লিটনকে অধিনায়ক করায় কথা শুনতে হয়েছিল সালাউদ্দিনকে
লিটন দাসের অধিনায়কত্বের প্রশংসার জোয়ার বইছে বাংলাদেশের ক্রিকেট মহলে। এতটাই যে ব্যাটসম্যান লিটনের ব্যর্থতাও ঢাকা পড়েছে। কারণও আছে। অধিনায়ক লিটনের অধীনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৩-০ তে ধবলধোলাই করেছে বাংলাদেশ।
প্রধান কোচ ফিল সিমন্স থেকে দলের খেলোয়াড়দের মুখেও লিটনের প্রশংসার জোয়ার বইছে। সর্বশেষ লিটনের প্রশংসা করলেন বাংলাদেশ দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। এ প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, সর্বশেষ বিপিএলে লিটনকে অধিনায়কত্ব দেওয়ার পর অনেক কথা শুনতে হয়েছিল তাঁকে।
বিপিএলের সর্বশেষ মৌসুমে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের নেতৃত্ব লিটনকে দিয়েছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজিটির কোচ সালাউদ্দিন। লিটনের অধীনে সেবার ফাইনাল খেলেছিল কুমিল্লা।
তবে লিটনকে অধিনায়কত্ব দেওয়ার পর অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছিল সালাউদ্দিনকে। সিরিজ জেতার পর সেই কথাই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সালাউদ্দিন, ‘গত বছর লিটনকে কুমিল্লার অধিনায়কত্ব দিয়েছিলাম, তখন এ নিয়ে আমার কথা শুনতে হয়েছিল। আমি যখন সিদ্ধান্ত নেই অনেক ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নেই। কারণ, মানুষের চিন্তাভাবনা, খেলা সম্পর্কে আইডিয়া, কতটা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সেসব দেখেই আমি সিদ্ধান্ত নেই।’
লিটনকে ‘ক্যাপ্টেন ম্যাটেরিয়াল’ হিসেবে উল্লেখ করে সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, সে ক্যাপ্টেন ম্যাটেরিয়াল, সে খেলার থেকে ৩-৪ ওভার আগে থাকে। একজন অধিনায়কের সবচেয়ে বড় গুণ, সে খেলা থেকে আগে থাকে কি না, বুঝতে পারে কি না, ঘটনা কী ঘটছে, ২ ওভার পরে কী হতে পারে, এটা মনে হয় ওর ভালো গুণ। প্রথম দুই ম্যাচে কম পুঁজি নিয়ে জিতেছি, আজকেও (কাল) যদি ফিল্ড সেট–আপ দেখেন, আমার মনে হয় ওর অসাধারণ গুণ আছে ক্যাপটেনসির।’
গত বছর লিটনকে কুমিল্লার অধিনায়কত্ব দিয়েছিলাম, তখন এ নিয়ে আমার কথা শুনতে হয়েছিল। আমি যখন সিদ্ধান্ত নেই অনেক ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নেই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ব্যাট হাতে লিটন কিছুই করতে পারেননি। টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৩ ম্যাচ রান করেছেন ১৭। লিটন সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৪ ম্যাচে, দুবারই আউট হয়েছেন শূন্য রানে।
বাকি দুই ইনিংসে মোটে ১৭ রান। তবে লিটনের রান না পাওয়া নিয়ে চিন্তিত নন সালাউদ্দিন, ‘খারাপ সময় আসতেই পারে, টেকনিক্যালি ওর খুব একটা সমস্যা নাই। আমার মনে হয় এটা থেকে খুব তাড়াতাড়ি বের হবে। যেকোনো সংস্করণেই সে আমাদের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। আমি এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নই। মানসিকভাবে শান্ত থাকলে আরও ভালো থাকবে।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজে নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছেন জাকের আলী। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৯১ রানের অনবদ্য ইনিংসহ পুরো সিরিজেই ধারাবাহিকভাবে রান করে গেছেন। জাকেরও বিপিএলে খেলেন কুমিল্লার হয়ে। তাঁকেও ভালো করেই চেনেন সালাউদ্দিন। জাকের সম্পর্কে সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘জাকের ব্যাটসম্যান হিসেবে যথেষ্ট পরিপক্ব। এটা আমি আগেও বলেছি। খেলা বোঝে, সে যে পরিস্থিতিই হোক। অন্য যে ছেলেরা, তারাও আমার সঙ্গে কমফোর্ট ফিল করে। শেয়ার করতে পারে, কথা বলতে পারে।’
এই সফরে টেস্ট সিরিজ ১-১ ড্র করেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজে ৩-০-তে হয়েছে ধবলধোলাই। টি-টোয়েন্টি সিরিজে হয়েছে উল্টোটা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এই সিরিজে খেলেছে দল হিসেবে। সালাউদ্দিনও পুরো দলেরই প্রশংসা করলেন, ‘এই সিরিজে ছেলেরা ভালো খেলেছে। টিমটা ব্যালেন্স ছিল না, অনেকগুলো সিনিয়র প্লেয়ার ছিল না, চোটের সমস্যা ছিল। সেখান থেকে ছেলেরা মানসিক শক্তি দেখিয়েছে, তারা যে করতে পারে সেটা দেখিয়েছে। পুরো সিরিজের মধ্যে হয়তো প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসটাতে বাজে খেলেছিলাম। এ ছাড়া দ্বিতীয় ওয়ানডে ভালো খেলিনি। এ ছাড়া এত দিনের সফরে বেশির ভাগ দিনই ডমিনেট করে খেলেছি। ছেলেরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে শিখেছে, বড় ভাবা শুরু করেছে, ভাবছে তারা পারবে। আমার মতে এই মানসিক দিকটাই তাদের অনেক কাজে দেবে।’
বাংলাদেশের এই দারুণ সফরে সালাউদ্দিনের ভূমিকা কতটা? এই প্রশ্নে সিনিয়র সহকারী কোচ কৃতিত্ব দিলেন প্রধান কোচকে, ‘আমি কিছুই করিনি। এখানে প্রধান কোচের অবদান আছে। আমার কাছে মনে হয়েছে ফিল খুব স্বাধীনতা দেয়। সেই সঙ্গে কোচিং স্টাফদেরও স্বাধীনতা দেয়। মনে হচ্ছে ছেলেরা এখন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে, পরিকল্পনার সঙ্গেও যুক্ত। কৃতিত্ব পুরোই ছেলেদের। তারা ভালো খেলতে চেয়েছে, নিজেরাই পরিবর্তন হতে চেয়েছে। আমরা যারা কোচিং স্টাফে আছি, তারা হয়তো ছেলেদের ওই স্বাধীনতাটা দিয়েছে।’