শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন এই ডানহাতি। প্রথম ইনিংসে প্রথম বলেই, দ্বিতীয় ইনিংসে পঞ্চম বলে।

এর মাস দুয়েক পরই একই মাঠ আশরাফুলের জন্য আনন্দ–কাব্যের মঞ্চ। ১৭ ডিসেম্বর শুরু ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে আশরাফুল খেলেন ১৯৪ বলে ১৫৮ রানের অপরাজিত ইনিংস, যেটিকে এখনো বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস বিবেচনা করা হয়।  

চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে সেদিন আনন্দে ভেসেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল
ফাইল ছবি: এএফপি

এক বছরের মধ্যে একই মাঠে দুটি শূন্য এবং একটি সেঞ্চুরির কীর্তিতে আশরাফুল অবশ্য প্রথম নন। ওই ২০০৪ সালেই জ্যামাইকার কিংস্টনে একই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের রামনরেশ সারওয়ান। কাকতালীভাবে সেই ঘটনায় বাংলাদেশও আছে। সে বছরের মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুই ইনিংসে ১৫ ও ১০ বল খেলেও কোনো রান করতে পারেননি সারওয়ান। জুনে এসে একই মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে সারওয়ান খেলেন ২৬১ রানের অপরাজিত ইনিংস।

দুই শূন্যর পর সেঞ্চুরির প্রথম ঘটনাটি অবশ্য বেশ পুরোনো। ১৯৫৮ সালে পোর্ট অব স্পেনে যা করেছিলেন ওয়াজির মোহাম্মদ। সেবার ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে গিয়ে ৫টি টেস্ট খেলেছিল পাকিস্তান। পোর্ট অব স্পেনে সিরিজের প্রথম ম্যাচের দুই ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়া ওয়াজির একই মাঠে হওয়া পঞ্চম টেস্টে খেলেছিলেন ১৮৯ রানের ইনিংস।

ওই পোর্ট অব স্পেনই ১৯৭৪ সালে দুই শূন্য ও সেঞ্চুরির সঙ্গে দেখা হয়েছিল অলউইন কালিচরনের। তবে উল্টোভাবে। সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ১৫৮ রান, কিন্তু একই মাঠে পঞ্চম টেস্টের দুই ইনিংসে ফিরেছিলেন খালি হাতে।

এই তালিকায় কিছুটা ব্যতিক্রম মারভান আতাপাত্তু। শ্রীলঙ্কার এই ব্যাটসম্যান ২০০১ সালে কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব (এসএসসি) মাঠে খেলেছিলেন মোট পাঁচ ম্যাচ। এর মধ্যে প্রথমটির দুই ইনিংসে আউট হয়েছিলেন শূন্য রানে (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে), এর পরের টেস্টেই ভারতের বিপক্ষে খেলেন ১০৮ রানের ইনিংস। এটুকুতে থামেননি। ভারত সিরিজের পর একই মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নেমেও আতাপাত্তুর ব্যাটে সেঞ্চুরি, যা শেষ পর্যন্ত ২০১ রান পর্যন্ত গিয়ে থেমেছে। সে দিন ১৫০ রান করা মাহেলা জয়াবর্ধনে ও আতাপাত্তুর স্বেচ্ছায় মাঠ ছেড়ে যাওয়া টেস্ট ইতিহাসেরই প্রথম রিটায়ার্ড আউট।

২০০১ থেকে ২০০৪—এই তিন বছরের মধ্যেই একই মাঠে দুই শূন্য ও সেঞ্চুরির করা ৩ ব্যাটসম্যান দেখে ফেলেছিল টেস্ট ক্রিকেট। এরপর লম্বা বিরতি। ২০ বছর পর আজ ব্রিসবেনে যুক্ত হলেন নতুন একজন—ট্রাভিস হেড।

আরও পড়ুন