স্মিথের আউট না হওয়া নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিল এমসিসি
অ্যাশেজ সিরিজে ওভাল টেস্টে কাল দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১২ রানে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। দিন শেষে অস্ট্রেলিয়া এমন সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতে পারত না, যদি স্টিভেন স্মিথ ৭১ রানের ইনিংসটি না খেলতেন। ব্যক্তিগত ৪২ রানে একবার রানআউট হওয়া থেকেও বেঁচেছেন স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে ৭৮তম ওভারের এই ঘটনা নিয়ে কমবেশি বিতর্কও হচ্ছে। ক্রিকেটের আইনপ্রণেতা সংস্থা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবকে (এমসিসি) তাই ব্যাখ্যাও দিতে হয়েছে স্মিথের রানআউট না হওয়া নিয়ে।
আগে ঘটনাটা পুনরায় জেনে নেওয়া যাক। ৭৮তম ওভারে ইংল্যান্ড অলরাউন্ডার ক্রিস ওকসের তৃতীয় বলটি অন সাইডে খেলে ২ রানের জন্য দৌড়ান স্মিথ। প্রথম রানটি নেওয়ার পর দ্বিতীয় রান নিতে স্মিথ নিজের প্রান্তে ফেরার সময় ঘটনাটি ঘটেছে। ইংল্যান্ডের বদলি ফিল্ডার জর্জ ইলহামের থ্রো পেয়ে যান উইকেটকিপার জনি বেয়ারস্টো।
স্মিথ ডাইভ দিয়েছিলেন। আর তখনই স্টাম্প ভেঙে দেন জনি বেয়ারস্টো। টিভি আম্পায়ার নীতিন মেননের দ্বারস্থ হন মাঠের দুই আম্পায়ার। জায়ান্টস্ক্রিনে যখন দেখানো হলো স্মিথ ক্রিজের দাগ থেকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে তখনই ড্রেসিংরুমের পথে হাঁটা ধরেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান তারকা। কিন্তু ফিরেও আসতে হয়। আসল ঘটনা যে বোঝা গেছে তারপরই।
স্মিথ ক্রিজের দাগ থেকে বেশ দূরে—জায়ান্টস্ক্রিনে এই দৃশ্য দেখানোর পরই রানআউটের আনন্দে উল্লাস করেছেন ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা। কিন্তু টিভি আম্পায়ার নীতিন মেনন তখনই সন্দেহমুক্ত হননি। ভিডিওর প্রতিটি ফ্রেম ধরে ধরে তিনি বিশ্লেষণ শুরু করেন। দেখা যায়, বল গ্লাভসে জমা পড়ার আগেই স্টাম্প ছুঁয়েছেন বেয়ারস্টো। মেননকে নিশ্চিত হতে হয়েছে, বেয়ারস্টো বল গ্লাভসে নেওয়ার আগেই স্টাম্প ভেঙেছেন কি না? কিংবা গ্লাভসে বল নিয়ে তারপর কি স্টাম্প ভেঙেছেন? গ্লাভসে বল থাকা অবস্থায় বেয়ারস্টো যখন স্টাম্প ভাঙেন তখন স্মিথের ব্যাট ক্রিজের বাইরে ছিল কি না?
ক্রিকেটের ২৯.১ ধারায় বর্ণিত আছে, এক বা একাধিক স্টাম্প মাটি থেকে তুলে ফেললে কিংবা অন্তত একটি বেল স্টাম্প থেকে সম্পূর্ণভাবে চ্যুত হলে তা উইকেট ভাঙা হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। স্মিথের ক্ষেত্রে আম্পায়ার নীতিন মেনন টিভি রিপ্লের শেষ ফ্রেমে গিয়ে আসল ঘটনাটি বুঝতে পেরেছেন। বেয়ারস্টো যখন বল গ্লাভসবন্দী করে স্টাম্প ভেঙেছেন, তখনো বেলের একটি প্রান্ত স্টাম্পের মাথার ওপর ছিল। বেলের দুই প্রান্ত যতক্ষণে স্থানচ্যুত হয়েছে স্মিথের ব্যাট ততক্ষণে ক্রিজের দাগ পেরিয়ে যায়। আর তাই স্মিথকে ‘নটআউট’ ঘোষণা করেন টিভি আম্পায়ার নীতিন মেনন।
তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হয়েছে ধারাভাষ্যকার থেকে সমর্থকদের মধ্যে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে। পরে ক্রিকেটের আইনপ্রণেতা সংস্থা এমসিসি এ নিয়ে করা টুইটে বিষয়টি পরিষ্কার করেছে।
আম্পায়ার নীতিন মেননের সিদ্ধান্তের পক্ষে থেকে এমসিসি স্মিথের রানআউট না হওয়ার সেই ঘটনার ভিডিও পোস্ট করে লিখেছে, ‘আমরা নিচের ভিডিওটিতে দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন পেয়েছি।’ এরপর ক্রিকেটের ২৯.১ ধারাটি ক্যাপশনে জানিয়ে দিয়েছে এমসিসি, ‘উইকেট তখনই ভাঙা হয়েছে বলে বিবেচিত হবে, যখন অন্তত একটি বেল স্টাম্পের মাথা থেকে পুরোপুরি চ্যুত হবে কিংবা এক বা একাধিক স্টাম্প মাটি থেকে তুলে ফেলা হবে।’
রানআউট থেকে বেঁচে যাওয়া নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন স্মিথ, ‘সে (নীতিন মেনন) আমার জন্য সৌভাগ্যের। শুরুতে ভিডিও দেখে মনে হয়েছিল বেল স্থানচ্যূত হয়েছে। কিন্তু পরেরবার দেখে মনে হয়েছে বল ধরার আগেই জনি (বেয়ারস্টো) স্টাম্প ভেঙেছে। সিদ্ধান্তটা কঠিন ছিল।’ ইংল্যান্ডের পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড অবশ্য অন্য কিছু মনে করেন।
মাঠের আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা নাকি ব্রডকে বলেছেন, টেস্টে ‘জিং বেলস’ ব্যবহার করা হলে স্মিথ রানআউট হতেন। জিং বেলস সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে প্রাথমিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই বেলসে আলো জ্বলে, যা দেখে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয় আম্পায়ারদের। ব্রড বলেছেন, ‘কুমার বলেছে, জিং বেলস হলে এটা আউট হতো। কী কারণে (আউট) দেওয়া হলো না, সেটা আমি বুঝিনি। আমার মনে হয়, নটআউট দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার মতো পর্যাপ্ত জায়গা আছে। নিয়ম কী বলে? এটা কি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল? দেখে তো মনে হলো “বেনিফিট অব ডাউট”–এর মতো কিছু।’