সাকিব–তামিমসহ চার ‘বড় ভাইকে’ই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে চান অধিনায়ক নাজমুল

সাকিব ও তামিম কি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির বাংলাদেশ দলে থাকবেন?প্রথম আলো ফাইল ছবি

১২ জানুয়ারি শেষ দিন। এর মধ্যেই আইসিসিতে পাঠাতে হবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য ১৫ সদস্যের খেলোয়াড় তালিকা। তবে এই তালিকায় চাইলেই পরিবর্তন করা যাবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

বাংলাদেশের জন্য এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল মানেই দুটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা—সাকিব আল হাসানকে কি পাওয়া যাবে? তামিম ইকবাল কি খেলবেন? এই দুজনের থাকা না থাকার সঙ্গে সম্পৃক্ত আরও কিছু সিদ্ধান্ত। সে জন্যই গাজী আশরাফ হোসেনের নির্বাচক কমিটি খসড়া, তবে প্রায় চূড়ান্ত যে দলটি নিয়ে এখন বোর্ডের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে, তাতে অনেকের নামের পাশেই অদৃশ্য ‘অবলিক’ দিয়ে রাখতে হচ্ছে অন্য নামও।

রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিবের বর্তমান যে অবস্থান, তাতে তাঁকে দলে রাখতে হলে বিসিবির নির্দেশনা লাগবে। ক্রিকেটীয় বিবেচনায় সাকিবের দলে না থাকার কোনো কারণ দেখে না নির্বাচক কমিটি। সাকিব নিজেও বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদের কাছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁর ব্যাপারে বোর্ডের (পড়ুন সরকার) অবস্থান না জানা পর্যন্ত নির্বাচকেরা ক্রিকেটীয় বিবেচনা কাজে লাগাতে পারছেন না। নির্বাচক কমিটি এখন বিসিবির সেই নির্দেশনার অপেক্ষায়।

সমারসেট–সারে ম্যাচে বোলিং করছেন সাকিব। এই ম্যাচেই প্রশ্ন উঠেছে তাঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

সাকিবকে নিয়ে আরেকটি চিন্তা, গত ২১ ডিসেম্বর চেন্নাইয়ে দেওয়া তাঁর বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষার ফল এখনো হাতে পায়নি বিসিবি। পরীক্ষাটি সাকিব এবং ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) যৌথ ব্যবস্থাপনায় হয়েছে। বিসিবি আশাবাদী, এবার ফলাফল ইতিবাচক আসবে। তা না হলেও হাতে যে সময় আছে, তাতে অ্যাকশনের বৈধতার ছাড়পত্র নেওয়া কঠিন হবে না বলেই তাদের বিশ্বাস।

তামিমের ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়াই আছে। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ কয়েক দিন আগেই বলেছেন, কোনো খেলোয়াড় যদি অবসরের ঘোষণা না দেয়, তার মানে ধরে নিতে হবে তিনি ‘অ্যাভেইলেবল’ আছেন। ব্যাট হাতে তামিমের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও খারাপ নয়। সবচেয়ে বড় কথা, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অনুপস্থিতির দীর্ঘ সময়টাতে অন্য কোনো ওপেনারই দলে নিজেকে অপরিহার্য করে তুলতে পারেননি। কাজেই ওপেনার হিসেবে নির্বাচকদের তালিকায় তামিমের নাম এখন পর্যন্ত আছে। তবে আইসিসিতে পাঠানো দলেও থাকবে কি না, সেটি নির্ভর করছে তামিমের ওপর।

সম্প্রতি চিটাগং কিংসের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে বিপিএলে আসা শহীদ আফ্রিদির এক ভিডিওতে তামিমকে বলতে শোনা গেছে, তিনি আর জাতীয় দলে খেলবেন না। এর আগেও বিভিন্ন সূত্রে তাঁর এমন মনোভাবের কথা বাইরে এসেছে। কিন্তু এটাই কি তামিমের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত?
গতকাল বিপিএলে ৮৬ রান করেছেন তামিম
প্রথম আলো

সম্প্রতি চিটাগং কিংসের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে বিপিএলে আসা শহীদ আফ্রিদির এক ভিডিওতে তামিমকে বলতে শোনা গেছে, তিনি আর জাতীয় দলে খেলবেন না। এর আগেও বিভিন্ন সূত্রে তাঁর এমন মনোভাবের কথা বাইরে এসেছে। কিন্তু এটাই কি তামিমের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত? জানা গেছে, বিপিএলের সিলেট পর্বের মধ্যেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার ব্যাপারে নির্বাচকেরা তাঁর সিদ্ধান্ত জানতে চাইবেন। তামিম খেলতে চাইলে এক নম্বর ওপেনার হিসেবেই দলে তাঁর নাম থাকবে।

আরও পড়ুন

তবে সে ক্ষেত্রে টপ অর্ডারে ব্যাটসম্যান-জট লাগার একটা সম্ভাবনা আছে। ওপেনার হিসেবে তখন তামিম ছাড়াও দলে থাকবেন তানজিদ হাসান ও সৌম্য সরকার। তিন ওপেনারের বাইরে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন আর লিটন দাসও আছেন। এই পাঁচজন থেকে একজনকে দলের বাইরে রাখতে হলে অনেক বড় সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে নির্বাচক কমিটিকে। কারণ সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিচারে বাদ পড়লে তো পড়তে হয় সর্বশেষ সাত ওয়ানডেতে দুই অঙ্কের দেখা না পাওয়া লিটনকে!

মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমের থাকার কথা চ্যাম্পিয়নস ট্রফির বাংলাদেশ দলে
ফাইল ছবি

দুর্দান্ত ফর্মে থাকা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে থাকা নিশ্চিত। নতুন করে চোট সমস্যা না হয়ে দাঁড়ালে মুশফিকুর রহিমও দলে থাকছেন। মেহেদী হাসান মিরাজ, জাকের আলীদের জায়গা নিয়ে সংশয় নেই। কাজেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে যদি ব্যাটসম্যানদের তালিকা থেকে বড় কোনো নাম বাদ যায়, সেটি লিটন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে তামিম সত্যি সত্যি না খেলতে চাইলে ভিন্ন কথা।

সাকিবের তো আবার ব্যাটিং-বোলিং দুই দিকেই হাত আছে। সে জন্যই প্রচলিত কথা—সাকিব দলে থাকলে একজন খেলোয়াড় কম নিয়েও খেলা যায়। সেটা ব্যাটসম্যান-বোলার দুই ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশ দলের পেসারদের পারফরম্যান্স দুর্দান্ত। সঙ্গে কন্ডিশনের কথা ভেবে ১৫ জনের দলে পাঁচ পেসার রাখারও চিন্তা আছে নির্বাচক কমিটির। সাকিবকে দলে পেলে এই চিন্তা বাস্তবায়ন সহজ, আর না পেলে একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান রাখার স্বার্থে বাদ দিতে হতে পারে একজন পেসারকে। স্পিনে বাঁহাতি নাসুম আহমেদ না লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন, সেটি একটি প্রশ্ন; যা কিছুটা জড়িয়ে সাকিবের খেলা-না খেলার সঙ্গে।

আরও পড়ুন

পাঁচ পেসার না নিলে একজনকে বাদ দেওয়াটাও লিটনকে বাদ দেওয়ার মতোই কঠিন সিদ্ধান্ত হবে। কারণ, একদিকে যেমন অভিজ্ঞতার কারণে বড় টুর্নামেন্টে মোস্তাফিজুর রহমানকে দলে প্রয়োজন। আবার তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা, তানজিম সাকিব আর হাসান মাহমুদকেও বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। তাঁরাই বরং অগ্রাধিকার পাচ্ছেন নির্বাচকদের চিন্তায়। অবশ্য শেষ পর্যন্ত সাকিবকে পেলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ দলে পাঁচ পেসার দেখা গেলেও যেতে পারে।

নাজমুলের চার বড় ভাই
প্রথম আলো

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল নিয়ে চূড়ান্তভাবে বসার আগে অধিনায়ক নাজমুলের মতামত নেবে নির্বাচক কমিটি এবং সেটিও হয়ে যেতে পারে বিপিএলের চলতি সিলেট অংশেই। নাজমুলের একটা মনোভাব অবশ্য এরই মধ্যে তাঁদের কানে এসেছে। সেটা হলো সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ—চার ‘বড় ভাই’কেই তিনি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে চান। সাকিব, তামিমের বিষয়ে নিশ্চয়তা পেলে যেটি চান নির্বাচকেরাও।

নির্বাচক কমিটি চাইলে অধিনায়কের বোর্ডে আরও একটি কার্ড ছুড়ে দিতে পারেন। ধরুন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য নিজের পছন্দের একটা আদর্শ একাদশই জানতে চাওয়া হলো তাঁর কাছে। সেখানে নাজমুল বলবেন, ওপেনিং বা টপ অর্ডারে কাদেরকে চান, কাদের নিয়ে গড়তে চান পেস আক্রমণ।

অধিনায়কের মনে ভাসা মাঠের দলটার ছবি চূড়ান্ত ১৫টি নাম লিখতে সহায়কই হওয়ার কথা নির্বাচকদের জন্য।

আরও পড়ুন