কেমন আছে বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়ের সাক্ষী ফতেহ ময়দান

লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়াম, যেটা হায়দরাবাদে ফতেহ ময়দান হিসেবে পরিচিতপ্রথম আলো

হায়দরাবাদের আধুনিকতার ছোঁয়া একটু বেশিই চোখে পড়বে, যদি আপনি এই শহরে আসেন দিল্লি থেকে। দিল্লি ইতিহাস-ঐতিহ্যের শহর। এর স্থাপনাগুলোতেও সেই স্পর্শ। অন্যদিকে হায়দরাবাদ শহরের অবকাঠামোতে সর্বত্রই নতুনত্বের ঝলক।

নতুনত্বের এ শহরের একটা ঐতিহ্য লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়াম। ক্রিকেট-ঐতিহ্যের নিদর্শন বলতে পারেন। মনসুর আলী খান, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, ভিভিএস লক্ষ্মণসহ ভারতীয় ক্রিকেটের অনেক কিংবদন্তির ক্রিকেটের হাতেখড়ি ‘ফতেহ ময়দান’ নামে পরিচিত এ মাঠে। ১৬৮৭ সালে আট মাসের গোলকুন্ডা অবরোধের সময় মোগল সৈন্যরা একটি বিস্তীর্ণ খোলা মাঠে শিবির স্থাপন করেছিল। তাদের বিজয়ের পর এই মাঠের নামকরণ করা হয় ফতেহ ময়দান (বিজয় স্কয়ার)।

২০০৫ সাল পর্যন্ত এই মাঠই ছিল হায়দরাবাদ শহরের ক্রিকেটের কেন্দ্রবিন্দু। বিশ্বকাপের ম্যাচসহ ১৪টি ওয়ানডে ও ৩টি টেস্টের আয়োজক মাঠটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসও। ১৯৯৮ সালে এ মাঠেই তিন জাতি ওয়ানডে সিরিজের এক ম্যাচে কেনিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ।

গত পরশু এ মাঠে সরকারি দলের বিশাল সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ধূসর দেয়ালের পুরোনো গ্যালারির স্টেডিয়ামে ঢুকেই সেই সভার মঞ্চ ভাঙার আয়োজন দেখা গেল
প্রথম আলো

পিঞ্চ হিটারের ভূমিকায় তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে সেদিন ৭৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছিলেন মোহাম্মদ রফিক। দক্ষিণ ভারতের এই শহরে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছিল সেদিনই। এরপর ২০১৭ সালে খেলেছে টেস্ট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের মঞ্চটা দেখার কৌতূহল থেকেই কাল দিল্লি থেকে হায়দরাবাদে পৌঁছেই ফতেহ ময়দানে ঘুরতে যাওয়া।

একসময়কার ক্রিকেটের প্রাণকেন্দ্র এখন জীর্ণশীর্ণ ধ্বংসস্তূপের মতো। গত পরশু এ মাঠে সরকারি দলের বিশাল সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ধূসর দেয়ালের পুরোনো গ্যালারির স্টেডিয়ামে ঢুকেই সেই সভার মঞ্চ ভাঙার আয়োজন দেখা গেল। দেখে মনেই হয় না এ মাঠে একসময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও হতো। বিশাল গ্যালারির এখানে-সেখানে ছিন্নমূল মানুষ। মাঠের চারপাশে ময়লা-আবর্জনা। ফ্লাডলাইটগুলোয় নেই প্রাণ, নেই কোনো নিরাপত্তা। যে কেউ এসে মাঠের মধ্যে ঢুকে যেতে পারেন। এর মধ্যেই দেখা গেল দেয়ালে ইংরেজিতে লেখা ‘স্পোর্টস অথরিটি অব তেলেঙ্গানা’। উল্টো পাশের গ্যালারিতে লেখা ‘ফতেহ ময়দান ক্লাব হাউস অফিস।’ ওই দুটি লেখা থাকাতেই যেন রক্ষা। না হলে এ মাঠকে একেবারেই অভিভাবকশূন্য মনে হতো।

মুরালিকৃষ্ণ নামের একজন মাঠটা দেখাশোনার কাজ করছেন ২০ বছর ধরে। ফতেহ ময়দানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আয়োজনের স্মৃতি এখন তাঁর কাছেও ধূসর, ‘এখন আর কিছুই হয় না। ক্রিকেট বন্ধ হওয়ার পর ফুটবল আর হকি খেলা হতো। এখন সেটাও কমে এসেছে। বাচ্চাদের ক্রিকেট অনুশীলনও বন্ধ হয়ে গেছে। বৃষ্টি এলে তো মাঠে পা-ই রাখা যায় না।’

আরও পড়ুন

২০০০ সালের শুরুর দিকে শহরে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম হওয়ার পর থেকেই নাকি এ মাঠ হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কাছে অবহেলিত, ‘অ্যাসোসিয়েশন এখন রাজীব গান্ধী স্টেডিয়াম নিয়ে ব্যস্ত। ওদের এ মাঠ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। সরকার যদি কিছু করে, তাহলে হয়তো কিছু হবে। কিন্তু নতুন করে স্টেডিয়ামটা ঠিক করতে হলে ১০-২০ কোটি চলে যাবে। তেলেঙ্গানা ক্রীড়া বিভাগের এত সামর্থ্য নেই।’

রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম যেহেতু আছে, স্থানীয় ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন আরেকটা স্টেডিয়ামের জন্য অত টাকা খরচ করবেই কেন! আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ভেন্যু রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামেই আগামীকাল বাংলাদেশ দল ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচ খেলবে। এখানে নিয়মিত হয় ভারতীয় দলের বড় বড় ম্যাচের আয়োজনও। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ফতেহ ময়দান এখন শুধুই অতীত।

আরও পড়ুন