শিরোপা প্রাপ্য ছিল ভারতেরই, কিন্তু...

বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়াকে অভিনন্দন। গ্রুপ পর্বে চেন্নাইয়ে ভারতের বিপক্ষে টসে জেতার পরও তারা আগে ব্যাটিং করেছিল। আমার ধারণা, সেটি থেকে বড় একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাদের। ফাইনালে এসে তাই আর সেই ভুল করেনি। কাল টসে জিতে সম্ভাব্য সেরা সিদ্ধান্তটিই নিয়েছে এবং তার ফলও পেয়েছে।

ম্যাচটা শুরুর দিকেই ঘুরে গেছে ট্রাভিস হেডের নেওয়া রোহিত শর্মার ওই ক্যাচে। কিন্তু ভারতের সব ব্যাটসম্যান এমন ফর্মে থাকার পরও মোমেন্টামটা ধরে রাখতে পারল না, এটি অবিশ্বাস্য। তাঁরা জোরে শট খেলতে পারছিলেন না। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের কৃতিত্ব দিতেই হবে। তাঁরা হাফ ভলি দেননি, শর্ট লেংথে বল করলেও গতি কমিয়ে এনেছেন। বিরাট কোহলির আউটেও দারুণ পরিকল্পনা ও তার সঠিক বাস্তবায়ন দেখেছি। অস্ট্রেলিয়া উইকেট ভালোভাবে বুঝেছে, পরিকল্পনা দারুণ ছিল। উইকেট মন্থর বলে বাড়তি পেসার খেলায়নি। চার বোলার নিয়েই চ্যাম্পিয়ন তারা!

আরও পড়ুন

আগেও বলেছি, ভারতের টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা এত ভালো খেলেছেন, আরেকটু নিচের দিকের ব্যাটসম্যানদের তেমন পরীক্ষার ভেতর দিয়ে যেতে হয়নি। তেমনি পেসারদের পারফরম্যান্সের কারণে স্পিনারদেরও একই অবস্থা ছিল। ফাইনালে কিন্তু দুটি দুর্বলতাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভারতের মাটিতে তাদের স্পিনাররা কাজে এল না, এটি বেমানান লেগেছে। ভারতের জন্য সব মিলিয়ে খারাপই লাগছে। টুর্নামেন্টের বিচারে তাদেরই শিরোপা প্রাপ্য ছিল, কিন্তু খেলাটিই এমন। ফাইনালের সেরা দলের কাছেই ট্রফিটা যায়। বিরাট কোহলি, মোহাম্মদ শামি—টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যান ও বোলার নিয়েও শিরোপা পেল না ভারত।

‘বিগ হার্টেড’ ছিলেন ট্রাভিস হেড
রয়টার্স

লাবুশেন টেস্ট ম্যাচের মেজাজে খেলেছেন, হেড যাকে বলে ছিলেন ‘বিগ হার্টেড’। আলগা বল ছাড়েননি, স্পিনারদের বিপক্ষে দারুণ ছিলেন। রোহিত হয়তো আরেকটু আক্রমণাত্মক হতে পারতেন। শামিকে শুরুতে না এনে সিরাজকেই আনা উচিত ছিল বলে মনে করি। ভারতের পেসাররা শুরুর দিকের মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। অবশ্য ভাগ্যও পাশে ছিল হেডের, এটাই ক্রিকেট। হেডের হাত ধরে অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন হবে, ভাগ্যে এটিই লেখা ছিল বলেই হয়তো অমন হয়েছে।

বিশ্বকাপ থেকে ওয়ার্নার বিদায় নেওয়ার আগে মশালটা দিয়ে গেলেন হেডকে, স্মিথ দিয়ে গেলেন লাবুশেনকে। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার আগামী দিনের খেলোয়াড়েরাই জয়ে নেতৃত্ব দিলেন। তাঁদের মশাল বরাবরের মতোই জ্বলজ্বলে। ঠিক সময়ে আসলে ফর্মের চূড়ায় উঠতে হয়। অস্ট্রেলিয়া দেরিতে হলেও সেটিই করেছে। আর ভারতের হয়েছে উল্টো, অপরাজিত থেকে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ফাইনালে।

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে কীভাবে এত ধারাবাহিক, এর পেছনের কারণ জানা উচিত আমাদের মতো ক্রিকেট খেলুড়ে দেশেরও। তাদের বেড়ে ওঠা, প্রশাসনিক দক্ষতা, ঘরোয়া ক্রিকেট—সবকিছুই। অন্যদিকে ভারতের বোর্ড যখন আরও ধনী হচ্ছে, তাদের ট্রফির ঘাটতিটা থেকেই গেল। আরেকটি বিশ্বকাপের জন্য তাদের অপেক্ষা বাড়ল। বাংলাদেশেরও শিক্ষা নেওয়ার আছে এখান থেকে। এবার আটে থেকে শেষ করতে হয়েছে, এক লাফে সেরা হওয়ার পরিকল্পনা আসলে কাজে দেবে না।

শেষ দিকে বিশ্বকাপটা উপভোগ্যই হয়েছে। কিন্তু ফাইনালে আরেকটু ভালো উইকেট আশা করেছিলাম। টসের সিদ্ধান্ত এতটা প্রভাব ফেলবে, সেটি আসলে প্রত্যাশিত নয়। আমার ধারণা, আগে যারাই এ উইকেটে ব্যাটিং করত, তাদেরই হারতে হতো।

  • গাজী আশরাফ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক