শামি-কোহলিতে পাঁচে পাঁচ, নিউজিল্যান্ডকে টপকে শীর্ষে ভারত
নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৭৩
ভারত: ৪৮ ওভারে ২৭৪/৬
ফল: ভারত ৪ উইকেটে জয়ী
দুই দলই ম্যাচটা খেলতে নেমেছিল অপরাজিত থেকে। তবে ধর্মশালায় পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দলের লড়াইটা খুব যে হাড্ডাহাড্ডি হলো, তা বলা যাবে না। ঘুরে দাঁড়িয়ে রোমাঞ্চকর এক জয়ই পেয়েছে স্বাগতিক ভারত, দুই ওভার বাকি থাকতে নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেও উঠে গেছে টানা পঞ্চম জয় পাওয়া স্বাগতিক দল। ৫ উইকেট নিয়ে বোলিংয়ে ভারতের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা মোহাম্মদ শামি। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারও উঠেছে তাঁর হাতেই।
আগে ব্যাটিং করা নিউজিল্যান্ডের ইনিংসকে চাইলে তিন ভাগে ভাগ করে নিতে পারেন। প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ার পর তাদের দারুণ এক অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন ড্যারিল মিচেল ও রাচিন রবীন্দ্র। তবে শক্ত একটা ভিত পেয়েও শেষ দিকে পথ হারিয়ে বসে কিউইরা। শেষ ১০ ওভারে ৫৪ রান তুলতে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে তারা গুটিয়ে যায় ২৭৩ রানেই। সফল রান তাড়ায় ভারতকে এগিয়ে নিয়েছে চারটি অর্ধশত রানের জুটি। এর মধ্যে তিনটিতেই ছিলেন ৯৫ রান করা কোহলি। হার্দিক পান্ডিয়া নেই বলে একজন ব্যাটসম্যান কম ছিল ভারতের, কিন্তু নিউজিল্যান্ড সেই দুর্বলতায় আঘাত করতে পারেনি।
রোহিত শর্মা ও শুবমান গিলের উদ্বোধনী জুটিতে ভালো শুরু পায় ভারত, প্রথম ১১ ওভারে অবিচ্ছিন্ন থেকে ৭১ রান তোলেন দুজন। কিন্তু তাদের পরপর ২ ওভারে ফিরিয়ে নিউজিল্যান্ডকে লড়াইয়ে রাখেন লকি ফার্গুসন। ২৬ রানের পথে ওয়ানডেতে দ্রুততম ২ হাজার রানের রেকর্ড গড়েন গিল, রোহিত অবশ্য থামেন অর্ধশতক থেকে ৪ রান দূরে। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকা শ্রেয়াস আইয়ার ও সতর্ক বিরাট কোহলি অবশ্য দ্রুত ২ উইকেট হারানোর চাপটা সামাল দেন ভালোভাবেই।
মাঝে তীব্র কুয়াশায় বন্ধ ছিল খেলা। কুয়াশা বিরতির পর শ্রেয়াসকে থামিয়ে ৫২ রানের জুটি ভাঙেন ট্রেন্ট বোল্ট। এরপর রাহুলের সঙ্গে কোহলির জুটিতে আবার এগিয়ে যায় ভারত। স্পিনের বিপক্ষে দুর্দান্ত দুই ব্যাটসম্যান ভারতকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন অনায়াস জয়ের পথে। কিন্তু মিচেল স্যান্টনারের বলে রাহুল এলবিডব্লু হলে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে যায় কিউইদের সামনে। পরের ওভারে কোহলির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে সূর্যকুমার যাদবের রানআউটে চাপও বাড়ে। ক্রিজে শেষ স্বীকৃত জুটি থাকার সময় জয় থেকে ৮৩ রান দূরে ছিল তারা।
সে জুটি যতক্ষণে ভেঙেছে, জয় তখন বলতে গেলে ভারতের হাতের মুঠোয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের ম্যাচটির মতো এবারও শেষে রোমাঞ্চ জেগেছিল কোহলির সেঞ্চুরির সম্ভাবনা নিয়ে। ভারতের জয় ও কোহলির শতক-দুটির জন্যই প্রয়োজন ছিল ৫ রান। ম্যাট হেনরিকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে থামেন কোহলি। তাতে শচীন টেন্ডুলকারের ৪৯ শতকের রেকর্ড ছোঁয়ার অপেক্ষাও বেড়েছে তাঁর।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ফর্মে থাকা ডেভন কনওয়ে ও উইল ইয়াংয়ের উইকেটের বিনিময়ে প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ৩৪ রান তোলে নিউজিল্যান্ড, প্রথম পাওয়ারপ্লেতে এবারের বিশ্বকাপে যেটি তৃতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। সিরাজের বলে মিডউইকেট ক্যাচ দেওয়া কনওয়ে ৯ বল খেলে কোনো রানই করতে পারেননি। ১৭ রান করে ইয়াং বোল্ড শামির বলে।
মিচেল ও রবীন্দ্র অবশ্য লম্বা একটা সময় হতাশ করে গেছেন ভারতীয়দের। ভারতের ফিল্ডিং এদিন মাঝের লম্বা একটা সময় ছিল হতাশাজনক। জুটি গড়তে থাকা দুই ব্যাটসম্যানেরই সহজ ক্যাচ মিস করেছে তারা। ১২ রানে ভারতের সেরা ফিল্ডার জাদেজার হাত থেকে বেঁচে যান রবীন্দ্র। মিচেল জীবন পান দুবার—৬০ রানে উইকেটকিপার রাহুলের পর ৭৩ রানে তাঁর ক্যাচ ছাড়েন যশপ্রীত বুমরা। রবীন্দ্র দুবার বেঁচেছেন রিভিউ নিয়েও, দুবারই তাঁকে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার আদ্রিয়ান হোল্ডস্টক।
ভাগ্যকে কাজে লাগিয়ে প্রায় ২৫ ওভার ব্যাটিং করে ১৫৯ রানের জুটি গড়েন মিচেল ও রবীন্দ্র, নিউজিল্যান্ডকে সেটি এনে দেয় বেশ শক্ত একটা ভিত। রবীন্দ্র ৭৫ রান করে থামেন শামির অফ কাটারে ক্যাচ দিয়ে। বেশ কিছুদিন ধরে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মিচেল শুরু থেকেই ছিলেন ইতিবাচক। ভারতের অন্যতম বড় অস্ত্র কুলদীপ যাদবের ওপর শুরু থেকেই চড়াও হয়েছিলেন, স্পিনে দুর্দান্ত পায়ের কাজ ছিল মিচেলের। সব মিলিয়ে কুলদীপের ২৮ বলে ৪৪ রান নেন মিচেল। ক্যারিয়ারে এক ইনিংসে কোনো ব্যাটসম্যান কুলদীপের কাছ থেকে এত রান তোলেননি। ৬০ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করা মিচেল শতক পূর্ণ করেন ১০০তম বলে।
হার্দিক পান্ডিয়া নেই বলে ভারত খেলছে ৫ জন বোলার নিয়ে, সেটি তাদের ভোগাবে বলেই মনে হচ্ছিল শুরুতে। কিন্তু কুলদীপ ঘুরে দাঁড়ান। শেষ ৩ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে নিয়েছেন টম ল্যাথাম ও গ্লেন ফিলিপসের উইকেট। ৪৮তম ওভারে মিচেল স্যান্টনার ও ম্যাট হেনরিকে শামি বোল্ড করেন পরপর ২ বলে। হ্যাটট্রিক না পেলেও পরের ওভারে এসে মিচেলকে থামান শামি, যেটি ছিল তাঁর পঞ্চম উইকেট।