ধোনির রেকর্ড ভেঙে তাঁকে টুপি খুলে শ্রদ্ধা রাহুলের
খেলাটা চেন্নাই সুপার কিংসের মাঠ এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে হয়নি। ভেন্যু ছিল লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের ‘ঘর’ অটল বিহারি বাজপেয়ী স্টেডিয়াম। কিন্তু সেখানে গতকাল রাতে গ্যালারির একটি বড় অংশের রং ছিল হলুদ—সবাই চেন্নাইয়ের সমর্থক, মহেন্দ্র সিং ধোনি ব্যাটিংয়ে নামার সময় লক্ষ্ণৌর কিছু সমর্থকও যেন দল পাল্টালেন! গগনবিদারী আওয়াজ শোনা গেল গ্যালারি থেকে, ধোনি যখন ব্যাটিংয়ে নামছিলেন।
সে সময় মজাটা নেন লক্ষ্ণৌর ওপেনার কুইন্টন ডি ককের স্ত্রী সাশা। ইনস্টাগ্রামে হাতের স্মার্ট ওয়াচের একটি ছবি স্টোরিতে পোস্ট করেন তিনি। ছবির এক কোণে ক্যাপশনে লেখা, ‘ধোনি যখন ব্যাটিংয়ে নামেন।’ আর স্মার্ট ওয়াচের স্ক্রিনে সতর্কবার্তা হিসেবে লেখা, ‘কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ। শব্দের মাত্রা ৯৫ ডেসিবেলে পৌঁছেছে। ১০ মিনিট এমন পরিস্থিতি থাকলে সেটা ক্ষণস্থায়ীভাবে শ্রবণক্ষমতা হ্রাস করতে যথেষ্ট।’
৪৩ ছুঁই ছুঁই ধোনি এরপর যা করেছেন, তাতে গ্যালারির আওয়াজ বেড়েছে আরও। ৯ বলে ২৮! ২ ছক্কা ও ৩ চারে সাজানো ইনিংসে ভারতীয় ক্রিকেটের ‘থালা’ বুঝিয়ে দিয়েছেন, চল্লিশ পেরিয়েও তিনি চালশে নন। ইনিংসটি খেলার পথে আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫ হাজার রানের মাইলফলকও ছুঁয়ে ফেলেন ধোনি।
কিন্তু ধোনির দল চেন্নাই শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি। লক্ষ্মৌ অধিনায়ক লোকেশ রাহুলের ৫৩ বলে ৮২ রানের ইনিংসে ৮ উইকেটে হেরেছে চেন্নাই। এই পথে ধোনিকে রেকর্ড বইয়ের একটি পাতায় পেছনেও ফেলেছেন রাহুল। আইপিএলের ইতিহাসে উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান হিসেবে সবচেয়ে বেশি পঞ্চাশোর্ধ্ব (৫০+) ইনিংস খেলার রেকর্ডটি এতদিন ধোনির দখলে ছিল। ২৫৭ আইপিএল ম্যাচে ২৪ বার ন্যূনতম ৫০ রানের ইনিংস খেলেছেন ধোনি।
রাহুল গতকালের ৮২ রানের ইনিংসটি দিয়ে ধোনির রেকর্ডটি নিজের করে নিয়েছেন। আইপিএলে উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে এটি ছিল তাঁর ২৫তম পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস।
আইপিএলে এ পর্যন্ত ১২৫ ম্যাচ খেলা রাহুল এই টুর্নামেন্টে উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬৮ ম্যাচ খেলেছেন। উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে ২৩টি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলে এই তালিকায় তৃতীয় দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি কক। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর দিনেশ কার্তিক ২১ পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস নিয়ে চতুর্থ এবং পাঁচে সাবেক ব্যাটসম্যান রবিন উথাপ্পা (১৮)।
ধোনিকে রেকর্ড বইয়ে পেছনে ফেললেও তাঁর প্রতি রাহুলের সম্মানের মাত্রাটা কোথায়, সেটা বোঝা গেছে ম্যাচ শেষে। লক্ষ্ণৌর জয়ের পর মাঠে দুই দলের খেলোয়াড়দের হাত মেলানোর সময় দৃশ্যটা ধরা পড়ে ক্যামেরার ফ্রেমে। চেন্নাই অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের সঙ্গে হাত মেলানোর সময় মাথার টুপিটা খোলেননি রাহুল। কিন্তু ধোনির সঙ্গে হাত মেলানোর আগে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মাথার টুপিটা খুলে ফেলেন।
ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানো সাবেক অধিনায়ক ধোনি ভারতীয় ক্রিকেটে কতটা শ্রদ্ধার পাত্র সেটি কিছুদিন আগে স্টার স্পোর্টসের এক অনুষ্ঠানে ব্যাখ্যা করেন কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার। তাঁকে ‘থালা’ বলে ডাকার কারণটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গাভাস্কার বলেন, ‘বিশ্বের নানা দেশ ও নানা শহর থেকে খেলোয়াড়েরা এই (চেন্নাই) দলে খেলেন। আপনার ওদের সবাইকে আইপিএলের ট্রফি জেতার একমাত্র লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সবাইকে বোঝাতে হবে, ছয় সপ্তাহের মধ্যে আমাদের এই টুর্নামেন্ট জিততে হবে। সেটা করার জন্য আপনাকে অনেক বড় বড় খেলোয়াড়, যাঁরা এই দলে খেলেন, তাদের কাউকে কাউকে কখনো কখনো দলীয় সমন্বয়ের কারণে একাদশের বাইরে রাখতে বাধ্য হবেন। কিন্তু আপনি কখনো তাদের অনুভব করতে দেবেন না যে তারা অকেজো; বরং আপনি তাদের বোঝাবেন যে তারাও দলের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এমএস ধোনির এই সামর্থ্য খুব ভালোভাবেই আছে। এ কারণেই সে সবার কাছে থালা।’
তামিল ভাষার শব্দ ‘থালা’ মানে নেতা। কখনো কখনো ‘বড় ভাই’ বোঝাতেও ‘থালা’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়। তবে এই ‘বড় ভাই’ ব্যাটিংয়ে নামার সময় প্রতিপক্ষ বোলাররা কেমন অনুভব করেন, সেটা মাঠে থেকে বুঝেছেন রাহুল।
ম্যাচ শেষে রাহুল বলেছেন, ধোনির উপস্থিতিতে তাঁর বোলাররা চাপে ভুগেছেন, ‘(চেন্নাইয়ের) ১৬০–১৬৫ রান হলে ঠিক হতো। কিন্তু আবারও ধোনির কারণে হলো না (হাসি)। তিনি নামলে চাপ বাড়ে বোলারদের ওপর। সময় এবং বোলারদের ওপর তার এমনই আধিপত্য। আমাদের দলটা তরুণ এবং আমার মনে হয় এই প্রথম তারা ধোনির মতো ব্যক্তিত্বের মুখোমুখি হওয়ার চাপে পড়ল। দর্শকেরা তো গগণবিদারী আওয়াজ তুলেছেন।’