বাদ পড়েও লিটন বললেন, ‘দিনটা ছিল আমার’

সেঞ্চুরির পথে লিটনের আরেকটি ছক্কাশামসুল হক

রাগ-ক্ষোভ সব কি তবে মাঠেই রেখে এলেন! চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে সুযোগ না পাওয়ার ঝাল মিটিয়ে নিলেন দুর্বার রাজশাহীর বোলারদের ওপরই! নইলে এ কোন লিটন দাস?

দুপুরে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল থেকে বাদ পড়ার পর রাতে বিস্ফোরক সেঞ্চুরিতে বিপিএলে রেকর্ড গড়া দলীয় সংগ্রহ, আরেক সেঞ্চুরিয়ান তানজিদ হাসানের সঙ্গে রেকর্ড জুটি, শেষ পর্যন্ত রেকর্ড জয়ও। এত কিছু একসঙ্গে এসে যাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে কিছুটা ঠোঁটকাটা হতেই পারতেন লিটন। জবাব দেওয়ার এই তো রাত। কিন্তু হলেন না।

যেভাবেই প্রশ্ন করা হোক না কেন, লিটনের একই কথা—কোনো জেদ থেকে এই সেঞ্চুরি নয়। নির্বাচকেরা যেটা ভালো মনে করেছেন, সেভাবেই দল গড়েছেন। তিনি কেন দলে নেই, সেটা সবাই জানে। ওয়ানডেতে পারফরম্যান্স ভালো হচ্ছিল না। কাজেই এ সিদ্ধান্তে তাঁর কোনো ক্ষোভও নেই।

টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির পর লিটন দাস
প্রথম আলো

দল থেকে বাদ পড়ার দিনই লিটনের অবিস্মরণীয় ইনিংসের পর ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে লিটনই ছিলেন সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত। সমান্তরালে এই ধারণাও ছিল যে ঠিক একই কারণে সংবাদ সম্মেলনে না–ও আসতে পারেন তিনি। ক্ষোভ ও আনন্দে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়া আবেগময় দিন শেষে আবার কী বলতে কী বলে ফেলেন! সাতপাঁচ ভেবে লিটন হয়তো নিজেকে ‘সেলফ সেন্সরশিপে’ই ফেলে দেবেন। হয়তো ঢাকা ক্যাপিটালসের আরেক সেঞ্চুরিয়ান তানজিদই আসবেন সংবাদ সম্মেলনে।

কিন্তু না, সবাইকে বিস্ময় উপহার দিয়ে লিটনই এলেন এবং আরও বিস্ময়কর ব্যাপার, একটু আগে যে তাণ্ডুবে ব্যাটিংটা তিনি করে এসেছেন সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের মাঠে, এখানে ঠিক তার বিপরীত, বিনয়ী। দল থেকে বাদ পড়া নিয়ে কোনো প্রতিবাদ নেই, কোনো ক্ষোভ নেই। এ প্রসঙ্গে একেবারেই নির্লিপ্ত।

ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার নিতে গিয়ে লিটন বলেছেন, আজ দিনটাই নাকি ছিল তাঁর! এরপর সংবাদ সম্মেলনে, দিনটা কেমন গেছে প্রশ্নে সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘খুবই ভালো।’

আরও পড়ুন
কী কারণে রাখা (দলে) হয়নি এটা মিডিয়া ঘাঁটলেই পাওয়া যায়। আমার পারফরম্যান্স ছিল না। আপনারাই নিউজ করেছেন। এটা ওপেন, না জানার কিছু নেই।
লিটন দাস

তিনি যে দলে থাকবেন না, সে ব্যাপারে তাঁকে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন লিটন। সেটা অবশ্য নির্বাচকদের পক্ষ থেকে নয়। লিটন বলেছেন, ‘ক্লিয়ার মেসেজ দেওয়া হয়েছে। তবে সিলেক্টরদের তরফ থেকে না।’ পরে নিজেই ব্যাখ্যা করেছেন তাঁর বাদ পড়ার কারণ, ‘কী কারণে রাখা (দলে) হয়নি এটা মিডিয়া ঘাঁটলেই পাওয়া যায়। আমার পারফরম্যান্স ছিল না। আপনারাই নিউজ করেছেন। এটা ওপেন, না জানার কিছু নেই।’

তানজিদ হাসানকে নিয়ে রেকর্ড ২৪১ রানের জুটি গড়েছেন লিটন দাস
প্রথম আলো

ওয়ানডের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশা লিটনেরও আছে। সর্বশেষ সাত ইনিংসেই যে করেছেন এক অঙ্কের রান! কিন্তু হোক টি-টোয়েন্টি, বিপিএলে পর পর দুই ইনিংসের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর এখন তো তাঁর মনে হতেই পারে, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে থাকলে হয়তো একেবারে খারাপ করতেন না। তা ছাড়া ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দলে পরিবর্তনেরও তো সুযোগ আছে। লিটন এ প্রসঙ্গে বেশ কূটনৈতিক, ‘এটা সম্পূর্ণ নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত। উনারা মনে করেছেন এই মুহূর্তে আমি টিমে ফিট হচ্ছি না, তাই নেই। যদি তারা আবার আমার খেলা দেখে মনে করেন যে আমি ফিট হওয়ার মতো, তাহলে হয়তো তাঁরা আমাকে ফেরাতে পারেন।’

আরও পড়ুন
আমার কাজ হচ্ছে পারফর্ম করা, যেটা করতে পারছিলাম না এত দিন। ওটার জন্য আপসেট ছিলাম। আমি সব সময় বলি, আজকের দিনটা এরই মধ্যে অতীত। আমি হয়তো একটা ভালো ইনিংস খেলেছি, কিন্তু পরের ম্যাচে আবার আমাকে জিরো থেকেই করতে হবে।
লিটন দাস
সেঞ্চুরির পর লিটন দাস
প্রথম আলো

দলে থাকা বা না থাকাটা যেহেতু পুরোই নির্বাচকদের হাতে, এর কার্যকারণ নিয়ে লিটন ভাবতেও চান না। মনোযোগ রাখতে চান শুধুই নিজের খেলায়, ‘আমার কাজ হচ্ছে পারফর্ম করা, যেটা করতে পারছিলাম না এত দিন। ওটার জন্য আপসেট ছিলাম। আমি সব সময় বলি, আজকের দিনটা এরই মধ্যে অতীত। আমি হয়তো একটা ভালো ইনিংস খেলেছি, কিন্তু পরের ম্যাচে আবার আমাকে জিরো থেকেই করতে হবে। অবচেতন মনে এটাই থাকবে যে আবার নতুন করে আমাকে ইনিংস গোছাতে হবে।’

দল থেকে বাদ পড়েও যেমন কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গুছিয়ে নিয়েছেন নিজেকে। এত দ্রুত বাস্তবতা মেনে নিতে পেরেছেন বলেই তো দলে না থাকার হতাশায় ডুবে না গিয়ে লিটন উপভোগ করতে পারছেন সেঞ্চুরির আনন্দ। বলতে পারছেন, ‘দিনটা ছিল আমার।’

আরও পড়ুন