বিপিএলে আগের দুই ফাইনালের আক্ষেপ ঘোচাতে চান নাজমুল
এবার বিপিএল দিয়ে কি নাজমুল হোসেন শান্তর পুর্নজন্ম হলো?
প্রশ্নটা উঠতেই পারে। জাতীয় দলের জার্সিতে তাঁর রানখরা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্তর রসিকতা হয়। কিন্তু সেই ব্যাটসম্যানেরই এবারের বিপিএলে পরিসংখ্যান দেখুন-১৪ ম্যাচে ১১৩.৮৫ স্ট্রাইকরেট, ৩৭.৬৬ ব্যাটিং গড়ে ৩ ফিফটিসহ ৪৫২ রান।
স্ট্রাইকরেট ঠিক টি-টোয়েন্টির ওপেনারসুলভ না হলেও রান তোলায় তাঁর ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের সমর্থকদের আশাবাদী করে তুলবে। তাঁর দল সিলেট স্ট্রাইকার্স এবার আসরের ফাইনালেও উঠেছে। কাল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সেই ফাইনালে সিলেটের প্রতিপক্ষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস।
ফাইনাল সামনে রেখে আজ সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের এই ব্যাটসম্যান। সংবাদ সম্মেলনে প্রথম প্রশ্নটাই ছিল তাঁর জন্য কস্টের স্মৃতিজাগানিয়া। সবশেষ দুটি বিপিএলের ফাইনালেও মাঠে ছিলেন তিনি। দুইবারই হারের দুঃখ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে।
গত বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি বিপিএলের সবশেষ ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের কাছে ১ রানে হেরেছিল তাঁর দল ফরচুন বরিশাল। ৬ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫ বলে ১২ রানে আউট হন শান্ত। তার আগে ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি ফাইনালে রাজশাহী রয়্যালসের কাছে ২১ রানে হেরেছিল নাজমুলের দল খুলনা টাইগার্স। সে ম্যাচে ওপেনিংয়ে নেমে ২ বলে ০ রানে আউট হন।
অর্থাৎ, সর্বশেষ দুটি ফাইনাল খেললেও নাজমুল নিজে ভালো করতে পারেননি। আর কালকের ফাইনালে প্রতিপক্ষও চেনা—গতবারের ফাইনালে যাদের কাছে হারতে হয়েছিল। এসব বিষয় নিয়েই কথা শুরু করলেন নাজমুল, ‘এবার আরেকটি ফাইনাল খেলার সুযোগ পেয়েছি। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলে ম্যাচটা জিততে চাই—এটাই লক্ষ্য।’
ট্রফি জিততে পারলে ব্যক্তিগতভাবে কেমন লাগবে, এই প্রশ্নের উত্তরে নাজমুল প্রথাগত ক্রিকেটীয় কথাই বললেন, ‘ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের চেয়ে আমার কাছে দলীয় ফল বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ট্রফি জেতাও আমার ক্যারিয়ারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বলতে পারব যে আমি ওই দলের সঙ্গে ছিলাম।’
এবার সিলেট স্ট্রাইকার্সের ফাইনালে ওঠার পথে বড় অবদান ছিল নাজমুলের। প্রথম ও দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ৩৮ ও ৪০ রান করেছেন। নাজমুলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ছোট ছোট লক্ষ্য ছিল কি না? আর এবার বিপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষ তিনে আছেন তিনিসহ সিলেটের দুজন, অপরজন তৌহিদ হৃদয়।
নাজমুলের চেয়ে ৪৯ রানে পিছিয়ে তৌহিদ হৃদয় (১২ ম্যাচে ৪০৩ রান)। ফাইনালে তৌহিদ যদি রানে তাঁকে টপকে যান তাহলে কেমন লাগবে? এসব প্রশ্নের উত্তরে সোজা ব্যাটে খেললেন নাজমুল, ‘দল যতক্ষণ পর্যন্ত ভালো করছে, সেটাই আমার কাছে বড় তৃপ্তি। আর তৌহিদ ভালো করছে এটা খুব ভালো দিক। আমাদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা হচ্ছে। তবে আমাদের দুজনেরই লক্ষ্য হলো কালকের ম্যাচটা কত ভালো খেলে জিততে পারি।’
সিলেটের বিপক্ষে গতকাল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে শেষ ১৮ বলে রংপুর রাইডার্সের প্রয়োজন ছিল ৩৩ রান, বাকি ৭ উইকেট। ক্রিজে তখন দুই থিতু ব্যাটসম্যান রনি তালুকদার ও নুরুল হাসান। সিলেটের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম এর আগে বেশ কিছুক্ষণ মাঠের বাইরে ছিলেন। ১৮তম ওভার শুরুর আগে মুশফিকের ফিল্ডিংয়ে ফেরার সময় একটা বিরতি পড়ে খেলায়, তাতেই যেন ছন্দপতন হয় রংপুরের। শেষ পর্যন্ত ১৯ রানে হেরে যায় দলটি।
রংপুরের কোচ কাল সংবাদ সম্মেলনেই এ নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন। নাজমুলকে তা মনে করিয়ে দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মুশফিকের সময়ক্ষেপণ ইচ্ছা করেই কি না, ‘মুশফিক ভাইয়ের শরীর খারাপ ছিল। স্বাভাবিকভাবেই উনি নামতে পারেননি। এটা তো (মাঠের) বাইরে যাঁরা ছিলেন, ফিজিওর সিদ্ধান্ত। আমার মনে হয় না মুশফিক ভাই এটা ইচ্ছা করে করবেন। আর খেলার যে পরিস্থিতি ছিল তখন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় মাঠে থাকার দরকার ছিল। সম্ভবত উনি এটা বুঝেই মাঠে ফিরেছেন।’
সিলেটের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার প্রশংসাও করলেন নাজমুল, ‘(মাশরাফি) খুবই ভালো অধিনায়কত্ব করেছেন। এটা বলার কিছু নেই। তবে আমার মনে হয়, পুরো দল হিসেবেই আমরা ভালো করেছি। অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি ভাই সব সময় প্রত্যেক খেলোয়াড়কে সমর্থন দেন। খারাপ কিংবা ভালো সময়ে পাশে থাকেন। দলের পরিবেশটা তাই খুব ভালো।’