দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাঁপিয়ে দিয়ে নেপালের ১ রানের হার

গুলশান ঝা রান আউট হওয়ার পর আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না। হতাশায় বসে পড়লেন। তাঁকে সান্ত্বনা দিলেন সোমপালআইসিসি

আর্নস ভেল গ্রাউন্ডের গ্যালারিতে ছেলেটির হাতে ছিল একটি প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা, ‘প্যাশন ও গর্ব গভীর হলে দূরত্ব কিছুই না। বিশ্বকাপে নেপালকে সমর্থন দিতে ১৬,২৮৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছি। কারণ কিছু স্বপ্ন প্রতিটি মাইলের সমান।’

তা, খুদে সেই সমর্থক এই বিশাল দূরত্ব পাড়ি দিয়ে কিংসটাউনে গিয়ে কি স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছে? বলা ভালো, শুধু স্বপ্নপূরণই নয়, রীতিমতো ইতিহাসের সাক্ষী হতে হতে শেষ পর্যন্ত আর হয়নি! আরেকটু হলেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে রীতিমতো ভূমিকম্প তুলে দিচ্ছিল নেপাল! কিন্তু শেষ পর্যন্ত হারতে হলো মাত্র ১ রানে। হ্যাঁ, বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পরাক্রমশালী দলকে চোখ রাঙানি দিয়ে শেষ পর্যন্ত নেপালিজদেরই হৃদয় ভেঙেছে।

আরও পড়ুন

আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১১৫ রান তুলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তাড়া করতে নেমে নেপালের শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ১৬ রান। তখনই ম্যাচে ভর করে নাটকীয়তা। ১৯তম ওভারে কুশল মাল্লাকে হারিয়ে ৮ রান তুলতে পেরেছে নেপাল। জয়ের জন্য শেষ ওভারে দরকার ছিল ৮ রান। ওটনিল বার্টমানের করা শেষ ওভারের প্রথম ৫ বল থেকে একটি চারসহ ৬ রান নেন গুলশান ঝা। জয়ের জন্য শেষ বলে দরকার ছিল ২ রান। দুর্ভাগ্য, ঝা শেষ বলটি ব্যাটেই লাগাতে পারেননি। দৌড়ে রান নিয়ে ম্যাচটি টাই করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু নন স্ট্রাইকে অল্প দূরত্বের জন্য রান আউট হয়ে যান ঝা। মাত্র ১ রানের জয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়দের শরীর থেকে যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে!

তাব্রেইজ শামসির স্পিনে ম্যাচ নিজেদের পক্ষে এনেছে দক্ষিণ আফ্রিকা
আইসিসি

শেষ বলে বাউন্সার মেরেছিলেন বার্টমান। ঝা ব্যাটে লাগাতে না পারলেও অন্য প্রান্ত থেকে সোমপাল দৌড় দেন। ঝা-ও দৌড়ে নন স্ট্রাইক প্রান্তে গিয়ে ১ রান নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার আগেই প্রোটিয়া উইকেটকিপার কুইন্টন ডি কক বলটা বোলারের প্রান্তে থ্রো করেন। দৌড়াতে থাকা ঝা-র গায়ে লেগে বল চলে যায় ক্রিজের পাশে থাকা হাইনরিখ ক্লাসেনের হাতে। যিনি বল ধরে কাছ থেকে স্টাম্প ভেঙে দিলে হৃদয় ভাঙে নেপালের। ৭ উইকেটে ১১৪ রানে থামে নেপালের ইনিংস।

আরও পড়ুন

এর আগে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো করতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। একটু কঠিন উইকেটে প্রোটিয়াদের ইনিংসটি সঠিক পথে রাখার চেষ্টা করেছিলেন রিজা হেনড্রিকস। ১৬তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৪৯ বলে ৪৩ রান করেন তিনি। প্রোটিয়াদের হয়ে আর কেউ চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস খেলতে পারেননি। ছয়ে নামা ট্রিস্টান স্টাবস শেষ দিকে ১ ছক্বা ও ২ চারে ১৮ বলে ২৬ রানে অপরাজিত না থাকলে ১১৫ রানের সংগ্রহও পেত না দক্ষিণ আফ্রিকা। নেপালের বোলারদের প্রশংসাও করতে হবে। দলে ফেরা তারকা লেগ স্পিনার সন্দ্বীপ লামিচানে উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দেন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের কাঁপিয়েছেন আরেক লেগ স্পিনার কুশল ভুরতেল। মাত্র ১৯ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি। ২১ রানে ৩ উইকেট নেন পেসার দীপেন্দ্র সিং।

রান তাড়ায় নেপালকে সঠিক পথেই রেখেছিলেন আসিফ শেখ
আইসিসি

তাড়া করতে নামা নেপালের ইনিংসেও চল্লিশোর্ধ্ব রানের ইনিংস একটি। ৪৯ বলে ৪২ রানে আউট হন উইকেটকিপার আসিফ শেখ। ১৮তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ১০০ রানে আউট হন তিনি। তার আগে আসিফের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৫০ রানের জুটিতে রান তাড়ায় নেপালকে সঠিক পথেই রেখেছিলেন অনিল শাহ। ২৪ বলে ২৭ রানে আউট হন অনিল। জয়ের জন্য শেষ ৩ ওভারে ১৮ রান দরকার ছিল নেপালের। অর্থাৎ ওভারপ্রতি গড়ে ৬ রান করে দরকার ছিল।

আরও পড়ুন

এ পর্যায়ে এসে প্রোটিয়া বোলার আঁটসাঁট বোলিং শুরু করেন। ১৮তম ওভারে স্পিনার তাব্রেইজ শামসি মাত্র ২ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন। ১৯তম ওভারে প্রোটিয়া পেসার আনরিখ নর্কিয়া একটি ছক্কাসহ ৮ রান দিলেও বিপজ্জনক মাল্লাকে তুলে নেন। এরপর শেষ ওভারে গুলশান ঝা চোখে চোখ রেখে টক্কর দেওয়ার চেষ্টা করলেও ম্যাচের ফল শেষ পর্যন্ত নিজেদের পক্ষে আনতে পারেননি। সেটি করতে পারলে নিশ্চয়ই আনন্দে ভেসে যেত নেপাল। তবে এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বয়স বিচারে সর্বকনিষ্ঠ দল হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো অভিজ্ঞ দলকে ভালোই কাঁপাল নেপাল।

প্রোটিয়াদের হয়ে ৪৩ রান করেন রিজা হেনড্রিকস
আইসিসি

৩ ম্যাচে মাত্র ১ পয়েন্ট পেয়ে ‘ডি’ গ্রুপে চতুর্থ নেপাল এই হারে টুর্নামেন্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাদ পড়ল। নিজেদের শেষ ম্যাচটা তারা খেলবে বাংলাদেশের বিপক্ষে। আগেই সুপার এইট নিশ্চিত করা দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ ম্যাচের সবগুলো জিতে মোট ৮ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে। ৩ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট পাওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয়। নেপালের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা জিতলেই সুপার এইটে উঠবে বাংলাদেশ। ৩ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় নেদারল্যান্ডস। আগেই বাদ পড়া শ্রীলঙ্কা ৩ ম্যাচে ১ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের তলানিতে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১১৫/৭ (হেনড্রিকস ৪৩, স্টাবস ২৭*, মার্করাম ১৫, ডি কক ১০, মিলার ৭; কুশল ৪/১৯, দীপেন্দ্র ২১/৩, লামিচাঁনে ১৮/০, অবিনাশ ০/১৯)

নেপাল: ২০ ওভারে ১১৪/৭ (আসিফ ৪২, অনিল ২৭, কুশল ১৩, দীপেন্দ্র ৬, ঝা ৬, মাল্লা ১, রোহিত ০; শামসি ৪/১৯, নর্কিয়া ১/২৭, মার্করাম ১/৮)

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: তাব্রেইজ শামসি (দক্ষিণ আফ্রিকা)