দ্বিতীয় দিনই শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়েছিল এই টেস্ট, আয়ারল্যান্ড ছিল ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কায়। গতকাল লরকান টাকারদের ব্যাটিংয়ে ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়ে সেই আয়ারল্যান্ডই একটু হলেও চাপে ফেলে স্বাগতিকদের।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য ১৩৮ রানের বেশি লক্ষ্য দিতে পারেনি তারা, মুশফিকুর রহিমরা সেটি চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনে এসে তাড়া করে ফেলেছেন ৭ উইকেট বাকি রেখেই। রানতাড়ায় নেতৃত্ব দেন মুশফিক, প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির পর এবার তিনি অপরাজিত থাকেন ৫১ রানে।
তিন বছর পর দেশের মাটিতে আরেকটি টেস্ট জিতল বাংলাদেশ, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিরপুরেই জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছিল তারা। এর আগে বাংলাদেশের সর্বশেষ টেস্ট জয় ছিল ২০২২ সালের শুরুতে, মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। সব মিলিয়ে রান তাড়া করে পঞ্চমবার টেস্ট জিতল বাংলাদেশ, এ সংস্করণে এটি তাদের ১৭তম জয়। আর ২০১৯ সালের পর প্রথমবার টেস্ট খেলতে নামা আইরিশরা পেল এ সংস্করণে টানা চারটি ম্যাচ হারের স্বাদ।
১৩১ রানে এগিয়ে থেকে সকালে ৯ ওভার ব্যাটিং করলেও আগের দিনের স্কোরের সঙ্গে ৬ রান যোগ করতেই শেষ ২ উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। দুটি উইকেটই নেন ইবাদত হোসেন। ৭২ রান করে বোল্ড হন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন, গ্রাহাম হিউম ফেরেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। ৯ উইকেট নিয়েই ম্যাচ শেষ করতে হয় তাই তাইজুল ইসলামকে।
রানতাড়ায় তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে আসেন লিটন, ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের পর প্রথমবার। আয়ারল্যান্ড স্পিনারদের সামলাতে ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশনের ব্যাপার তো ছিলই, দুজনের শুরুর ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে—এমন জুটির পেছনে আছে আক্রমণাত্মক মানসিকতাও।
দ্বিতীয় বলেই মার্ক এডেয়ারকে ড্রাইভ করে চার মেরে শুরু করেন তামিম। লিটন মুখোমুখি প্রথম বলেই ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে ছক্কা মারেন ম্যাকব্রাইনকে, ঠিক পরের বলেই কাট করে মারেন আরেকটি চার। ৪ ওভারেই ২৭ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ।
ওপেনিং জুটি ভাঙে লিটনের অদ্ভুত আউটে। এডেয়ারের শর্ট বলে পুল শটটা একটু আগেই খেলে ফেলেন লিটন, মিস করেন সেটি। বল তাঁর হেলমেট থেকে এসে লাগে ব্যাটে, এরপর ভাঙে স্টাম্প। ১৯ বলে ২৩ রান করে আউট হওয়া হতবিহ্বল লিটনকে ফিরতে হয় এডেয়ারের ‘সানগ্লাস কই’ উল্লাসের মধ্য দিয়ে। প্রথম ইনিংসে হেলমেটের নিচে সানগ্লাস পরে ব্যাটিং করেছিলেন লিটন, এডেয়ার দিয়েছেন সেটিরই ইঙ্গিত।
দারুণ একটি ড্রাইভে চার মেরে শুরু করলেও নাজমুল অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেননি। ম্যাকব্রাইনের অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলে যেন ভড়কে যান তিনি, শেষ মুহূর্তে ব্যাট সরানোর চেষ্টা সফল হয়নি তাঁর। সে ওভারে সবচেয়ে বেশি ঘুরেছিল ওই বলই। স্লিপে অ্যান্ডি বলবার্নি ক্যাচটি ঠিকঠাক নিয়েছেন কি না, বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে সেটির পক্ষেই সিদ্ধান্ত দেন টেলিভিশন আম্পায়ার আহসান রাজা; যদিও সফট সিগন্যাল ছিল নটআউট। ২ ইনিংস মিলিয়ে নাজমুল করলেন ৪ রান।
দ্রুত ২ উইকেট হারালেও প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা মুশফিক নেমে অবশ্য আক্রমণাত্মক ব্যাটিংই করেন। মুখোমুখি প্রথম বলেই ম্যাকব্রাইনকে ড্রাইভ করে চার মেরে শুরু করেন তিনি। এরপর চড়াও হন বেন হোয়াইটের ওপর। বাংলাদেশ মধ্যাহ্নবিরতিতে যায় জয়ের সুবাস নিয়েই, প্রয়োজন ছিল ৪৯ রান।
বিরতির পর অবশ্য ছন্দপতন হয় তামিমের। লেগ স্পিনার হোয়াইটের লং হপে পুল করতে গিয়ে খাড়া ওপরে ক্যাচ তোলেন ৬৫ বলে ৩১ রান করা এ ওপেনার। দ্রুত ফিরতে পারতেন মুমিনুলও, ম্যাকব্রাইনের বলে সহজতম স্টাম্পিংয়ের সুযোগ টাকার মিস করায় বেঁচে যান তিনি। এরপর আর সুযোগ তৈরি করতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। হোয়াইটকে কাট করে চার মেরে ৪৭ বলে ক্যারিয়ারের ২৬তম ফিফটি পূর্ণ করেন মুশফিক।