হারতে হারতে কোথায় গিয়ে থামবেন খালেদ মাহমুদ
বিসিবির পরিচালক থাকা অবস্থায় তাঁকে কত ভূমিকাতেই তো দেখা গেছে। কখনো জাতীয় দলের অস্থায়ী কোচ, কখনো নির্বাচক ও ব্যবস্থাপক, আবার কখনো টেকনিক্যাল ডিরেক্টর।
এখানেই শেষ নয়। গত এক দশকে বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান, হাই–পারফরম্যান্স (এইচপি) কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, এমনকি গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
এত পদ–পদবির মধ্যেও খালেদ মাহমুদ একটা স্বকীয় পরিচয় গড়ে তুলেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রধান কোচ হিসেবে। বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক কোচিং করাচ্ছেন এবারের বিপিএলেও। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিসিবি পরিচালকের পদ ছেড়ে দেওয়া খালেদ মাহমুদের বর্তমান পরিচয় বিপিএলের নবাগত ফ্র্যাঞ্চাইজি ঢাকা ক্যাপিটালসের প্রধান কোচ। দলটির মালিক ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খান।
বিপিএলে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রধান কোচ হিসেবে এ নিয়ে টানা ১৫ ম্যাচ হারলেন খালেদ মাহমুদ। একটি দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক শীর্ষ টি–টোয়েন্টি লিগে কোনো কোচ লাগাতার এতগুলো ম্যাচ হেরেছেন কি না, সন্দেহ।
কিন্তু খালেদ মাহমুদের অধীনে ঢাকা ক্যাপিটালসের যা অবস্থা, তাতে সিনেমার মতো শাকিব খানের এখন শুধু নিজে খেলতে নামাই বাকি! টানা চার ম্যাচ হেরে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে অবস্থান করছে ঢাকা। ঘরের মাঠ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম পর্বে তিন ম্যাচ হারের পর চায়ের শহর সিলেটে গিয়েও দলটির ভাগ্য বদলায়নি। রাজধানীর ফ্র্যাঞ্চাইজিটি আজ নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে হেরে গেছে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা রংপুর রাইডার্সের কাছে।
ঢাকার জন্য আরেকটি বিব্রতকর ব্যাপার হচ্ছে হারছে তো হারছেই, প্রতিপক্ষের সঙ্গে ন্যূনতম লড়াইটুকুও করতে পারছে না। শাকিব খানের জন্য টানা হারের এই অভিজ্ঞতা নতুন হলেও খালেদ মাহমুদ বিষয়টিকে একধরনের অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন।
বিপিএলে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রধান কোচ হিসেবে এ নিয়ে টানা ১৫ ম্যাচ হারলেন খালেদ মাহমুদ। একটি দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক শীর্ষ টি–টোয়েন্টি লিগে এর আগে কোনো কোচ লাগাতার এতগুলো ম্যাচ হেরেছেন কি না, পরিসংখ্যান ঘাঁটাঘাঁটি করলে হয়তো বের করা সম্ভব। তবে বিপিএলে কোনো কোচ যে টানা ১৫ ম্যাচ হারেননি, তা নিশ্চিত।
খালেদ মাহমুদের এই পরাজয়ের ধারা শুরু হয়েছে ২০২৪ বিপিএল থেকে। গত বছর তিনি রাজধানীর আরেক ফ্র্যাঞ্চাইজি দুর্দান্ত ঢাকার প্রধান কোচ ছিলেন।
কিন্তু দলটা শুধু নামেই দুর্দান্ত ছিল। বিপিএল ইতিহাসের সফলতম দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে জয় দিয়ে আসর শুরু করলেও এরপর হেরেছে টানা ১১ ম্যাচ। সেবারও পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে বিপিএল শেষ করেছে ঢাকা। এবারও খালেদ মাহমুদের কোচিংয়ে ঢাকার যা পারফরম্যান্স, তাতে পরাজয়ের মালাটা আরও বড় হতে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।
২০১২ সালে বিপিএলের উদ্বোধনী আসর থেকেই কোচিংয়ে যুক্ত খালেদ মাহমুদ। প্রথম আসরে ছিলেন চিটাগং কিংসের প্রধান কোচ। ছয় দলের সেই টুর্নামেন্টে পঞ্চম হয়েছিল চিটাগং। ২০১৩ সালে বরিশাল বার্নার্সের সহকারী কোচের দায়িত্বে ছিলেন। সাত দলের সেই আসরে দলটি হয়েছিল ষষ্ঠ।
তবে সাফল্যও আছে। সেটা রাজধানীরই ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রধান কোচ হিসেবে। ২০১৬ বিপিএলে খালেদ মাহমুদের কোচিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঢাকা ডায়নামাইটস। কিন্তু ৯ বছর আগের সেই আসরের পর থেকে বিপিএলে তাঁর দলের পারফরম্যান্সের গ্রাফ নিম্নমুখী।
টানা ১৫ হারের অভিজ্ঞতা অবশ্য খালেদ মাহমুদের জন্য পুরোনোই। ২০০৩ সালে তাঁর অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ টানা ১৫ ওয়ানডে ম্যাচ হেরেছিল। বাংলাদেশকে কমপক্ষে ১০ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, এমন অধিনায়কদের মধ্যে শুধু খালেদ মাহমুদেরই জয় নেই। শুধু কি তা–ই? একই বছর তাঁর নেতৃত্বে ৯ টেস্টের সব কটিতে হেরেছে বাংলাদেশ। এখন তিনি পরাজয়ের বৃত্তে বন্দী হয়ে আছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের প্রধান কোচ হিসেবে।
প্রশ্নটা এবার তাই করতেই হচ্ছে—হারতে হারতে কোথায় গিয়ে থামবেন খালেদ মাহমুদ?