পাকিস্তানের প্রেরণা সেই রঙিন ‘জ্বর’, নিউজিল্যান্ডের সামনে চ্যালেঞ্জ
পাকিস্তান ক্রিকেটে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ যেন একটা জ্বরের মতো। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে তাদের আশা যখন প্রায় শেষ হয়ে যায়, তখন তারা চলে যায় সেই ঘোরের মধ্যে—সেবার এটি হয়েছিল, সেটি ঘটেছিল। তবে ঘোর কাটতে প্রায়ই সময় লাগে না।
দিন তিনেক আগে পাকিস্তান যে অবস্থায় ছিল, তাতে ১৯৯২ সালের সঙ্গে তুলনাও যথেষ্ট ছিল না। হুট করেই উদয় হলো নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান তাদের ওপর ভর করে আবার শুরু করল রঙিন স্বপ্ন দেখা। আবার সেই জ্বর, সেই ঘোর।
টুর্নামেন্ট থেকে প্রায় ছিটকে যাওয়া দলটিই আজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে সিডনিতে নিউজিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ। শুরু হয়ে গেছে তাই সেই পুরোনো হিসাব–নিকাশ।
সেবারও প্রথম ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়াকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ড, এরপর গ্রুপ পর্যায়ে (যদিও সেবার খেলা হয়েছিল রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে) শীর্ষে ছিল তারা, সেমিফাইনালের আগে হেরেছিল মাত্র একটিতে...। এরপর সেমিফাইনালে এসে ইনজামাম-উল-হক হৃদয় ভেঙেছিলেন মার্টিন ক্রোদের।
মঞ্চ যখন বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল, তখন অতীত তাই পাকিস্তানের পক্ষে। ১৯৯২ সালের পর ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে আরও দুবার দেখা হয়েছিল দুই দলের। প্রতিবারই পাকিস্তানের কাছে হেরেছে নিউজিল্যান্ড।
তবে আজ নতুন দিন, নতুন ম্যাচ। সেখানে উঁকি দিচ্ছে বিশ্বকাপ শিরোপা, আর তাতেই চাপ নামের ব্যাপারটি বেড়ে যাওয়ার কথা কয়েক গুণ। কে কীভাবে সেমিফাইনালে এল, কবে কখন কী হয়েছিল, হয়তো আজ আর তাতে কিছু যায়–আসবে না।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং যথেষ্ট বিস্ফোরক কি না—আলোচনা ছিল তা নিয়ে। নিজেদের সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ খেলতে নামা ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদিদের পারফরম্যান্স কেমন হবে, কেইন উইলিয়ামসন আদতে এ সংস্করণে কতটা উপযুক্ত—আলোচনায় ছিল সেসবও।
অথচ প্রথম ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে, তাদের মাটিতে প্রায় ১১ বছর পর জয়ে নিউজিল্যান্ড সেমিফাইনালের পথে এগিয়ে গিয়েছিল অনেকটাই। মাঝে ইংল্যান্ডের সঙ্গে হোঁচট খেলেও সবার আগে শেষ চার নিশ্চিত করেছিল তারা। পাকিস্তান সেখানে পেরিয়ে এসেছে প্রায় অসম্ভব এক সমীকরণ। টুর্নামেন্টে পুরো বিপরীত গতিপথের দুই দলই তাই মুখোমুখি আজ।
সিডনিতে সুপার টুয়েলভে দুটি ম্যাচ খেলেছে নিউজল্যান্ড, পাকিস্তান খেলেছে একটি। এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে অন্যতম ব্যাটিং সহায়ক কন্ডিশন এ মাঠেই। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে টসও—এবার ৬ ম্যাচের ৫টিতেই জিতেছে আগে ব্যাটিং করা দল। তবে টসের পরও আছে লড়াইয়ের মধ্যে লড়াই। টুর্নামেন্টে পাকিস্তান ব্যাটসম্যানদের শর্ট বলে দুর্বলতা স্পষ্টই।
ক্রিকইনফোর ডেটা অনুযায়ী, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫০.২৫ শতাংশ বলই হয়েছে শর্ট অব আ গুড বা শর্ট—মানে হার্ড লেংথে। ওই লেংথে পাকিস্তান ব্যাটসম্যানদের গড় ১৩.৯২, যেটি সুপার টুয়েলভে জিম্বাবুয়ের পর সবচেয়ে কম। পাকিস্তান অমন লেংথের বলে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ের সমান ১৪টি উইকেট। নিউজিল্যান্ড পেসাররা আবার এ লেংথে করেছেন সুপার টুয়েলভের দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম বল—৩৮.৬০ শতাংশ। তবে ম্যাচআপ অনুযায়ী, লেংথ কমিয়ে ফেলার সামর্থ্য ভালোভাবেই আছে কিউই পেসারদের। পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জ জানাবে মাঝের ওভারগুলোতে মিচেল স্যান্টনার ও ইশ সোধির স্পিনও। সোধির বিপক্ষে ২৩৯ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করা শাদাবকেও ওপরে পাঠাতে পারে পাকিস্তান।
অবশ্য ছন্দে ফেরা শাহিন শাহ আফ্রিদির সঙ্গে হারিস রউফ, নাসিম শাহ, মোহাম্মদ ওয়াসিমের পেস আক্রমণও সামলাতে হবে নিউজিল্যান্ডকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মিচেল স্টার্কের ওপর চড়াও হয়ে গতিপথ ঠিক করে দিয়েছিলেন ফিন অ্যালেন, যদিও বাঁহাতি পেসারের বিপক্ষে পাওয়ারপ্লেতে সাতবার আউট হয়েছেন তিনি।
কেইন উইলিয়ামসন সর্বশেষ ম্যাচে বড় স্কোর গড়েছেন, অন্যদিকে বাবর আজম-মোহাম্মদ রিজওয়ানরা নিজেদের খুঁজে পাননি এখনো। পাকিস্তানের ব্যাটিং কোচ ম্যাথু হেইডেন অবশ্য কাল বললেন, ‘মাঝেমধ্যে সব এমন শান্ত হয়ে যায়। আর আমরা আবহাওয়ার ক্ষেত্রে জানি, এরপর ঝড় ওঠে। ফলে বিশ্ব, প্রস্তুত হও—বাবরের কাছ থেকে বিশেষ কিছু দেখতে চলেছ তোমরা।’
বাবর ফর্মে ফিরলেন কি না, সেটি তো জানা যাবেই। তবে তার আগে প্রশ্ন, সিডনিতে ফিরে আসবে ১৯৯২, নাকি ২০২২ দেখাবে নতুন কিছু।