চ্যাম্পিয়নস ট্রফিকে বলা হতো চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন। নতুন দর্শকের অনেকেই হয়তো জানেন না—এ টুর্নামেন্টের শুরুটা কিন্তু বাংলাদেশে। তখন অবশ্য নাম ছিল ইন্টারন্যাশনাল কাপ, পরে আইসিসি নকআউট হয়ে এই টুর্নামেন্টের নামই হয়েছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ঢাকায় খেলা হলেও প্রথম আসরে বাংলাদেশ খেলেনি, কিন্তু আমরা সবাই মাঠে গিয়েছিলাম। পরে টুর্নামেন্টটা অনিয়মিত হয়ে যায়। প্রয়োজন আছে কি না, থাকলেও কতটুকু—এমন প্রশ্ন এখনো মাঝেমধ্যেই ওঠে।
তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যেকোনো দলের জন্যই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দলগুলোও টুর্নামেন্টটিকে খুব গুরুত্বের সঙ্গেই নেয়। এর একটা বড় কারণ—চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপের ড্রেস রিহার্সাল।
দ্বিতীয় আসর থেকে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলা শুরু করে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে এমনিতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ওঠানামা করে। খুব বেশি সাফল্যও নেই। ২০০৭ আর ২০১৫ বিশ্বকাপে আমরা পরের ধাপে যেতে পেরেছি। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ভালো—সেমিফাইনালেও খেলেছে।
এখন অবশ্য চারদিকে আলোচনা এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কতটুকু, এ নিয়ে। এর আগে যতবার আমরা এ টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়েছি, আমাদের কাছে প্রত্যাশা বরাবরই ছিল কম। একবার সেমিফাইনাল খেলেছি, কিন্তু প্রত্যাশা সেবারও কম ছিল; নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে তবু আমরা সেরা চারে পৌঁছে গিয়েছিলাম।
ওয়ানডে সংস্করণ বলেই হয়তো প্রত্যাশা বেশি ছিল ২০১৯ ও ২০২৩ বিশ্বকাপ ঘিরে, কিন্তু আমরা খুব একটা ভালো করতে পারিনি। এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ কেমন করবে—এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনে হলো, কোনো এক অদ্ভুত কারণে এ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ভালো করে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফরম্যাট একটা কারণ হতে পারে—একটা বা দুইটা দিন ভালো হলেই সেমিফাইনালে চলে যাওয়া যায় আর হয়তো বাংলাদেশের ওই আত্মবিশ্বাসটাও কাজ করে সব সময়।
এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি বাংলাদেশের জন্য একটু কঠিনই হওয়ার কথা। উপমহাদেশে খেলা—বাংলাদেশ এর বাড়তি সুবিধা পাবে, এমন ভাবনা থাকতে পারে অনেকের। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাইরের দেশগুলোর ক্রিকেটাররা উপমহাদেশে এখন এত বেশি খেলে যে কন্ডিশন খুব একটা অপরিচিত নয় তাদের কাছে।
পাকিস্তানের উইকেটগুলো স্বাভাবিকভাবে ব্যাটিং–সহায়ক হয়। বাস্তবতা হলো এমন উইকেট আমাদের জন্য কাজটা কঠিন। যদি উইকেট একটু স্লো থাকে, এমনকি আমার মনে হয়, সিমিং কন্ডিশনেও বাংলাদেশের সুযোগ অনেক বেশি, যেহেতু আমাদের পেস ইউনিটটা বেশ শক্তিশালী এখন। ফ্ল্যাট কন্ডিশনে বাংলাদেশের সুযোগটা একটু কম। কারণ, এমন কন্ডিশনে অন্য দলগুলো ৩০০–এর বেশি রান করবে।
বাংলাদেশ দলের কথা বললে ব্যাটসম্যান, বোলাররা ফর্মে আছে। যে তিন দলের সঙ্গে খেলা, এর মধ্যে শুধু ভারতই অসাধারণ ক্রিকেট খেলে, কিন্তু তাদেরও চাপের মুখে ভেঙে পড়তে দেখেছি। নিউজিল্যান্ড ভালো দল, বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট সব সময় ভালো খেলে। পাকিস্তান এখন একটু ভুগছে। এরপরও আমাদের গ্রুপটা বেশি শক্তিশালী। তবু নির্দিষ্ট দিনে সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পারলে আমাদের জন্য ভালো কিছু করা সম্ভব।
আমাদের পাখির চোখ করতে হবে ভারতের সঙ্গে ম্যাচটাকে। সবচেয়ে কঠিন হবে এটাই। কিন্তু এই ম্যাচটা জিতে গেলে বড় একটা আত্মবিশ্বাস পাবে পুরো দল। এটা হারলে যে সম্ভাবনা থাকবে না এমন নয়, কিন্তু পরের দুটি ম্যাচ তখন খুব কঠিন হবে।
কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, খেলোয়াড়েরা কী বিশ্বাস নিয়ে মাঠে যাচ্ছে। আমাদের স্কিল আগে যা ছিল, তা–ই আছে। খুব একটা কমেনি বা বাড়েনি বলেই আমার ধারণা। কিন্তু ভেতরে জেতার ক্ষুধাটা কত তীব্র, সেটাই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশকে নিয়ে খুব বেশি আশার কথা শোনা যাচ্ছে না। আমি মনে করি, এটা ভালো। কারণ, এতে কোনো চাপ ছাড়াই আমরা আমাদের খেলাটা খেলতে পারব। অন্য দলগুলো যদি চিন্তা করে বাংলাদেশ দলটা খারাপ, তাহলে সেটা আমাদের জন্য আরও ভালো। কিন্তু এখন দলগুলো সব পেশাদার, সবাই ভালো প্রস্তুতি নিয়ে আসে। আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো, মানসিক অবস্থাটা যেন ঠিক থাকে।
এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি কারা জিতবে? দৌড়ে আমি দুটি দলকে এগিয়ে রাখব—ভারত ও ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। কিন্তু বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে তাদের বাইরে রাখা যায় না। যদিও এবার তাদের দলে নিয়মিত অনেকে নেই। নিউজিল্যান্ড কেমন করবে জানি না। কিন্তু এ মুহূর্তে ভারত খুব ভালো দল, তাদের দলে ম্যাচ জেতানো খেলোয়াড় অনেক। ইংল্যান্ডকেও শক্তিশালী মনে হচ্ছে বেশ। দেখা যাক, জয়ের হাসিটা শেষ পর্যন্ত কারা হাসে।