অনেক বছর পর একসঙ্গে আশরাফ-মাহমুদ
একটি দেশের দুই প্রখর ক্রিকেট–মস্তিষ্ক দুটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো হয়ে থাকলে তাতে সেই দেশের ক্রিকেট উপকৃত হয় না। এমন ক্রিকেট–মস্তিষ্কের যুগল উপস্থিতি তখনই উপকারে আসে, যখন তাঁরা মিলিত স্রোত হয়ে দেশের ক্রিকেটে ইতিবাচকতার প্রবাহ আনতে পারেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেই (বিসিবি) সে রকম দুটি ক্রিকেট–মস্তিষ্ক আছে, ‘ঐতিহাসিক’ কারণেই যাঁরা এত দিন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে ছিলেন। একজন বিসিবি পরিচালক ও গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান খালেদ মাহমুদ। আরেকজন গত ফেব্রুয়ারিতে বিসিবির প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব নেওয়া সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন।
তাঁদের মধ্যে থাকা দূরত্বটার ‘ঐতিহাসিক কারণ’ ২০১৩ সালের বিসিবি নির্বাচন, যে নির্বাচনে গাজী আশরাফ হেরে গিয়েছিলেন মাহমুদের কাছে। বাংলাদেশে যেকোনো নির্বাচনে মুখোমুখি হওয়া মানেই একজন আরেকজনের চিরকালীন ‘প্রতিপক্ষ’ হয়ে ওঠা। এখানেও হয়েছিল সেটাই। ওই নির্বাচনের পর থেকে দুজনের মধ্যে কেবলই সামাজিক একটা সম্পর্ক ছিল, কখনো কখনো মনে হয়েছে তা–ও বুঝি নেই!
সুখবর হলো, সেই অদৃশ্য বিভেদরেখা অতিক্রম করে গতকাল বিকেলে প্রথমবারের মতো তাঁরা দুজন পরস্পরের মুখোমুখি হলেন একান্তে, যেখানে আর কেউ ছিলেন না।
প্রথমে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান জালাল ইউনুসের কক্ষে জাতীয় দল, ‘এ’ দল ও হাই পারফরম্যান্স দলের আসন্ন সিরিজগুলো নিয়ে ক্রিকেট পরিচালনা প্রধানের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ, নির্বাচক আবদুর রাজ্জাক ও গেম ডেভেলপমেন্ট প্রধান খালেদ মাহমুদ। জাতীয় দল ও ‘এ’ দলের পাকিস্তান সফর এবং হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াডের অস্ট্রেলিয়া সফরে কিছু ক্রিকেটার হয়তো একাধিক দলে থাকবেন। আবার কিছু ক্রিকেটারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া, তাঁরা কোন সিরিজে কোন দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন—এসবই ছিল আলোচনার বিষয়। একটি সূত্রে এ–ও জানা গেছে, হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াডের খেলোয়াড়তালিকা মোটামুটি চূড়ান্ত হয়ে গেছে।
তবে আসল দ্বিপক্ষীয় সভাটি হলো এরপর, বিসিবি কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় নির্বাচকদের কক্ষে। যেখানে অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য হাই পারফরম্যান্স দলের কাঠামো এবং দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নিয়ে কথা বলেছেন দুই সাবেক অধিনায়ক।
দুজনের কেউই অবশ্য তাঁদের মধ্যে হওয়া আলোচনা নিয়ে খুব সরব হতে চাননি। গাজী আশরাফ যেমন এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘এটা একটা অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ছিল। সামনে যেহেতু একসঙ্গে অনেকগুলো দল খেলবে, সেসব নিয়েই আমরা কিছু ধারণা বিনিময় করেছি। অনূর্ধ্ব-১৯–এর অনেক ক্রিকেটার হাই পারফরম্যান্সে আসতে পারে, এগুলো নিয়েই কথা হয়েছে।’
প্রায় একই কথার প্রতিধ্বনি মাহমুদের কণ্ঠেও, ‘অনেক দিন পর আমরা একসঙ্গে বসলাম, লিপু ভাই (গাজী আশরাফ) সময় দেওয়ার পরই আসলে বসা হলো। কিছু বিষয়ে আমি আমার মতামত দিয়েছি...কী হওয়া উচিত, কী হওয়া উচিত নয়। তিনিও তাঁর মতামত দিয়েছেন।’
২০১৩ সালের আগে গাজী আশরাফও বিসিবিতে ছিলেন, ক্রিকেট পরিচালনা প্রধানের দায়িত্বসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেছেন। কিন্তু এরপর দেশের ক্রিকেটে তাঁর ভূমিকাটা হয়ে যায় মূলত পর্যবেক্ষকের। মাহমুদ সেই সময়কেই সামনে এনে বললেন, ‘তিনি অনেক বছর পর আবার বোর্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। আমার দিক থেকে আমি তাঁকে বলেছি কোন বিষয়গুলোর দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। তাঁর ক্রিকেটীয় প্রজ্ঞা নিয়ে কারও কোনো সংশয় নেই। আশা করি, তিনি সঠিক পথেই এগোবেন।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ব্যর্থতা দেশের ক্রিকেটের যে ফাঁকফোকরগুলো উম্মুক্ত করে দিয়েছে, অনেক বছর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে থাকা দুই তুখোড় মস্তিষ্কের সেতুবন্ধ সেগুলো কিছুটা ভরাট করলেও করতে পারে।