চিটাগংয়ের জয়ে ‘দুর্বল’ রাজশাহীর ফিল্ডারদেরও অবদান

জয়ের পর রাজশাহীর অধিনায়ক তাসকিনের সঙ্গে হাত মেলান চিটাগংয়ের নাঈমপ্রথম আলো

অবশেষে স্বস্তিতে চিটাগং কিংস। স্বস্তির কারণ, চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে খেলতে এসে প্রথম ম্যাচ জিতলেও পরের দুই ম্যাচেই হেরেছিল তারা। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে আবার ইউটার্ন নিয়েছে দলটি। দুর্বার রাজশাহীকে ১১১ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে অষ্টম ম্যাচে পঞ্চম জয় পেল তারা। অন্য দিকে রাজশাহীর নবম ম্যাচে এটি ষষ্ঠ হার। এই জয়ে চট্টগ্রাম উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। ৮ ম্যাচে তাঁদের সংগ্রহ ১০ পয়েন্ট।

চিটাগংয়ের জয়ে তাদের বোলার–ফিল্ডারদের কৃতিত্ব তো অবশ্যই আছে, দুর্বার রাজশাহীর ফিল্ডারদের ‘কৃতিত্ব’কেও খাটো করে দেখার উপায় নেই। চিটাগং কিংসের ব্যাটসম্যানদের একের পর এক সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন তারা। এক তাসকিন আহমেদের বলেই ক্যাচ পড়েছে দুটি।

রাজশাহী আজ খেলতে নেমেছিল অধিনায়ক পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়ে। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান এনামুল হক বিজয় শুরু থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন দলকে। কিন্তু আজ বিকেলে ফ্র্যাঞ্চাইজির পক্ষ থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চিটাগং কিংসের বিপক্ষে এ ম্যাচ থেকেই দলের অধিনায়ক তাসকিন।

নতুন অধিনায়কের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি সানজামুল ইসলাম ও রায়ান বার্ল। ইনিংসের প্রথম ওভারেই কাভারে তাসকিনের বলে নাঈমের ক্যাচ ছাড়েন সানজামুল। ১৯তম ওভারে লং অফে বার্ল ফেলেন হায়দার আলীর ক্যাচ। ক্যাচ তো পড়েছেই, সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে পড়েছেন বার্লও। গ্রাউন্ড ম্যাটের গজালের ওপর পড়ে হাঁটুতে চোট পেয়ে মাঠই ছেড়ে যেতে হয় তাঁকে। নামতে পারেননি ব্যাটিং করতেও।

চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন রাজশাহীর রায়ান বার্ল
প্রথম আলো

রাজশাহীর অধিনায়কের ঠিক উল্টো কপাল চিটাগংয়ের অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনের। তাসকিন দুটি উইকেট বঞ্চিত হয়েছেন, আর মিঠুন জীবন পেয়েছেন দুবার। ১৩তম ওভারে ব্যক্তিগত ৬ রানে মোহর শেখের বলে তাঁর ক্যাচ ফেলেন ইয়াসির রাব্বি। ১৫তম ওভারে ব্যক্তিগত ১৮ রানে বার্লের বলে ওঠা ক্যাচটা তো লং অফের ফিল্ডার জিশানের হাত গলেই পড়ে গেল। দুবার জীবন পেয়েও ২০ বলে ৩২ করেছেন মিঠুন। তবে শূন্য রানে জীবন পাওয়াটাকে নাঈম উদ্‌যাপন করেছেন ফিফটি দিয়ে।

চিটাগংয়ের শুরুটা ছিল একটু ধীর। প্রথম ওভারে ২ রান, পাওয়ার প্লে শেষে ১ উইকেটে ৪৩। সেটিও জিশানের করা ষষ্ঠ ওভারে ১৯ রান আসায়। শেষ পর্যন্ত এই চিটাগং কিংসই করেছে ৮ উইকেটে ১৯১ রান। মিডল অর্ডার থেকে উঠে হঠাৎ ওপেনিংয়ে নামা নাঈমের ৪১ বলে ৫৬, গ্রাহাম ক্লার্কের ২৮ বলে ৪৫–এর সঙ্গে মিঠুন, হায়দার আলী আর রাহাতুল ফেরদৌসদের ছোট ছোট ঝোড়ো ইনিংসগুলোরও অবদান আছে তাতে।

ফিফটি তুলে নেন চিটাগংয়ের নাঈম
প্রথম আলো

চিটাগং আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে পাওয়ার প্লের শেষ ওভার থেকেই। দ্বিতীয় উইকেটে ৫১ বলেই ৮৪ রানের জুটি হয়ে যায় নাঈম আর ক্লার্কের। নাঈমের ইনিংসে তিন ছক্কার সঙ্গে পাঁচটি চার। ক্লার্ক ছক্কা মেরেছেন ৩টি, চার ২টি। দলের ১১৯ রানের মধ্যে নাঈম, ক্লার্ক দুজন বিদায় নিলেও পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের খেলা ‘ক্যামিও’তে শেষ ৬ ওভারেও আসে ৭২ রান। বিপিএলের আগের ম্যাচগুলোর মতো এই ম্যাচেও দেখা গেছে বিশাল ওয়াইড, সেটি মিগুয়েল কামিন্সের করা লেগ স্টাম্পের অনেক বেশি বাইরে দিয়ে যাওয়া এক বলে।

কাল ২০৯ রান তাড়া করে খুলনা টাইগার্সকে প্রায় ধরে ফেলা রাজশাহী আজ যেন ব্যাটিংটাই ভুলে গিয়েছিল! এমন উইকেটে ১৯১ রান তাড়া করতে গিয়ে ৮০ রানে ইনিংস শেষ হয়ে গেলে আর কীই–বা বলার থাকে! অথচ ক্যাচ পড়েছে তাদের ব্যাটসম্যানদেরও। বিনুরা ফার্নান্ডোর করা ইনিংসের প্রথম ওভারেই ওপেনার মোহাম্মদ হারিসের দুটি ক্যাচ ছেড়েছেন খালেদ।

২ উইকেট নেন চিটাগংয়ের পেসার শরীফুল
প্রথম আলো

অবশ্য চিটাগংয়ের বোলাররাও ভালো বোলিং করেছেন। বিশেষ করে পেসার শরীফুল ইসলাম আর নাঈম। ২ ওভারে ১০ রানে ২ উইকেট নেওয়া শরীফুল ইয়াসির আলীকে বোল্ড করেছেন দারুণ এক ইনসুইংয়ে। ফিফটির পর বল হাতে ৩ ওভারে মাত্র ৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন নাঈম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

চিটাগং কিংস: ২০ ওভারে ১৯১/৮ (নাঈম ৫৬, ক্লার্ক ৪৫, মিঠুন ৩২, হায়দার ২৫; তাসকিন ২/২৩, মোহর ২/৪৬, সানজামুল ১/২৬, জিশান ১/৩২)।

দুর্বার রাজশাহী: ১৪.২ ওভারে ৮০ ( এনামুল ২১, আকবর ১০, হারিস ৯, কামিন্স ৮*, সানজামুল ৭; নাঈম ২/৬, শরীফুল ২/১০, বিনুরা ১/১৯, সানি ১/১১, খালেদ ১/৯)।

ফল: চিটাগং ১১১ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: নাঈম ইসলাম (চিটাগং কিংস)।