বাংলাদেশ জিতলে অঘটন বলব না
এবারের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচটার কথা নিশ্চয়ই এত তাড়াতাড়ি কেউ ভুলে যাননি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ড বড় ব্যবধানে হেরেছে সেই ম্যাচে। শুধু তা–ই নয়, চিরচেনা ইংল্যান্ডকে ম্যাচে একেবারেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ওই হার ইংল্যান্ডের মতো পেশাদার দলকে খুব বেশি প্রভাবিত করবে বলে মনে হয় না। প্রথম ম্যাচে হারের নেতিবাচক প্রভাব ইংলিশদের মধ্যে পড়বে না। কাজেই ধর্মশালায় শক্তিশালী একটা দলের বিপক্ষেই বাংলাদেশকে আজ খেলতে হবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ শুরুর আগে যে জায়গায় ছিল, এখন সেখানে নেই। তারা এখন অনেক সাহসী, অনেক আত্মবিশ্বাসী এক দল। ফেবারিট ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আজ তারা জেতার জন্যই খেলতে নামবে। এ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতে গেলে খুব অবাক হব না, সেটাকে অঘটনও বলব না। বাংলাদেশের জন্য তা প্রত্যাশিত জয়ই হবে।
এ ম্যাচে কিছু বিষয় বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে। প্রথমত, ধর্মশালার এই মাঠে বাংলাদেশ একটি ম্যাচ খেলেছে এবং জিতেছে। উইকেট সম্পর্কে একটা ধারণা হয়েছে। আমার মনে হয় উইকেটের চরিত্রে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না। বিশ্বকাপের বেশির ভাগ উইকেটই স্পোর্টিং করার চেষ্টা থাকবে। কতটুকু হবে সেটা নিশ্চিত নয়, তবে চেষ্টাটা তো থাকবেই।
ধর্মশালা সম্পর্কে বাংলাদেশের ধারণা এখন অনেকটাই পরিষ্কার। কোন লেংথে বা গতিতে বল করতে হবে, এ ব্যাপারটা বাংলাদেশেরই ভালো জানা থাকা উচিত। টপ অর্ডারে যে দুজন রান করেছেন, নাজমুল ও মিরাজ—দুজনই আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে নামবেন। আশা করি সে আত্মবিশ্বাসটা টপ অর্ডারের বাকিদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়বে।
লিটন এখন সেরা ফর্মে না থাকলেও তাঁর ভালো খেলাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার আশা, তানজিদও কার্যকরী ইনিংস খেলবে। ইংল্যান্ডের পেসারদের গতিটা সে নিশ্চয়ই উপভোগ করবে। গত ম্যাচের উইকেট বিবেচনায় বাংলাদেশ টসে জিতে ব্যাটিং নিলে খারাপ হবে না। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ৩১৫ থেকে ৩২০–এর বেশি রান করতে হবে। ইংলিশরা আগে ব্যাটিং করলে তাদেরও এই রানের মধ্যে আটকাতে হবে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছে পাঁচ বোলার নিয়ে। আফগানরা পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারেনি বলেই হয়তো বাংলাদেশ পার পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের বোলিং স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ আরও একজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার নিলে ব্যাটিং গভীরতা কিছুটা কমবে। কিন্তু এ রকম ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলে সেটা কাজে লাগতে পারে।
একজন বিশেষজ্ঞ বোলারের অভাবে যদি ৩২০–এর জায়গায় লক্ষ্যটা ৩৫০ বা তার বেশি হয়ে যায়, বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলিয়েও সেটা অতিক্রম করা যাবে না। পারলে আমরা সাতজন ব্যাটসম্যান নিয়েই পারব। এই সাহসটা বাংলাদেশের দেখানো উচিত। অধিনায়ক তখন আক্রমণাত্মক থাকতে পারবে।
ইংল্যান্ডও তাদের সহজাত আক্রমণাত্মক ক্রিকেটই খেলবে। ওদের বিপক্ষে সাধারণত দলগুলোকে রক্ষণাত্মক বোলিং করতে দেখি। বাংলাদেশ আশা করি সেটা করবে না। বাংলাদেশের উচিত ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক ক্রিকেটকে সুযোগ হিসেবে দেখা। ইংল্যান্ডকে আটকে রাখার একমাত্র উপায় উইকেট নেওয়া। তা না হলে অবশ্যম্ভাবীভাবে সাড়ে তিন শর বেশি রান করবে ইংল্যান্ড। তখন ম্যাচটা আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার শঙ্কাই বেশি থাকবে। আশা করি সাকিব ও তাঁর দল সে রকম কিছু হতে দেবে না।
নাজমূল আবেদীন, ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক