‘বেশি ভালো খেলে’ যে চ্যালেঞ্জের সামনে বাংলাদেশ

রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্ট জয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টে চ্যালেঞ্জের সামনে বাংলাদেশএএফপি

‘এ’ দলের ম্যাচ উপলক্ষে গতকাল ইসলামাবাদ ক্লাব মাঠে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার রাবীদ ইমাম। আজ যেহেতু সেখানেই জাতীয় দলের অনুশীলন, মাঠটাও একটু দেখা আসা হলো। বাংলাদেশ দল ইসলামাবাদেই থাকায় দূরত্বটা খুব বেশি নয়। তবু যাওয়ার পথে তিনি রীতিমতো বিব্রত। একা মানুষ, অথচ তাঁর জন্যই কি না নিরাপত্তার মহাআয়োজন! যাওয়া-আসার পথে রাস্তাঘাটও মোটামুটি ফাঁকা করে দেওয়ার মতো অবস্থা।

আরও পড়ুন

২০০৯ সালের মার্চে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর হামলার পর ছয় বছরের বেশি সময় পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়নি। ২০১৫ সালে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরার পর থেকেই দেশটিতে বিদেশি দলের সফর মানে নিরাপত্তার ঘেরাটোপ। বাংলাদেশ দলের এবারের সফরও ব্যতিক্রম নয়। অনুশীলন বা ম্যাচের জন্য ইসলামাবাদ থেকে গাড়িতে ১৫–২০ মিনিট দূরের রাওয়ালপিন্ডি যাওয়ার পথে জনমানবের দেখা খুব একটা পাচ্ছেন না ক্রিকেটাররা। মূল সড়ক তো ফাঁকা করে দেওয়া হচ্ছেই, আশপাশের দোকানপাট, বিপণিবিতানের শাটার থাকছে নামানো। বন্ধ থাকছে অলিগলির মুখ।

পাকিস্তানের মাটিতে ঐতিহাসিক এক জয়ই পেয়েছে বাংলাদেশ
এএফপি

বিরতির দিনগুলোতেও হোটেলের বাইরে এক পা দেওয়ার উপায় নেই কারও। পরশু প্রথম টেস্টে ঐতিহাসিক জয়ের পর গতকালের বিশ্রামের দিনটাও হোটেলেই কাটাতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। এ নিয়ে অবশ্য দলের কোনো অভিযোগ নেই। পাকিস্তান সফর মানেই তো অনেক বছর ধরে এ রকম।

এবার তবু একটা ভিন্নতা আছে এবং সেটা প্রথম টেস্টের জয়। টেস্টে তো বটেই, সব সংস্করণ মিলিয়েই এটা পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশ দলের প্রথম জয়! সেই জয় বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গতকাল ইসলামাবাদ থেকে মুঠোফোনে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন বলেন, ‘তিন বিভাগেই আমাদের ছেলেরা অসাধারণ খেলেছে। আমি বলব, প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি ভালো। ব্যাটিং, বোলিং, স্লিপ ক্যাচিং, বাবর আজমের একটা ক্যাচ ফেলা বাদ দিলে উইকেটকিপিং—সবই এককথায় দুর্দান্ত হয়েছে। অনেক দিন পর এত চমৎকার ক্রিকেট দেখলাম।’

আরও পড়ুন

একই মাঠে ৩০ আগস্ট থেকে শুরু দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে যে বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাসে প্রথম টেস্টের পারফরম্যান্স বাড়তি টনিক হবে, তাতে সন্দেহ নেই প্রধান নির্বাচকের। ফর্মে না থাকা ব্যাটসম্যানদের ফর্মে ফেরা, বোলিংয়ে শুরুর সংকট কাটিয়ে পেস-স্পিনে ভারসাম্য ফেরানো, বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে স্পিনারদের উইকেটের সহায়তা কাজে লাগাতে পারা আশাবাদী করে তুলেছে গাজী আশরাফকে। ‘পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসের রানটা কম ছিল না। শুরুতে মনে হয়েছিল ওদের কেউ খারাপ না করলে আমাদের জন্য ম্যাচ জেতা কঠিন হবে। কিন্তু এরপর যেটা হয়েছে, সেটা অনেক বেশি তৃপ্তির। সব বিভাগে এ রকম একসঙ্গে সব সময় আমরা জ্বলে উঠি না’, বলেছেন তিনি।

প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন
প্রথম আলো

প্রথম টেস্টের ভালো পারফরম্যান্স দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও মনে করেন গাজী আশরাফ। এই ভালোটাকে ধরে রেখে আরও ভালো কিছু করার দায়িত্ব। সিরিজ জয়ের জন্য সেটার বিকল্পও দেখছেন না তিনি, ‘এটা ঠিক যে প্রথম টেস্টে হেরে পাকিস্তান মানসিকভাবে কিছুটা পিছিয়ে থাকবে। এখানে ওদের অনেক সমালোচনাও হচ্ছে। আবার একইভাবে পরের টেস্টে তারা ভালোভাবে ঘুরেও দাঁড়াতে চাইবে। বাবর আজম এই টেস্টে কিছু করতে পারেনি। সেই জেদ থেকে পরের টেস্টেও যদি বড় কিছু করে ফেলে, অবাক হব না। বোলিংয়েও নিশ্চয়ই তারা জ্বলে উঠতে চাইবে।’

সব মিলিয়ে পরের টেস্টে বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জটা আরও বড়। বলতে পারেন, আহত বাঘের সঙ্গে লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ। ওদিকে পরশুর ১০ উইকেটের জয়ে নাজমুল হোসেনের দল নিজেদের পারফরম্যান্সকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছে, সেটি ধরে রাখার চ্যালেঞ্জও আছে। গাজী আশরাফই বলে দিয়েছেন আসল কথাটা, ‘আমি বলব, প্রথম টেস্টে আমরা একটু বেশিই ভালো খেলে ফেলেছি। এরকম খেলা কিন্তু সব সময় সহজ হবে না। ছেলেদের এখন সেই কঠিন কাজটাই করে দেখাতে হবে।’

আরও পড়ুন