আইপিএলে মাঠেই কেন ব্যাট পরীক্ষা করা হচ্ছে

ক্রিজে দাঁড়ানোর আগে ব্যাটসম্যানের ব্যাট পরীক্ষা করছেন মাঠের আম্পায়ার। ছবিটি এবারের আইপিএলেরভিডিও থেকে নেওয়া

টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাট ও বলের লড়াইয়ে ভারসাম্য নেই। এবার আইপিএল শুরুর আগে কথাটা বলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা। এর আগে–পরে বলেছেন আরও অনেকেই। কারণটা প্রায় সবার জানা। টি–টোয়েন্টিতে এখন দলগুলো ২০০ পেরিয়ে ৩০০ রান তোলার চেষ্টায় মত্ত। রাবাদার মতে, এভাবে চলতে থাকলে খেলাটির নাম ‘ক্রিকেট’ পাল্টে ‘ব্যাটিং’ রাখা উচিত।

রাবাদার এ কথা নিশ্চয়ই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কানেও পৌঁছেছে। তাই গত রোববার জয়পুর ও দিল্লিতে আইপিএলের দুটি ম্যাচে দেখা গেছে অন্য রকম এক দৃশ্য। দুটি ম্যাচেই মাঠের আম্পায়াররা ক্রিজে আসা ব্যাটসম্যানদের ব্যাটের আকার পরীক্ষা করেন। আইপিএলের ইতিহাসে এমন কিছু এর আগে দেখা যায়নি। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, আইপিএলে এবারই প্রথমবারের মতো মাঠের আম্পায়ারদের ম্যাচের মধ্যেই ব্যাটের আকার পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে বিসিসিআই।

আরও পড়ুন

ব্যাট নিয়মসিদ্ধ আকার অনুযায়ী বানানো হয়েছে কি না, সেটা একটি মাপার বস্তুর মাধ্যমে মাঠেই পরীক্ষা করেন আম্পায়াররা। অতীতে এ পরীক্ষাগুলো ড্রেসিংরুমে করা হতো। কিন্তু রোববার খেলার সময় মাঠেই তা দেখা গেছে। ব্যাটসম্যানদের ব্যাট যদি নিয়ম অনুযায়ী বানানো হয়, তাহলে এ যন্ত্রের সঙ্গে খাপে খাপে মিলে যাবে কিংবা সহজেই এই মাপের মধ্যে প্রবেশ করবে। আকার বড় হলে প্লাস্টিকের এই ত্রিভুজাকৃতির গেজের মধ্যে ব্যাটটি প্রবেশ করবে না কিংবা বাধাপ্রাপ্ত হবে। গেজের গায়ে ব্যাটের নিয়মসিদ্ধ আকারও লেখা আছে—পুরুত্ব ২.৬৮ ইঞ্চি, চওড়া ৪.৩৩ ইঞ্চি, কানা ১.৬১ ইঞ্চি এবং ব্যাটের উল্টো দিকে থাকা বাঁকানো অংশ হবে ০.২০ ইঞ্চির মধ্যে।

ব্যাটের আকার মাপার গেজ
কেডি স্পোর্ট ওয়েবসাইট

‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ আরও জানিয়েছে, ওপেনাররা মাঠে নামার আগে তাঁদের ব্যাট পরীক্ষা করেন চতুর্থ আম্পায়ার। এর পরের ব্যাটসম্যানদের ব্যাট মাঠে পরীক্ষা করছেন মাঠের আম্পায়ার। কিছু ব্যাটসম্যান আইন লঙ্ঘন করে বড় আকারের ব্যাট নিয়ে নামার পর ব্যাট পরীক্ষার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিসিআই। আইনের আওতার বাইরে বড় আকারের ব্যাট ব্যবহার করলে আইপিএলে মৌখিকভাবে তিরস্কার করেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে গত বছর এমন একটি ঘটনায় পয়েন্ট কাটা হয় নটিংহামশায়ারের।

আরও পড়ুন

আইপিএলের চেয়ারম্যান অরুন ধুমাল এ নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘কেউ অন্যায় সুবিধা পাবে, এটা কারোরই মনে হওয়া উচিত না। খেলায় ন্যায্যতা নিশ্চিতে বিসিসিআই এবং আইপিএল সব সময়ই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। খেলা যেন অন্যায়ভাবে প্রভাবিত না হয়, সে জন্য আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, যেন সব সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করা যায়। এ পদক্ষেপের পেছনে মূল ভাবনাটা হলো খেলার চেতনাকে সমুন্নত রাখা।’

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, আইপিএলে চলতি মৌসুমের আগেও ব্যাট পরীক্ষা করা হয়েছে, তবে সেটা ম্যাচের দিন নয়। ম্যাচের আগের রাতে ব্যাট পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় ফাঁকও রয়েছে। রাতে ব্যাট পরীক্ষা করিয়ে ম্যাচে অন্য ব্যাট নিয়ে নামার ঘটনাও ঘটেছে। আইন লঙ্ঘন করে আকারে বড় ব্যাট ব্যবহার করা এক আন্তর্জাতিক ব্যাটসম্যান সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘তারা ব্যাটের নিচের অংশের ওজন বাড়ান, যেখানে বল লাগানোর চেষ্টা করেন ব্যাটসম্যান। “সুইট স্পট”–এ বেশি কাঠ এবং হাতলের দিকের অংশে কম কাঠে বেশি শক্তি ও স্ট্রোক পাওয়া যায়।’

হার্ড হিটার ব্যাটসম্যানরা ব্যাটের কানার পুরুত্ব বেশি, এমন ব্যাট পছন্দ করেন। এতে অনেক সময় ব্যাটে ঠিকমতো বল না লাগলেও ছক্কা হয়ে যায়। কিন্তু আম্পায়ারা এখন মাঠে ব্যাট পরীক্ষা করায় কেউ জেনেবুঝে আইনের বাইরে বড় আকারের ব্যাট নিয়ে নামবেন বলে মনে হয় না।

আরও পড়ুন

বিসিসিআইয়ের এ সিদ্ধান্তকে ব্যাট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানও স্বাগত জানিয়েছে। বিখ্যাত এসজি ব্যাটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পরশ আনন্দ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘এসজির বানানো প্রতিটি ব্যাটকেই এই মাপার যন্ত্র পাড়ি দিতে হয়। তবে খেলোয়াড়দের ব্যাট যেহেতু আমরা পুরোপুরি পরীক্ষা করতে পারি না, তাই এ বিষয়ে (ব্যাটের আকার) শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি না। তবে পার্থক্যটা এক থেকে দেড় মিলিমিটার, যেটা বড় কিছু না। আইপিএলে সব খেলোয়াড়ের ক্রিকেট ব্যাট পরীক্ষা করার বিষয়টি ভালো, নইলে খেলোয়াড়েরা বড় ব্যাট বানানোর দিকে ঝুঁকতে পারে।’

ব্যাটের আকার দেখতে গেজ নিয়েই মাঠে নামেন আম্পায়াররা
বিসিসিআই

রাজস্থান রয়্যালসের ব্যাটসম্যান নীতীশ রানা জানিয়েছেন, আম্পায়াররা ‘নিজেদের সন্তুষ্টির জন্য ব্যাট পরীক্ষা’ করতে চাইলে ব্যাটসম্যানদের কোনো আপত্তি নেই। রোববার জয়পুরে রাজস্থান রয়্যালস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর মধ্যকার ম্যাচে নীতীশের ব্যাটও পরীক্ষা করেন মাঠের আম্পায়ার। এ নিয়ে নীতীশ বলেছেন, ‘টি–টোয়েন্টিতে এমনিতেই সময় কম। আম্পায়ারদের যদি ব্যাট পরীক্ষার সময় থাকে, তাহলে আমার মনে হয় এটা করাটা তাদের অধিকার, এমনকি আমার ব্যাটও পরীক্ষা করা হয়েছে।’ নীতীশ যোগ করেন, ‘সে ম্যাচে ৬০–৭০ শতাংশ ব্যাটসম্যানের ব্যাট পরীক্ষা করা হয়েছে। এটা ন্যায্যই। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’

দিল্লি ক্যাপিটালসের পেসার মোহিত শর্মার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘এটা খুব ভালো। দয়া করে ব্যাটগুলো পরীক্ষা করুন। অনেক বড় বড় ছক্কা দেখা যাচ্ছে। কোনো ব্যাট আকারে বড় হলে সেগুলো নিষিদ্ধ করুন।’