কাগজে–কলমে লড়াইটা মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর। অন্য চোখে রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সে লড়াইয়ে রোহিত পারেননি। কিন্তু রোহিতের ঘরের মাঠে মানে মুম্বাইয়ের মাঠে কোহলি পেরেছেন। তাহলে ম্যাচের ফলটা কী বলুন তো?
ম্যাচটি যাঁরা দেখেননি, প্রশ্নটি তাঁদের জন্য। দেখলে তো ফল জানাই। না, গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট এ লড়াইয়ে কোনো অনিশ্চয়তা বা অভাবনীয় ফলের জন্ম দেয়নি। তারকাদ্যুতি, অভিজ্ঞতা বিচারে মুম্বাইয়ের সবচেয়ে বড় তারকা রোহিত যেমন এবার আইপিএলে আবারও ব্যাট হাতে ব্যর্থ, তেমনি হেরেছে তাঁর দল মুম্বাইও।
বেঙ্গালুরুর ৫ উইকেটে ২২১ রান তাড়া করতে নেমে ১২ রানে হেরেছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি দলটি। বেঙ্গালুরুর এই জয়ে তাঁদের সবচেয়ে বড় তারকা কোহলির ব্যাট কিন্তু চওড়া হয়ে উঠেছে। ৪২ বলে করেন ৬৭ রান।
মুম্বাই একেবারে খারাপও করেনি। টক্কর দিয়েছে ভালোই। জয়ের জন্য শেষ ওভারে হাতে ৪ উইকেটে রেখে ১৯ রানের দূরত্বে পিছিয়ে ছিল মুম্বাই। কাগজে–কলমে লক্ষ্যটা অসম্ভব না হলেও ব্যাটসম্যান যে ছিল না। ক্রুনাল পান্ডিয়ার করা শেষ ওভারে ৬ রান তোলার পথে ৩ উইকেট হারায় মুম্বাই। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ২০৯ রানে থেমেছে তাদের ইনিংস।
মোট ৪৩০ রানের এই ম্যাচ জিতে বেঙ্গালুরু এবার বেশ অদ্ভুত এক ধারাও বজায় রাখল। এবার আইপিএলে এ পর্যন্ত ৪ ম্যাচের মধ্যে প্রতিপক্ষের মাঠে তিন ম্যাচের সব কটিতেই জিতেছে বেঙ্গালুরু। হেরেছে শুধু নিজের মাঠে। এবার চিপকে জিতেছে ২০০৮ সালের পর প্রথমবারের মতো, আজ ওয়াংখেড়েতে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে বেঙ্গালুরুর গত ১০ বছরের মধ্যেও প্রথম।
গত জানুয়ারির পর এই ম্যাচ দিয়েই প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরলেন মুম্বাইয়ের তারকা পেসার যশপ্রীত বুমরা। ৭.২৫ ইকোনমি রেটে ৪ ওভারে দিয়েছেন ২৯ রান। বুমরা ছাড়া মুম্বাইয়ের বাকি ছয়জন বোলারই ওভারপ্রতি গড়ে অন্তত ১০ করে রান দিয়েছেন। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামা বেঙ্গালুরুর ইনিংসে প্রথম ওভারেই ফিল সল্টকে তুলে নেন ট্রেন্ট বোল্ট। তার আগেই অবশ্য কোহলিকে নিয়ে অন্য এক পরিস্থিতির জন্ম দেন ওয়াংখেড়ের দর্শকেরা। সল্টকে নিয়ে ওপেনিংয়ে নামার সময় ‘কোহলি, কোহলি’ গর্জন ওঠে ওয়াংখেড়ের গ্যালারিতে। আইপিএলের ‘শোর মিটার’–এ দর্শকদের সেই আওয়াজের জোর মেপে দেখা হয় ১৩৮ ডেসিবল!
তিনে নামা দেবদূত পাড়িক্কালকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৯১ রানের জুটি গড়েন কোহলি। ২২ বলে ৩৭ করা দেবদূত আউট হওয়ার পর তৃতীয় উইকেটে রজত পাতিদারকে নিয়ে ৩১ বলে ৪৮ রানের জুটি গড়েন কোহলি। ১৪.১ ওভারে দলীয় ১৪৩ রানে আউট হওয়ার পর ড্রেসিংরুমে ফিরে রাগে ব্যাট ও গ্লাভস ছুড়ে মারেন এই তারকা। তবে কোহলির হতাশা শেষ পর্যন্ত থাকেনি। বেঙ্গালুরু শেষ পর্যন্ত খুব ভালো সংগ্রহ পেয়েছে শেষ দিকে জীতেশ শর্মা ১৯ বলে ৪০ রানের দারুণ এক অপরাজিত ইনিংস খেলায়। পাতিদারের ব্যাট থেকে এসেছে ৩২ বলে ৬৪।
তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারে যশ দয়ালের শিকার হয়ে ব্যক্তিগত ১৭ রানে ফেরেন মুম্বাই ওপেনার রোহিত। আগের তিন ম্যাচে ০, ৮ ও ১৩ রানে আউট হওয়ার পর চলতি আইপিএলে এটা রোহিতের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। তিলক ভার্মার ২৯ বলে ৫৬ ছাড়া মুম্বাইয়ের ইনিংস এগিয়েছে মাঝারি মানের সংগ্রহে। রায়ান রিকেলটন (১৭), উইল জ্যাকস (২২), সূর্যকুমার যাদব (২৮) ভালো শুরু পেলেও সেটা জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়ে ওঠেনি। অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যাট থেকে এসেছে ১৫ বলে ৪২।
৪ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিনে বেঙ্গালুরু। ৫ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে আটে মুম্বাই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু: ২০ ওভারে ২২১/৫ (কোহলি ৬৭, পাতিদার ৬৪, জীতেশ ৪০*; হার্দিক ২/৪৫, বোল্ট ২/৫৭, ভিগনেশ ১/১০)
মুম্বাই ইন্ডিয়ানস: ২০ ওভারে ২০৯/৯ (তিলক ৫৬, হার্দিক ৪২, সূর্যকুমার ২৮; ক্রুনাল ৪/৪৫, হ্যাজলউড ২/৩৭, যশ ২/৪৬, ভুবনেশ্বর ১/৪৮)
ফল: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ১২ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: রজত পাতিদার (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু)।