উইকেট-কন্ডিশন এগিয়ে রাখবে বাংলাদেশকেই

খেলা ছাড়ার পর নাম লিখিয়েছেন কোচিংয়ে। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী হয়েও ক্রিকেট কোচিংয়ের সঙ্গেই নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন আফতাব আহমেদ। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক এই ব্যাটসম্যান প্রথম আলোর জন্য সেখান থেকেই লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে; স্মৃতিচারণা করেছেন নিজের খেলা প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেরও।

আফতাব আহমেদপ্রথম আলো

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটা অদ্ভুত সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটারই এখন যুক্তরাষ্ট্রে আসছেন। কেউ ক্রিকেট ক্যারিয়ার নতুন করে শুরু করছেন, কেউ সম্পৃক্ত হচ্ছেন কোচিংয়ে। আমারও কোচ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা। তবে কোচিংয়ের পাশাপাশি ক্রিকেট খেলাটাও নতুন করে শুরু করেছি। এ দেশে সবকিছুই সম্ভব। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ দল ‘সবকিছুই সম্ভব’ বিশ্বাস নিয়ে খেলতে নামবে, এটাই আমার আশা।

আরও পড়ুন

এমন আশার পেছনে ক্রিকেটীয় যুক্তিও আছে। বিশ্বকাপের জন্য নিউইয়র্কে যে উইকেটটা বসেছে, সেটা ড্রপ ইন উইকেট। এ উইকেট নিয়ে খুব একটা ধারণা নেই। কারণ, উইকেট তৈরি হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে। যেহেতু অস্ট্রেলিয়ায় তৈরি, নিশ্চয়ই উইকেটের চরিত্র অস্ট্রেলীয় ধাঁচেরই হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা, হিউস্টন, ডালাস—সব জায়গায়ই আমি ক্লাব ক্রিকেট খেলেছি। কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা আছে। এই উইকেটগুলো বাংলাদেশের মতোই। বল একটু ধরবে, স্পিন করবে। কখনো কখনো নিচু হবে। এ ধরনের উইকেটেই খেলে বড় হয়েছে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা।

আরও পড়ুন

উইকেটের ধরন এমন হওয়ার একটা অন্যতম কারণ, এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট পরিচালনার দায়িত্বটা মূলত ভারতীয়দের হাতে। স্বাভাবিকভাবেই উইকেটের চরিত্রে একটা ভারতীয় ছাপ থাকছে। যুক্তরাষ্ট্রের উইকেটের ধরনের কথা বলতে গেলে তাই উপমহাদেশীয় নিচু বাউন্সের উইকেটের কথাই বলতে হবে। বিশ্বকাপে এটা খুব বদলে যাবে বলে মনে হয় না।

ডালাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের আগে নিজেদের তৈরি করছে বাংলাদেশ দল
বিসিবি

এখানে আবহাওয়াও একদম বাংলাদেশের মতো। হিউস্টনে বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজটা যেমন অনেকটা ও রকম আবহাওয়ায়ই খেলতে হয়েছে। হিউস্টন থেকে গাড়িতে ঘণ্টা তিন-চারেকের দূরত্বের ডালাসেও আবহাওয়া এ রকমই থাকবে। আগামীকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচটা বাংলাদেশ ওখানেই খেলবে।

দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ হলে বাংলাদেশ দলের সম্ভাবনা এক রকম থাকত। এবার অন্য রকম থাকবে। আবহাওয়া, উইকেটের চরিত্রের কারণে বাংলাদেশের ভালো কিছু করার সুযোগ বেশি থাকবে। বলছি না যে বাংলাদেশ দল খুব ভালো করবে, প্রতিটি দলকে উড়িয়ে দেবে। তবে উইকেট বাংলাদেশকে কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখবে। এই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের ভালো করা উচিত বলে আমি মনে করি। আমি বিশ্বাস করি, জিম্বাবুয়ে বা যুক্তরাষ্ট্র সিরিজে বাংলাদেশ দল যেভাবে খেলেছে, বাংলাদেশ সে রকম দল নয়। দলটা যেমন পারফর্ম করেছে, তার চেয়েও ভালো দল।

আরও পড়ুন

ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি পরিবারগুলোর মধ্যে একটা রোমাঞ্চ কাজ করছে। এখানে একটা বাংলাদেশি পরিবার থেকে আরেকটি বাংলাদেশি পরিবারের মধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব, বাংলাদেশের মতো ঘনবসতি খুঁজে পাবেন না। তবে নিজেদের হাতের নাগালেই সাকিব-মাহমুদউল্লাহর মতো তারকারা আসবে, খেলবে, এটা যেন একটা চাঞ্চল্য ছড়িয়ে দিয়েছে সবার মধ্যে। সবাই আগ্রহ নিয়ে খেলা দেখার অপেক্ষা করছেন। আমার ধারণা, বিশ্বকাপের সময়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের দুটি ম্যাচে গ্যালারি ভরা থাকবে।

বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হলেও লিগ পর্বের দুটি ম্যাচ আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজেও। বিশ্বকাপের মূল পর্বটাও সেখানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কথা এলেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের স্মরণীয় এক স্মৃতির কথা মনে পড়ে যায়। ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় রাউন্ডে গিয়েছিল। একই বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে কী হয়েছিল, তা কি মনে করিয়ে দিতে হবে? ভারতের মতো তারকাখচিত দলকে হারিয়ে সুপার এইটে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেখানে হারিয়েছিল তখন র‍্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বর দল দক্ষিণ আফ্রিকাকেও।

আরও পড়ুন

দল হিসেবে আমাদের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ সব সময়ই ভালো স্মৃতি, ভালো মুহূর্ত উপহার দিয়েছে। সেটা সম্ভব হয়েছে মূলত মাঠের পারফরম্যান্স ভালো হওয়ার কারণেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটও প্রায় উপমহাদেশের মতোই। এটাও বাংলাদেশের সেখানে ভালো করার বড় কারণ। কন্ডিশন যেহেতু প্রায় একই, ওখানে গিয়ে আমাদের মানিয়ে নিতে খুব বেশি সময় লাগে না। অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলোর যতটা সময় লাগবে, তার চেয়ে কম সময় লাগবে বাংলাদেশের। এটা বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাস দেবে, সাহস জোগাবে। আমরা যখন খেলেছি, তখনো দলের মধ্যে এমন আবহ ছিল। এখন তো ছেলেরা আরও বেশি সফর করে। এসব নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে।


লেখক: বাংলাদেশ দলের সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী কোচ