হ্যামিল্টন টেস্ট: উইলিয়ামসনের ৩২তম শতকে ৯২ বছরের আক্ষেপ ঘুচল নিউজিল্যান্ডের
দক্ষিণ আফ্রিকার এ দলের যে শক্তি, তাতে হয়তো এমন ফল অনুমিতই ছিল। তবে টেস্ট ক্রিকেটে কোনো কিছুই সহজ নয়, সে কথাও বলা হয় ঘুরেফিরে। প্রথম টেস্টে উড়ে যাওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার সেই অনভিজ্ঞ দল দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনও সম্ভাবনা জাগিয়েছিল দারুণ কিছুর। দ্বিতীয় টেস্ট জিততে তাদের দরকার ছিল ৯টি উইকেট, সম্বল ছিল ২১৭ রান। প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ড গুটিয়ে গিয়েছিল ২১১ রানে। এ মাঠেও এর আগে কখনোই এত রান তাড়া করে জেতেনি কোনো দল। দক্ষিণ আফ্রিকাকে আশা জোগানোর কথা ছিল সেসবও।
আজও দিনের শুরুতেই টম ল্যাথামকে ফেরান প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া ডেন পিট। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বাধা হয়ে দাঁড়ালেন সেই কেইন উইলিয়ামসন। ক্যারিয়ারের ৩২তম শতকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে উপহার দিলেন ‘একটি প্রথম’–এর স্বাদ। তাঁর অপরাজিত ১৩৩ রানের সঙ্গে উইল ইয়াংয়ের অপরাজিত ৬০ রানের ইনিংসে হ্যামিল্টনে ৭ উইকেটে জিতে ২ ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানেই জিতেছে স্বাগতিকেরা। ইতিহাসে এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজে হারাল নিউজিল্যান্ড।
১৯৩২ সালে প্রথম নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, দুই দলের সেটিই ছিল প্রথম টেস্ট সিরিজ। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ গেছে, মাঝে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে লম্বা সময় নির্বাসনেও ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সব মিলিয়ে গত ৯২ বছরে নিউজিল্যান্ডের কাছে কোনো সিরিজ হারেনি তারা—আগের ১৭টি সিরিজের ১৩টিতে জিতেছে, ড্র হয়েছে ৪টি। ১৮তম সিরিজে এসে অবশেষে কিউইদের কাছে হারের স্বাদ পেল প্রোটিয়ারা।
২৬৭ রানের লক্ষ্যে গতকাল ডেভন কনওয়ের উইকেট হারিয়ে ৪০ রান তুলেছিল নিউজিল্যান্ড। আজ সকালে পিটের আঘাতের পর উইলিয়ামসন দ্বিতীয় উইকেটে রাচিন রবীন্দ্রকে নিয়ে মধ্যাহ্নবিরতির আগে-পরে যোগ করেন ৬৪ রান। সে জুটিও ভাঙেন পিট, তাঁর বলে অধিনায়ক নিল ব্রান্ডের হাতে শর্ট কাভারে ক্যাচ দেন রবীন্দ্র। তখনো নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৫০ রান।
কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকাকে এরপর শুধু হতাশই করে যান উইলিয়ামসন। এবার সঙ্গে পান উইল ইয়াংকে। দুজনের জুটির প্রথম ৫০ রানে উইলিয়ামসন একাই করেন ৪১ রান। ৯২ রানে অপরাজিত থেকে চা-বিরতিতে যায় নিউজিল্যান্ড, ততক্ষণে কাজটি অনেক কঠিনই হয়ে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য।
বিরতির পর শন ফন বার্গের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ক্যারিয়ারের ৩২তম শতক পূর্ণ করেন উইলিয়ামসন। সর্বশেষ ৭ টেস্টে উইলিয়ামসনের এটি সপ্তম শতক, যেটি রেকর্ডছোঁয়াও। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে উইলিয়ামসনের এটি পঞ্চম শতক, এ ক্ষেত্রে শীর্ষে থাকা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ইউনিস খানকে ছুঁয়ে ফেললেন তিনি।
শুরুতে উইলিয়ামসনের সহযোগীর ভূমিকা পালন করে গেলেও জুটির পরের ভাগে এগিয়ে আসেন ইয়াং-ও। উইলিয়ামসন যখন শতক পান, তখন ইয়াংয়ের রান ছিল ১৭। পিটকে চার মেরে তিনি যখন ক্যারিয়ারের সপ্তম অর্ধশতক পান, উইলিয়ামসনের রান ছিল ১১৬। শেষ পর্যন্ত ইয়াং অপরাজিত থাকেন ১৩৪ বলে ৬০ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা : ২৪২ ও ২৩৫
নিউজিল্যান্ড : ২১১ ও ৯৪.২ ওভারে ২৬৯/৩ (ল্যাথাম ৩০, কনওয়ে ১৭, উইলিয়ামসন ১৩৩*, রবীন্দ্র ২০, ইয়াং ৬০; প্যাটারসন ০/৫৮, মোরেকি ০/৪৪, পিট ৩/৯৩, ফন বার্গ ০/৬০, ডি সোয়ার্ট ০/৭)
ফল: নিউজিল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়ী ও সিরিজ ২-০-তে জয়ী