রাঁচি টেস্ট: ইংল্যান্ডের লড়াই ছাপিয়ে গিল-জুরেলে সিরিজ ভারতের
এমন পিচে যেকোনো কিছু সম্ভব—গতকাল তৃতীয় দিনের খেলা শেষে নিজেদের আশার কথা শুনিয়েছিলেন ইংল্যান্ড অফ স্পিনার শোয়েব বশির। রাঁচিতে বশিররা লড়াই করেছেন ঠিকই, কিন্তু ভারতের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেননি। ১৯২ রানের লক্ষ্যে গতকালই ৪০ রান তুলে ফেলা ভারত আজ মাঝপথে হোঁচট খেয়েছিল ৩৬ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে। কিন্তু দুই তরুণ শুবমান গিল ও ধ্রুব জুরেলের অবিচ্ছিন্ন ৭২ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দ্বিতীয় সেশনেই ৫ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে ভারত। ধর্মশালায় শেষ ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জয়ও নিশ্চিত হয়েছে তাদের, এখন তারা এগিয়ে ৩-১ ব্যবধানে। কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও অধিনায়ক বেন স্টোকস জুটির যুগে এই প্রথম সিরিজ হারল ইংল্যান্ড।
হায়দরাবাদে প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে পড়েও যেমন ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতেছিল ইংল্যান্ড, রাঁচিতে সেভাবেই জিতল ভারত। তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ২৩ বছর বয়সী জুরেল। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের লিড কমিয়ে আনার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও পা হড়কাতে দেননি তিনি স্বাগতিকদের। ইংল্যান্ডের অনভিজ্ঞ স্পিন আক্রমণ চেষ্টা করেছে দারুণ, তবে ‘অসম্ভব’ কিছু ঘটাতে পারেনি।
গতকাল যেখানে শেষ করেছিলেন দুই অপরাজিত ওপেনার রোহিত শর্মা ও যশস্বী জয়সোয়াল, আজ শুরু করেন সেখান থেকেই। সকালে পিচে তেমন কিছু ছিল না, দিনের প্রথম ৯ ওভারেই ওঠে ৪৩ রান। ব্রেকথ্রুর খোঁজে বেন স্টোকস আনেন জো রুটকে, ৮৪ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙেন তিনিই। রুটের ঝুলিয়ে দেওয়া বলে এক্সট্রা কাভার দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন জয়সোয়াল, ব্যাটের কানায় লেগে শর্ট থার্ডে ওঠে ক্যাচ। সামনে ডাইভ দিয়ে দারুণভাবে সেটি নেন অ্যান্ডারসন।
জয়সোয়ালের উইকেটের পরই খোলসের ভেতর ঢুকে পড়েন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। পিচেও তখন মিলছিল টার্ন। সে উইকেটের পর মধ্যাহ্নবিরতির আগপর্যন্ত ১৯.৩ ওভারে ওঠে মাত্র ৩৪ রান, এ সময়ে ভারত হারায় আরও ২ উইকেট। টম হার্টলিকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন রোহিত, সেটি না হলেও অবশ্য কট বিহাইন্ড হতেন। সকালে অ্যান্ডারসনকে লং অন দিয়ে ছক্কা মারা রোহিত ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন ৬৯ বলে, তবে ৮১ বলে ৫৫ রান করে থামেন তিনি।
এখনো পায়ের নিচে মাটি খুঁজে ফেরা রজত পাতিদারকে ফেরান শোয়েব বশির। টার্ন করে লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে শর্ট লেগে ক্যাচ তোলেন পাতিদার, ডান দিকে ডাইভ দিয়ে যেটি নেন ওলি পোপ। দুই ইনিংসেই বশিরের শিকার হলেন পাতিদার, এবার ফিরলেন কোনো রান না করেই। প্রথম সেশনের বাকিটা সময় সতর্ক থাকেন রবীন্দ্র জাদেজা ও শুবমান গিল, জয় থেকে ৭৪ রান দূরে থাকতে বিরতিতে যায় ভারত।
দ্বিতীয় সেশনের দ্বিতীয় ওভারে পরপর ২ বলে ২ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নেন বশির। ফুলটসে তুলে মারতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দেন রবীন্দ্র জাদেজা, সরফরাজ খান ডিফেন্ড করতে গিয়ে ধরা পড়েন ব্যাকওয়ার্ড শর্ট লেগে।
প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের বোলিংয়ের নায়ক বশিরের হ্যাটট্রিক বলের মুখোমুখি হয়েছিলেন ভারতের ব্যাটিংয়ের আগের ইনিংসের নায়ক জুরেল। বশিরকে হ্যাটট্রিক পেতে দেননি জুরেল, প্রথম ইনিংসের মতো আবার বাধা হয়ে দাঁড়ান ইংল্যান্ডের সামনে। তাঁর উপস্থিতি আর খেলার ধরনের খোলস থেকে বেরোন গিলও।
দুজন স্ট্রাইক বদলাতে থাকেন নিয়মিত। শিগগির স্টোকসের হাতে বিকল্পও কমে আসে। মাঝে ৩১ ওভার ব্যাট থেকে কোনো বাউন্ডারি আসেনি, সে খরা কাটান জুরেলই—বশিরের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে চার মেরে। দুজনের জুটিতে ৫০ রান আসে ১২২ বলে।
হার্টলি আর বশিরের ওপরই আস্থা রেখে গেছেন স্টোকস, এক স্পেলের পর অ্যান্ডারসনকে আনেননি। ওলি রবিনসনকে এ ইনিংসে বোলিং–ই দেননি। শেষ দিকে অবশ্য বেশি সময় নেয়নি ভারত। মুখোমুখি ১২০তম বলে নিজের প্রথম বাউন্ডারিটি মারেন শুবমান গিল, সেটিও বশিরকে ছক্কা। এক বল পর মারা আরেকটি ছক্কায় ফিফটিও হয়ে যায় তাঁর।
পরের ওভারে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন জুরেল—হার্টলিকে চারের পর ডাবলস নিয়ে। জুরেলের বলে জয়সূচক রান—ভারতের জন্য একদম ‘পারফেক্ট’ শেষ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৩৫৩ ও ১৪৫
ভারত: ৩০৭ ও ৬১ ওভারে ১৯২/৫ (রোহিত ৫৫, জয়সোয়াল ৩৭, গিল ৫২*, পাতিদার ০, জাদেজা ৪, সরফরাজ ০, জুরেল ৩৯*; রুট ১/২৬, হার্টলি ১/৭০, বশির ৩/৭৯, অ্যান্ডারসন ০/১২))
ফল: ভারত ৫ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ভারত ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে